আপনি কি জানেন? প্রতি বছর হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র কয়েকটি সাধারণ ভুলের কারণে স্কলারশিপের সুযোগ হাতছাড়া করেন! আপনি যেন সেই তালিকায় না পড়েন, সে কথা চিন্তা করেই আজ আমি স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় কোন কোন ভুলগুলি করা যাবে না তা নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছি। আশা করি কাজে দেবে।
অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপের নাম শুনেই আবেদন করতে শুরু করে। কিন্তু আসলেই তারা সেই স্কলারশিপের যোগ্য কিনা, তা নিয়ে একবারও ভাবে না।
মনে রাখবেন অনেক স্কলারশিপ কিন্তু নির্দিষ্ট দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত থাকে। আবার কিছু কিছু স্কলারশিপের জন্য নির্দিষ্ট জিপিএ বা পরীক্ষার স্কোর দরকার হয়। শুধু তাই না! এমন কিছু স্কলারশিপ থাকে যেসব শুধু নির্দিষ্ট সাবজেক্টের জন্যই বরাদ্দ থাকে।
সুতরাং স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার আগে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত শর্ত পড়ে নেবেন। যোগ্যতার তালিকা চেক করে দেখবেন। দেশ, জিপিএ, সাবজেক্ট, বয়স ইত্যাদি মিলিয়ে দেখবেন আপনার সাথে যায় কিনা। নিজেকে উপযুক্ত মনে না হলে আবেদন করে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় অনেকে ভুল তথ্য দেন বা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিয়ে দেন। যার কারণে পরে আপনি আবেদনও নাকোচ করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে তাড়াহুড়ো করে ফর্ম পূরণ করলে, ডকুমেন্ট স্ক্যান করার সময় অস্পষ্ট ছবি আপলোড করলে ভুল ইংরেজি ব্যবহার করলে এমনটা হয়।
এক্ষেত্রে এই ভুল থেকে বাঁচতে একাধিকবার আবেদন ফর্ম চেক করে নিবেন। সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্পষ্ট ও সঠিকভাবে আপলোড করবেন। মনে রাখবেন ভুল তথ্য প্রদান করলে স্কলারশিপ কিন্তু বাতিল হতে পারে।
আপনার SOP বা মোটিভেশন লেটার আপনার আবেদনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। কিন্তু অনেকেই স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় এটাকে গুরুত্ব দেয় না বা কপি-পেস্ট করে জমা দিয়ে দেয়।
এই ভুল না করে নিজের সোপ নিজেকে বানাতে হবে।
আপনার ব্যক্তিগত গল্প ও লক্ষ্য সোপে তুলে ধরতে হবে। দরকার হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। একজন শিক্ষক বা সিনিয়রকে আপনার লেখা চেক করিয়ে নেবেন।
অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন যে রেকমেন্ডেশন লেটার কেবল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু আসলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় যারা কাকে দিয়ে রেকমেন্ডেশন লিখতে হবে, তা বুঝতে পারেন না, শুধু সাধারণ কিছু বাক্য লিখিয়ে পেপার্স ভরে ফেলেন এবং শেষ মুহূর্তে রেকমেন্ডেশন চান তাদের স্কলারশিপ এপ্রুভ হবার চান্স অনেক কম থাকে।
তাই সময় হাতে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সুপারভাইজারের কাছ থেকে লেটার নিন। একজন শিক্ষকের পরিবর্তে দুই বা তিনজনের কাছ থেকে লেটার নেওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষণ ও বিশদ বর্ণনা সহ ভালোভাবে লেখা লেটার কালেক্ট করে নিন পারলে।
অনেক শিক্ষার্থী শেষ মুহূর্তে আবেদন করতে গিয়ে ভুল করে ফেলে বা ডেডলাইন মিস করে। স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় এই কাজটা কখনোই করা যাবে না। স্কলারশিপ ডেডলাইন ঠিকমতো না জানা থাকলে বা শেষ মুহূর্তে ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়লে এমনটা হয়ে থাকে।
তাই ঝুঁকি এড়াতে আবেদনের সময়সীমা ১-২ মাস আগেই চেক করে নেবেন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকে রেডি করে রাখবেন। সবশেষে বলবো প্রত্যেক স্কলারশিপের জন্য আলাদা আলাদা প্ল্যানিংয়ের ব্যবস্থা রাখবেন।
আপনার ইমেইল বা ফোন নম্বর ভুল দিলে স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ কিন্তু কখনোই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। ফলে আপনার আবেদন বাতিলও হয়ে যেতে পারে। স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার সময় অনেকেই পুরাতন বা অকার্যকর ইমেইল ব্যবহার করে, আবার অনেকে ভুল ফোন নম্বর ব্যবহার করে তো ইমেইল চেক করে না।
যা সবচেয়ে ভুল ডিসিশন। সুতরাং অন্তত স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আপনার প্রধান ইমেইল আইডি ব্যবহার করবেন। স্কলারশিপ আবেদন করার পর নিয়মিত ইমেইল করবেন। আর সবসময় মেইল ফোল্ডার (স্প্যাম/প্রোমোশন) চেক করতে ভুলবেন না।
স্কলারশিপ এর জন্য আবেদনের জন্য যারা IELTS, TOEFL বা GRE স্কোরকে গুরুত্ব দেন না তাদের চান্স মিস হয়ে যায়। পরীক্ষা ছাড়াই স্কলারশিপ পাওয়া যাবে ভেবে কখনোই ভুল করবেন না।
এক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেবার চেষ্টা করুন আর আগেভাগে পরীক্ষা দিয়ে রাখুন, যাতে স্কোর পেতে, জাজ করতে দেরি না হয়।
শেষ কথা হিসাবে বলবো, স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই যোগ্যতা যাচাই করে নেবেন, সব তথ্য সঠিকভাবে দেবেন, ভালো SOP ও রেকমেন্ডেশন লেটার কালেক্ট করে নেবেন, ডেডলাইনের আগে আবেদন করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো সময়মতো দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বেস্ট অফ লাক।