শেষ অবধি বহুল আলোচিত “প্রিয়তমা”দেখলাম। যেহেতু অতীতে শাকিব খানের কোনো ছবিই আমার দেখা হয়নি। শাকিব ইস্যু সেনসিটিভ এখানে। তাই হানড্রেড পার্সেন্ট কনসেনট্রেশান নিয়ে “প্রিয়তমা” দেখতে বসে গেলাম। শুরুতেই দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল কক্সবাজারের এক ইয়াবা পাচারকারী মাফিয়া ডন শহীদুজ্জামান সেলিমকে। সেলিমের ক্রুয়েল এক্সপ্রেশন আমার মনোযোগ আকর্ষণ করলো। বল্লম ছুঁড়ে প্রাণভয়ে ছুটতে থাকা একব্যক্তিকে হত্যা করলেন। রক্তে রঞ্জিত হল সাগরের কিনারা। ইয়াবা ডন সেলিম সেই পানির ঝাপটা মেরে মুখ ধুলেন। বুঝলাম আরও নৃশংস কিছু অপেক্ষা করছে এই চরিত্রে। শাকিব খানের অ্যান্ট্রি ভালো ছিল। তবে মুখে রুমাল বেঁধে রাখার খাস কারণ উদ্ধার করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। শাকিবের চোখের খেলা ছিল দুর্দান্ত। কারণ এই চোখে কখনো দ্রোহ কখনো অভিমান কখনো প্রেম কখনো ঘৃণা কখনো শোক জড়ো হয়েছিল। তাই তার মুখাবয়বের চাইতে চোখদুটোর দিকে আমার সতর্কতাসুলভ মনোযোগ ছিল। ছবির কাহিনীর লেয়ার দেখে আশ্চর্য হলাম। এমন সস্তা বৈচিত্র্যহীন স্টোরি লাইন শাকিব কেন চুজ করলেন? এটা কোনো কাহিনী হল? কাহিনী ঢিমেতালে এগোচ্ছিলো। এমন বোরিং স্টোরি লাইন কোথায় গিয়ে শেষ হয় ভাবতে ভাবতে অলস ভঙ্গিতে হাই তুলে শুধু গায়ের আড়মোড়া ভাঙছিলাম। আমি বুঝতে পারলাম না শাকিব কেন নিজেকে এতবড় ঝুঁকির মধ্যে ফেললেন? গল্পের কোনো বাউন্সিং ছিলোনা। কয়েকবার তো মনে হচ্ছিলো টেলিফিল্ম দেখছি। দীর্ঘ দেড় ঘন্টা গা খিঁচিয়ে জোর করে গিলতে হল মাজাভাঙ্গা প্রিয়তমা কাহিনী। বার বার রিমেইনিং টাইম চেক করছিলাম- আর কতক্ষণ!! আর কতক্ষণ!! শেষের দিকে চিত্রনাট্যে এলো কুদরতি ইউটার্ন। এই কুদরতি ইউটার্নই বাঁচিয়ে দিল প্রিয়তমাকে। দেড় ঘন্টার ব্যর্থতাকে পুষিয়ে দিলো। সুন্দর ব্যালান্স মেনটেইন করলেন পরিচালক হিমেল আশরাফ। কাহিনীর পরোতে পরোতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ইধিকা পালের মধ্যে বিশেষ কোনো স্বকীয়তা দেখিনি। ইধিকার জায়গায় যদি আমাদের দেশের কোনো নায়িকা হতেন ঠিক এমন অভিনয় করতেন। হয়ত তারচেয়ে ভালো করতেন। ইধিকা পালকে নিয়ে খুব বেশি পাবলিসিটি হয়েছে। হয়ত ওপার বাংলার অভিনেত্রী বলে। গোটা ছবিতে ছিল শাকিবের রাজত্ব। আরেকজনের অভিনয় ভীষণ ভালো লেগেছে -শহিদুজ্জামান সেলিম। তার আঞ্চলিক অ্যাকসেন্টের ডায়লগ ছিল উপভোগ্য। ইধিকা পালের কিছু করার ছিলোনা। তিনি চিত্রনাট্য ফলো করেছেন মাত্র। কখনো কখনো তো মনে হয়েছে ইধিকার অভিনয় না দেখে বরং একচ্ছত্রভাবে শাকিবের অভিনয় দেখি।
