ঈদের কেনাকাটায় মনে রাখবেন যেসব বিষয় 

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪
ঈদের কেনাকাটায় মনে রাখবেন যেসব বিষয় 
ঈদের কেনাকাটায় মনে রাখবেন যেসব বিষয় 

 

ঈদের কেনাকাটা নিয়ে অনেক বেশি এক্সাইটম্যান্ট থাকলেও কাজ এবং রোজার কারণে অনেকেই এই বিষয়টাতে এসে হিমশিম খান। যার ফলে দিনশেষে কেনাকাটায় বিভিন্ন ত্রুটি থেকেই যায়। 

 

দেখা যায় এক জিনিস কেনায় ফোকাস করতে গিয়ে অন্য জিনিসের কথা টোটালি ভুলে যাওয়া হয়েছে। ফলে ঈদের আনন্দ পুরোপুরি মাটি না হলেও একটুখানি অতৃপ্তি কাজ করেই। 

 

মনে রাখবেন এমন সমস্যা থেকে বাঁচার একটাই উপায় এবং সেটি হলো ঈদের কেনাকাটার টিপসগুলি মেনে কেনাকাটায় মনোযোগ দেওয়া। চলুন তবে আজ ঈদের কেনাকাটায় যেসব বিষয় মনে রাখবেন সে-সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। 

 

১. তালিকা তৈরি করুন

ঈদের কেনাকাটাকে সহজ করতে ৩ ধরণের লিস্ট বা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করুন। ১ টি তালিকা নিজের জন্যে, আরেকটি তালিকা পরিবারের সদস্যদের জন্যে এবং সবশেষে তালিকাটি তৈরি করুন উপহার লিস্ট হিসাবে। 

 

উপহারের তালিকা করার সময় ব্যাক্তি অনুযায়ী তাদের কি কি জিনিসপত্র লাগবে তা পাশে টুকে রাখতে পারেন। নতুবা শপিং করতে গিয়ে সকল জিনিসপত্র মনে থাকার চান্স খুব একটা পাবেন না। 

 

এই তালিকা তৈরি করার সময় ডিজাইন এবং দাম দেখার জন্যে অনলাইনে ঘরে বসে ঈদের বিভিন্ন ফ্যাশন দেখতে পারেন। যেমন দারাজ, ইভ্যালি বিভিন্ন অনলাইন ফেসবুক শপ পেইজ আপনাকে এ-কাজে যথেষ্ট সাহায্য করবে। 

 

আইডিয়া পেয়ে গেলেই বুঝতে পারবেন কাকে কি উপহার দিতে হবে এবং পরিবারের সদস্যরা কোন ধরণের জিনিসপত্র পেলে খুশি হবে। 

 

২. সময়কে গুরুত্ব দিন 

যেহেতু রোজা রেখে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যায় এবং দিনশেষে পার্ফেক্ট শপিং করা যায় না, সেহেতু রোজার সময় শপিং করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। লজিক্যালি রোজা রাখার সময় আপনার এনার্জি লেভেল কম থাকবে। তাই ইফতারের পর শপিং করার প্ল্যান করতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধের কারণে পরবর্তীতে শপিংয়ের বিভিন্ন খুঁত থেকে যেতে পারে৷ 

 

তবে হ্যাঁ! মনে রাখবেন ইফতারের ঠিক পরে সবসময়ই ভিড় এড়ানোর চেষ্টা করা কঠিন হয়ে থাকে। সুতরাং তারাবির পরে কিংবা দিনের শুরুতে শপিং করার প্ল্যান করতে পারেন। 

 

৩. কাছাকাছি শপিং সেন্টার বেছে নিন

ড্রাইভ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া, গাড়ি ভাড়া দিয়ে শপিং করতে বেশ দূরের শপিং সেন্টারগুলিতে যাওয়া কিংবা অতিরিক্ত ভিড়ের মাঝে নিজের পছন্দের ড্রেসটি কিনতে যাওয়ার বিষয়গুলি রোজার সময় আপনাকে যথেষ্ট প্যারা দেবে। 

 

