অনেক সময় আমাদের বুকে খাবার আটকে যায়। বুঝতে পারি না কি করা উচিত। এমন সময় পরিস্থিতি অনেকটাই ভয়ংকর হতে পারে। এই ধরণের জটিৱতা রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই সাবধান। সময় থাকতেই বুকে খাবার আটকে গেলে করনীয় কি সে-সম্পর্কে জানুন এবং সচেতন থাকুন।
সাধারণত খাবার বুকে আটকে গেলে তা বোঝা যায়। কিন্তু অনেক সময় খাবার খাওয়ার অনেকক্ষণ পর বুকে ব্যাথা করলে বা বুকে কিছু জমাট বেঁধেছে মনে হলে বোঝা যায় না আসলেই কি বুকে খাবার আটকেছে! এমন পরিস্থিতিতে জেনে রাখা দরকার কখন বুঝবেন খাবার বুকে আটকে গেছে:
খাদ্যনালীর খিঁচুনি হলে অনেক সময় বুকে খাবার আটকে যায়। এই পরিস্থিতিতে মূলত খাদ্যনালীতে থাকা পেশীগুলি সংকোচিত হয়ে যায়। আর এই সমস্যা বুকে তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। হুট করে কোক বা কোনো ড্রিংকস খেলে, ঝাল জাতীয় খাবার খেলেই শুরু হয় বুকে ব্যাথা।
গ্যাস্ট্রিক হলে বুকে ব্যাথার পাশাপাশি বুকে খাবার আটকে যাবার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে জমে গেলে সাধারণত এই সমস্যা হয়। আর এই অবস্থায় আপনার বুকে ব্যাথা দ্বিগুণ আকারে বেড়ে যেতে পারে।
হিয়াটাল হার্নিয়াও বেশ কমন একটি রোগের নাম। এই রোগ হলে দেখবেন আপনার যেকোনো খাবার গিলতে খুব সমস্যা হচ্ছে। খাবার গিলতে গিয়ে বুঝবেন খাবার বুকেই আটকে গেছে, আর নামছে না।
হুট করে যদি কখনো বুকে খাবার আটকে যায় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া টিপস হিসাবে নিচের টিপসগুলি ফলো করতে পারেন:
বুকে খাবার আটকে গেলে করনীয় হিসাবে একবারে শান্ত হয়ে সোজা হয়ে বসে থাকুন৷ এতে করে আপনার বডির অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অবস্থা খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না এবং আপনার খাদ্যনালীতে চাপ কমে যাবে।
হালকা কুসুম গরম পানি ঢকঢক করে না গিলে চুমুকে চুমুকে পান করুন। আর তা যদি ভালো না লাগে সেক্ষেত্রে নন-ক্যাফিনযুক্ত ভেষজ চা পান করতে পারেন। ইউটিউবে সার্চ দিলে এর উপর অনেক রেসিপি পেয়ে যাবেন।
বুকে খাবার আটকে গেলে আমরা আরো ভাবি আরো খেয়ে পানি খেলে হয়তো খাবারটা কিছুটা সরে নিচে নামবে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। এমনটা করবেন না। ব্যথা কম না হওয়া পর্যন্ত আরকিছুই না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার খাদ্যনালীর যেসব পেশী সংকুচিত হয়ে এসেছে তা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। পাশাপাশি বুকে খাবার আটকে যাবার কারণে হুট করেই আপনি প্যানিকড হয়ে গেছেন তা কমে আসবে।
অ্যান্টাসিড হলো গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট। চিকিৎসকদের মতে এই মেডিসিনও মাঝেমধ্যে বুকে আটকে যাবার খাবার সরিয়ে আনে। সুতরাং এটি সেবন করে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারেন।
উপরোক্ত বুকে খাবার আটকে গেলে করনীয়গুলি ফলো করেও যদি আপনি কোনো সমাধান না পান তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আসুন এক নজরে দেখে নিই এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কোন মুহুর্তে বুঝে নিতে হবে আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা জরুরি:
১. যদি প্রচুর পরিমাণে বুকে ব্যাথা হতে থাকে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে বুকে এক ধরণের চাপ অনুভত হলে সতর্ক হতে হবে।
২. যদি আপনি শ্বাস নিতে হয় বাঁধাপ্রাপ্ত হোন কিংবা কিছুই গিলতে না পারেন তখনও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি। এ-সময় ঠোঁট বা মুখে একটি নীল রঙ দেখা দিতে পারে।
৩. বুকের ব্যথার সাথে যদি ঘাড় বা চোয়ালে প্রচুর ঘাম লক্ষ্য করেন, মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব দেখা দেয় তখন বুঝতে হবে আপনি হার্ট এট্যাকের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। আর এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।
আশা করি বুকে খাবার আটকে গেলে করনীয়গুলি ফলো করলেই আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবুও যদি সমস্যা জটিল হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আস্তে আস্তে খাবার খাওয়া, ভালোভাবে চিবানো, সাইট্রাস, চকোলেট, ক্যাফেইন এবং চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার ইগনোর করা জরুরি। নিজের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।