তবে শাকিবের অভিনয় দক্ষতা এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। কারণ তার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। মান্না অকালে চলে গিয়েছেন। সালমান শাহ ও মান্নাকে হারানোর চরম ধাক্কা আজো সামলে উঠা যায়নি। শাকিব এসেছেন, সামনে পেয়েছেন খোলা ময়দান এবং সেখানেই একা একা নেট প্র্যাকটিস করছেন। তাই হয়ত দীর্ঘদিন যাবত তার ফিল্মি ক্যারিয়ারে একাধারে তিনি একঘেঁয়ে চরিত্রে রূপদান করে আসছেন। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না পেলে অভিনয় দক্ষতা যাচাই হয়না। ভারতীয় হিন্দি এবং দক্ষিনী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা দেখুন। সেখানে সুপারহিট অভিনেতাদেরকে টপ টু বটম চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হচ্ছে। যতবেশি প্রতিযোগিতা ততবেশি ভালো কাজ ভালো মুভি। শাকিবের এখন বাবরি চুলে মুখে বলিরেখা ফেলে বিরহী প্রেমিক সাজার সুযোগ নেই। তাকে অভিনয়ের দিক দিয়ে ভার্সেটাইল উইন্ডো খুলতে হবে। দর্শক অপেক্ষা করে আছে সেই উইন্ডোর সামনে। শাকিব খান নিজেকে এভাবে রামদার নিচে রাখবেন না। এভাবে সস্তা জাঁকজমকহীন ছবিতে সাইন করতে থাকলে তার তারকা ইমেজ ক্ষতির মুখে পড়বে। শুধু ভাগ্য সহায় হবার কারণে এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন। কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওরার আগে সেটা নিয়ে স্টাডি করা দরকার। তামিল তেলেগু ছবির সুপারস্টাররা চিত্রনাট্য যাচাই-বাছাই করার জন্য নিজস্ব টিম রাখেন। শাকিব সেটা ভবিষ্যতে মাথায় রাখবেন। “ঈশ্বর” গানের গায়ক রিয়াদের গায়কী সত্যিই বুকের পাঁজরে তীর মেরেছে। মিউজিক কম্পোজিশনে প্রিন্স মাহমুদ তার জাত জানান দিলেন বলিষ্ঠভাবে। টাইটেল সং “প্রিয়তমার” মেল পোর্শন স্মুদিং ছিল। কিন্তু কোনালের পোর্শন ছিল কাঁইকুঁই টাইপের। কেমন যেন ইরিটেটিং ছিল। সিনেমাটোগ্রাফি সুন্দর হয়নি। ব্যাকগ্রাউন্ড আরো উন্নত হতে পারতো। চিত্রনাট্যকে নার্সিং করলে একটা মাস্টারপিস মুভি হতে পারতো। গল্পে টাইমিংয়ের অভাব চোখে পড়ার মত ছিল। শাকিবের সিরিয়াস ভঙ্গিতে সিগারেট খাওয়ার স্টাইল ড্যাশিং ছিল। তার রাফ অ্যান্ড টাফ লুক ভালো লেগেছে। আর একটা কথা, অন্য দেশের অভিনেত্রীকে এনে হিউজ অ্যামাউন্ট দিয়ে তাকে “আলগা কদর” করার পঁচা অভ্যাসটা বাদ দিন। আমাদের ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রিতে অনেক ভালো ভালো পোটেনশিয়াল অভিনেত্রী আছেন। তাদেরকে দিয়ে অভিনয় করান। টালিগঞ্জওয়ালারা টাকাপয়সার হিসাব কিতাব আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন। তারা দেশের টাকা দেশেই রাখছেন। বাইরের অভিনেত্রী এনে নিজের দেশের অভিনেত্রীদের আন্ডার এস্টিমেট করবেন না।
লিখেছেন মিলি সুলতানা