একে তো রাখবেন রোজা! তার উপর রোজা রেখে এসব ঝামেলার কারণে অনেক পয়েন্টই মিস করে ফেলবেন। সুতরাং এমন সমস্যায় পড়তে না চাইলে শপিং করার জন্যে কাছাকাছি কোনো শপ সেন্টার বেছে নিন। 

 

ভিড় তুলনামূলকভাবে কম এমন কোনো শপিং সেন্টার পেলে কখনোই চান্স মিস করবেন না। এতে করে অর্থ, সময় এবং শ্রম তুলনামূলকভাবে খরচ হবে। 

 

৪. সাথে নিন অভিজ্ঞ কাউকে 

শপিং করতে পছন্দ করে কিংবা শপিং করার সময় জিনিসপত্র বেছে নিতে পারে এমন কাউকে সাথে নিতে পারেন। কারণ আপনি যখন অন্য কারো সাথে কেনাকাটা করবেন তখন পুরো প্রসেসটা সহজ হয়ে যাবে, পছন্দ করতে খুব একটা কষ্ট হবে না, দরদামের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাবে। 

 

সুতরাং পরিবারের কোনো সদস্য বা বন্ধুদের সাথে শপিং করুন। প্রয়োজনে তাদের শপিংয়েও আপনি খানিকটা সাহায্য করুন। 

 

৫. বাজেট রেখে সামনে আগান

মিনিমাম বাজেট না করে কখনোই শপিং সেন্টারে যাওয়া উচিত না। কারণ এতে করে বাড়তি অর্থ খরচ হয়ে যাবার যথেষ্ট চান্স থাকে। সুতরাং বাড়িতে বসেই মিনিমাম বাজেট করে নেবেন। 

 

কেবল কোন ব্যাক্তির জন্যে কত বাজেট রাখতে চাচ্ছেন তা নয়, বরং এর পাশাপাশি প্রতিটি প্রোডাক্টের পেছনে কি পরিমাণ বাজেট রাখছেন তাও টুকে নেবেন। 

 

এতে করে মার্কেটে নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়ে যাবার যে প্রবণতা তা অনেকটাই কমে আসবে। এই অভ্যাস আপনাকে ঈদের কেনাকাটা করার সময় টাকা বাঁচাতেও যথেষ্ট সাহায্য করবে৷ 

 

৬. মেলার সন্ধান পেলে মিস করবেন না

ঈদের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কম প্রাইজে ভালো প্রোডাক্ট পেতে এসব ঈদে মেলা থেকে শপিং করতে পারেন। কারণ এসব মেলাতে যেমন অনেক বেশি প্রোডাক্ট তোলা হয় ঠিক তেমনই বিভিন্ন প্রোডাক্টের উপর যথেষ্ট পরিমাণের ডিসকাউন্ট থাকে। 

 

আর হ্যাঁ! ঈদ মেলার সন্ধান না পেলে অন্তত ঈদ উপলক্ষে ভালো ডিসকাউন্ট দিচ্ছে এমন শপিং সেন্টারে যেতে পারেন। কোন মার্কেটে কেমন ডিসকাউন্ট চলছে তা জানতে তাদের ফেসবুক পেইজে নিয়মিত চোখ রাখতে পারেন। 

 

৭. পণ্য অনুযায়ী দর কষাকষি করুন

ঈদের কেনাকাটায় বাজেটের দিকটা ভালোভাবে চেক করা জরুরি। যেভাবে পারবেন সেভাবে অর্থ বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে পণ্য কেনার সময় দর কষাকষি করার চেষ্টা করবেন। 

 

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি মার্কেটের দোকানদারেরাই লম্বাচওড়া দাম দিয়ে বসে থাকে। সুতরাং প্রোডাক্ট অনুযায়ী এবং কোয়ালিটির দিকটা মাথায় রেখে আপনিও আপনার কাছে মনে হওয়া পার্ফেক্ট প্রাইজটি বলবেন। 

 

