বাংলাদেশ থেকে ডিপ্লোমা করার পর বিদেশে চাকরি পেতে হলে দরকার সঠিক পরিকল্পনা, ভালো স্কিল ডেভলপমেন্ট এবং বিভিন্ন দেশের চাকরির বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা। চলুন তবে আজ ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি কিভাবে পাবেন এবং বেতন কত হতে পারে সে-সম্পর্কে আলোচনা করি৷ জেনে নিই বিস্তারিত তথ্য।
ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি বাছাই করার ক্ষেত্রে শুরুতে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার স্কিলের সাথে কোন দেশের চাকরির সুবিধা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশী ডিপ্লোমা স্টুডেন্টদের জন্য মূলত যেসব দেশে ভালো সুযোগ রয়েছে সেসব দেশ হলো:
মনে রাখবেন ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে প্রতিটি দেশের জন্য চাকরির আবেদনের নিয়ম কিন্তু আলাদা। HVAC, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল কাজের চাহিদা যেমন মধ্যপ্রাচ্যে বেশি ঠিক তেমনই টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি জাপানে। কিন্তু জাপানে যেতে চাইলে আবার থাকতে হবে জাপানিজ ভাষার উপর স্কিল। কারণ জাপানে ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কেয়ারগিভিং কাজের জন্য জাপানি ভাষার দক্ষতা জরুরি। এভাবে ছোট-বড় সব নিয়মকানুন জেনে রাখা জরুরি।
ভালো স্কিল এবং সার্টিফিকেট ছাড়া কিন্তু ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পাওয়াটা অসম্ভব। এক্ষেত্রে যেসব স্কিল এবং সার্টিফিকেট না থাকলেই নয়:
টেকনিক্যাল: টেকনিক্যাল স্কিলের অংশ হিসাবে আপনাকে CAD, IT নেটওয়ার্কিং বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি সংক্রান্ত ছোট কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।
ভাষা: ভাষার উপর স্কিল হিসাবে জার্মানি বা জাপানে কাজ করতে হলে B1 বা B2 লেভেল পর্যন্ত সেই লোকাল ভাষার উপর দক্ষ হতে হবে। অনেকসময় এসব ক্ষেত্রে IELTS বা TOEFL এর মতো সার্টিফিকেশনও প্রয়োজন পড়ে।
সার্টিফিকেট: সবশেষে সার্টিফিকেট হিসাবে থাকতে হবে OSHA for Safety, CISCO for Networking এর মতো ভ্যালু দেয় এমনকিছু সার্টিফিকেট। এসব সার্টিফিকেট কিন্তু ইন্টারন্যাশনালি এপ্রুভড!
ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পেতে আপনাকে কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। আবারও বলছি এই টাকার পরিমাণ কিন্তু একেবারেই কম। মূলত সার্টিফিকেট কালেক্ট করতে আপনাকে এই টাকা খরচ করতে হবে। বিশেষ করে:
ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পেতে স্কিল ডেভলপমেন্ট করা জরুরি। স্কির ছাড়া কখনোই এসব সেক্টরে আপনি জব পাবেন না। তবে যদি স্কিল ডেভলপমেন্ট শুরু করেন এবং ৬/৭ মাস ধরে কাজ শিখছেন বলে নিজের উপর কনফিডেন্স থাকে সেক্ষেত্রে আবেদন করার ব্যাপারে টুকটাক কাজ শুরু করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় কাজে লাগাতে পারেন:
১. Indeed, Glassdoor, বা LinkedIn এর মতো ওয়েবসাইটগুলোতে নিয়মিত সময় দিন। তারা কি কি কোয়ালিফিকেশন চাচ্ছে তা খেয়াল করুন।
২. অনেক এজেন্সি বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে। আপনি চাইলে এসব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিতে খোঁজ নিতে পারেন। তবে এসব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির আন্ডারে আবেদন করার আগে এজেন্সির ব্যাপারে ভালোমতো রিসার্চ করে নেবেন।
৩. অনেক বিদেশি নিয়োগকর্তা দক্ষ কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা স্পন্সর করে থাকে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এই সুযোগ। এক্ষেত্রে বাইরের বড় বড় কোম্পানিগুলির মিডিয়াতে নিয়মিত আপডেট থাকতে পারেন।
এবার আসি ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পেতে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস এর ব্যাপারে৷ ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পেতে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস কিন্তু সব দেশে এক না। যেমন:
১. মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে বেশিরভাগ সময়ই আপনি যে কোম্পানি থেকে জব অফার পাবেন তারাই আপনার ভিসার ব্যবস্থা করে দেবে।
২. ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানির মতো দেশগুলো মূলত “Skilled Workers Immigration Act” এর আন্ডারে আপনাকে জব সিকিং ভিসা বা সরাসরি ওয়ার্ক ভিসা পাবার সুযোগ করে দেবে।
৩. অন্যদিকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন জাপানে আপনাকে নির্দিষ্ট সেক্টরের উপর “Specified Skilled Worker” (SSW) ভিসার আন্ডারে ভিসা দেওয়া হবে।
ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি পেতে যে টাকা লাগে সে টাকাকে ভিসা খরচ হিসাবে ধরা যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে:
দেশ, চাকরির ধরণ, এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে কিন্তু এই বেতন ভিন্ন হতে পারে৷ তবে আপনাদের সুবিধার্থে নিচে কিছু সাধারণ সেক্টরের মাসিক বেতনের আনুমানিক ধারণা দেওয়া হলো:
মধ্যপ্রাচ্য: এখানে টেকনিশিয়ান (মেকানিক্যাল/ইলেকট্রিক্যাল) এর বেতন মাসে ৬০,০০০ – ১২০,০০০ টাকা হতে পারে। যারা নির্মাণ কর্মী হিসাবে কাজ করবেন তাদের মাসিক বেতন হতে পারে ৪০,০০০ – ৮০,০০০ টাকা। আর HVAC স্পেশালিস্টদের বেতন একটু বাড়তি। এক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণ ৭০,০০০ – ১,৪০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
ইউরোপ: ইউরোপে যারা ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল/ইলেকট্রিক্যাল/সিভিল) হিসাবে কাজ করবেন তাদের মাসিক বেতন হতে পারে ১,৫০,০০০ – ২,৫০,০০০ টাকার মতো। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেক্টরে কাজ করলে মাসে আসতে পারে ১,২০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা। যারা IT সেক্টরে কাজ করবে তাদের আবার বাড়তি ইনকামের সুযোগ আছে যেমন ধরুন ১,৮০,০০০ – ৩,০০,০০০ টাকা।
পূর্ব এশিয়া: এদিকে এশিয়াতে একজন ম্যানুফ্যাকচারিং কর্মীর পড়ে মাসে ৮০,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকার মতো। অন্যদিকে একজন কেয়ারগিভার আয় করেন মাসে ১,০০,০০০ – ১,৮০,০০০ টাকা।
আশা করি ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে চাকরি কিভাবে পাবেন এবং বেতন কত হতে পারে সে-সম্পর্কে একটি রাফ আইডিয়া দিতে পেরেছি। বিদেশে চাকরি করতে গেলে কিন্তু আবার থাকা-খাওয়ার খরচও লাগে। এক্ষেত্রে ২০-৫০ হাজার টাকা দেশ অনুযায়ী বাজেট করলে চলে যাবে। মনে রাখবেন এসব ক্ষেত্রে প্রথমে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে অনেক বেশি বেতনের চাকরি পেলে সেই খরচ সহজেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।