প্রতিবছর ১০ জিলহজ এলেই ফ্রিজ ফুল হয়ে যায়। ছুরি-চাকু শান দেওয়া হয়। আর অনলাইনে ইচ্ছেমতো কুরবানি নিয়ে পোস্ট করা হয়। আমরা কি কেবল গরু কেটেই ঈদের তৃপ্তি পাই, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর একটি ধর্মীয় শিক্ষা?
আজ সেই প্রশ্ন নিয়েই আমরা আলোচনা করবো৷ জানার চেষ্টা করবো কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য, কুরবানির সময় দোয়া ও নিয়ত, কুরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং কুরবানির পর মাংস বণ্টনের নিয়ম।
কুরবানি করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমরা জেনে নিবো কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য। কুরবানির ইতিহাস শুরু হয় হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-এর কাহিনী থেকে।
মূলত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদেশ পান তাঁর প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দিতে। আর এতে তিনি বিনা দ্বিধায় প্রস্তুত হতে শুরু করেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর এই নিষ্ঠা দেখে ইসমাইল (আ.)কে কুরবানি দেওয়ার সময় তার বদলে জান্নাতি একটি দুম্বা পাঠিয়ে দেন।
আর আল্লাহ পাকের এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটিই প্রমাণ করে: আল্লাহ বান্দার তাকওয়া দেখেন, গোশত বা রক্ত নয়! (সূরা হজ্জ: ৩৭)
ইসলাম অনুযায়ী কুরবানির কিন্তু নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব উদ্দেশ্য। অনেকেই মনে করেন কুরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো মাংস খাওয়া বা গরু দান করা। কিন্তু আসলে কুরবানির মূল লক্ষ্য হলো:
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রায় ১ কোটির বেশি পশু কুরবানি হয়েছে! কিন্তু এর মধ্যে কতজন যে ইসলাম অনুযায়ী কুরবানির উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।
কুরবানি করার সঠিক নিয়ম জেনে কুরবানি করা ফরজ। যারা কুরবানি দিতে চান, তাদের জন্য ইসলাম কিছু স্পষ্ট নিয়ম দিয়েছে। এগুলি হলো:
১. আর্থিক সামর্থ্য: যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থ্যাৎ প্রায় ৫২.৫ তোলা রুপার সমমূল্য সম্পদ আছে, তার ওপর কুরবানি ফরজ।
২. পশু নির্বাচন: যারা গরু দিয়ে কুরবানি করবেন তাদের সেই গরু হতে হবে ২ বছরের বেশি বয়সী। ছাগল/ভেড়ার বয়স হতে হবে ১ বছরের বেশি। আর পশু নির্বাচন করতে হবে খুঁতপূর্ণ। বিশেষ তরে এক চোখ অন্ধ, খোঁড়া, রোগাক্রান্ত পশু সবসমই কুরবানির জন্য অযোগ্য বলে ধরে নিতে হবে।
৩. সময়: কুরবানির সময় ঈদের নামাজের পর শুরু হয় কুরবানি দেওয়া। এবং এই সুযোগ কুরবানির তিন দিন পর্যন্ত অথ্যার্ৎ ১০-১২ জিলহজ পর্যন্ত বৈধ।
কুরবানি করার সঠিক নিয়ম তো জানলেন। এবার আসি কুরবানির সময় দোয়া ও নিয়তের ব্যাপারে। কুরবানির নিয়ত হলো আল্লাহর নামে কুরবানি করছি, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য। আর দোয়া হলো
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”। যেটা পশু জবাই করার সময় পড়তে হয়। আপনি চাইলে এরপর এই দুআটি বলতে পারেন: “اللهم تقبل مني كما تقبلت من إبراهيم وإسماعيل عليهما السلام”
বলে রাখা ভালো, অনেকে এত তাড়াহুড়ো করেন যে গরু নামানোর আগে দোয়া পড়ে ফেলেন! আবার কেউ কেউ দোয়া মুখস্থ না থাকায় ইউটিউব চালিয়ে গরুর সামনে দাঁড়িয়ে যান। যা কখনোই করা যাবে না।
কুরবানির পর মাংস বণ্টনের নিয়ম না জেনে কুরবানি বণ্ঠন করাটা মোটেও উচিত নয়। ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করতে বলা হয়েছে। এগুলি হলো নিজের পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব এবং গরিব ও মিসকিন। মনে রাখবেন, গরুর হাটে ৯০,০০০ টাকা খরচ করে কুরবানি দিলেন। কিন্তু গরিব আত্মীয়কে এক কেজিও দেননি! এমনটা করা যাবে না।
এই ছিলো কুরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং ইসলাম অনুযায়ী কুরবানির উদ্দেশ্য। পশু কেনার পর ২০টা ছবি, ভিডিও, ড্রোন শট করতে করতে যেনো আসল নিয়মই ভুলে না যান সেদিকে সতর্ক থাকবেন। শুধু কোরবানি নয়। আত্মা দানের উৎসব হোক ঈদুল আজহা! ইনশাআল্লাহ।