মোটকথা খুচরা দোকানে দর কষাকষি করতে কখনো ভয় পাবেন না। তবে ফিক্সড প্রাইজের শপের ব্যাপার আলাদা। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই শুরুতে তাদের বাজেট বলতে যাবেন না। এতে করে তাদের লাভ হিসাব রেখেই আপনাকে যাচ্ছেতাই প্রোডাক্ট ধরিয়ে দিতে চাইবে। 

 

৮. তাড়াহুড়ো করবেন না

যেহেতু প্ল্যান এবং বাজেট দু’টো রেডি করেই শপিং মলে ঢুকেছেন সেহেতু ধীরেসুস্থে শপিং করতে থাকুন। অনেকেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হয় অতিরিক্ত দামে প্রোডাক্ট কিনে ফেলে না হয় কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিতেই ভুলে যায়। 

 

সুতরাং প্ল্যান এবং বাজেট করা শেষ বিধায় ধীরেসুস্থে শপিং করুন। অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি কিংবা জোরে হাঁটাহাঁটি করে নিজেকে ক্লান্ত করা থেকে বিরত রাখুন। 

 

৯. প্রয়োজনে অনলাইন শপিং করুন

সময় এবং শক্তি বাঁচাতে অবশ্যই ঈদের কিছু মার্কেট অনলাইন থেকে সেরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আজকাল এমনকিছু প্রোডাক্ট অনলাইন পাবেন যেসব প্রোডাক্টের দাম অফলাইনের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং কষ্ট কমাতে অনলাইন শপিং করাটাই উত্তম। তবে এক্ষেত্রে: 

  • প্রোডাক্টের রিভিউ চেক করে নেবেন
  • প্রোডাক্টে ছবিতে কোনো খুঁত আছে কিনা দেখে নেবেন
  • সেলারের সাথে প্রোডাক্টের ব্যাপারে আলোচনা করে নেবেন
  • সাইজ এবং প্রাইজের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন
  • ডেলিভারি টাইম কতক্ষণ তা জেনে নেবেন

 

১০. সাহরি এবং ইফতার তৈরি রাখুন 

যেদিন শপিং করতে যাবেন ভাবছেন সেদিনের কষ্ট কমাতে সাহরি বা ইফতার রেডি করে রাখতে পারেন। এতে করে ঘরে গিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। 

 

সাহরি বা ইফতার তৈরি করে নরমাল ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে আশা করি খাবারের মান একই থাকবে এবং খেতেও কোনো সমস্যা হবে না। মনে রাখবেন রমজান একটি ব্যস্ত মাস। এই মাসে শপিং করার প্ল্যানিংয়ে ভুল থাকলে মারাত্মক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। 

 

ঈদের কেনাকাটায় অতিরিক্ত টিপস

উপরোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখলে আশা করি ঈদের কেনাকাটায় কোনো মিসটেক থাকবে না। তবুও বাড়তি টিপস হিসাবে নিচের পয়েন্টগুলি মাথায় রাখতে পারেন: 

  • ঈদ উপলক্ষে কেনা হলেও সারা বছরই পরা যায় এমন পোষাক কিনুন
  • অনেক টাকা দিয়ে ভারী জামাকাপড় কিনবেন না
  • পণ্য কেনার পর অবশ্যই রসিদ নিতে ভুলবেন না 
  • সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী সঠিক শপিং সেন্টার বেছে নিন 
  • রোজায় অন্যান্য দিকের পাশাপাশি কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সংযম বজায় রাখুন
  • আপনার সাধ্যের বাইরে কখনোই বাজেট করবেন না

 

ইতি কথা

ঈদের সময় প্রতিটি মার্কেটেই যেহেতু অনেক চাপ থাকে সেহেতু এসব স্থানগুলিতে পকেটমার ও ডাকাতদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সুতরাং নিজের অর্থ এবং জীবন বাঁচাতে অবশ্যই এই সময় সচেতন থাকতে হবে। 

 

মোবাইল বা কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, অর্থ এবং কেনা প্রোডাক্টগুলি নিরাপদ সামলে রাখুন। এবারে ঈদের শপিং এবং ঈদ দু’টো ভালো কাটুক। এমনটা আশা রেখে আজকের আর্টিকেলে ইতি টানছি। ভালো থাকুন। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