ল্যাপটপ বা কম্পিউটার চালাতে গিয়ে জীবনে আমরা একবার হলেও উইন্ডোজের নাম শুনেছি। কিন্তু আমরা কি জানি এই উইন্ডোজ কি? কি কি কাজে লাগে এই উইন্ডোজ?
মূলত উইন্ডোজ হলো একটি গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেম। ডেস্কটপ কম্পিউটারে এবং ল্যাপটপে বিভিন্ন সুবিধা উপভোগের কথা মাথায় রেখে সাধারণত এই উইন্ডোজ ব্যবহার করা হয়।
আরেকটু সোজাভাবে বললে কোনো কম্পিউটার বা মোবাইল পরিচালনা করার পদ্ধতিকে এই উইন্ডোজ বলা হয়। কোনো ডিভাইসের উইন্ডোজ সিস্টেম যত বেশি ভালো হবে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারটি চালিয়ে তত বেশি সুবিধা ভোগ করা যাবে। আর এসব সিস্টেম তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কোড।
মূলত উইন্ডোজ একটি অপারেটিং সিস্টেম (OS) একটি পারসোনাল ডিজিটাল প্রোডাক্ট। যে এটি তার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইনস্টল করে নেবে সে এটির সুবিধা পারসোনাল উপভোগ করতে পারবে।
তাছাড়া উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম একটি বহুমুখী প্রোডাক্ট। যার কাজ বহুমুখী। যার কাজ পার্সোনাল কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ট্যাবলেট এবং সার্ভার পর্যন্ত সকল কম্পিউটিং সিস্টেম পরিচালনা করা।
মনে রাখবেন আপনি যে উইন্ডোজটি কম্পিউটারে ইনস্টল করবেন সেটিতে থাকবে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস, একাধিক অ্যাপ্লিকেশন একসাথে চালানোর অনুমতি দিতে মাল্টি টাস্কিং সিস্টেম, মাল্টি-ইউজার ক্যাপাবিলিটি, ভালো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, এনক্রিপশন এবং Windows Defender অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামসহ অন্যান্য দরকারি সিস্টেম।
এবার আসি Windows এর কাজ কি সে ব্যাপারে। মূলত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম একটি কম্পিউটারের সকল সিস্টেম ঠিক মতো চলছে কিনা সেটি নিশ্চিত করে থাকে। এতে রয়েছে:
হার্ডওয়ার ম্যানেজম্যান্ট: যেকোনো উইন্ডোজ হার্ডওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন CPU, মেমরি, স্টোরেজ ডিভাইস এবং পেরিফেরাল (যেমন, প্রিন্টার, স্ক্যানার) ইত্যাদি ঠিকমতো পরিচালনা করে থাকে। ইনপুট এবং আউটপুট কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি উইন্ডোজ হার্ডওয়্যারের সকল অ্যাপ্লিকেশনদের ঠিকমতো পরিচালিত হতে সাহায্য করে।
ফাইল সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট: উইন্ডোজ একটি ফাইল সিস্টেম বিশেষ করে NTFS সিস্টেম ব্যবহার করে স্টোরেজ ডিভাইসে প্রয়োজনীয় ডেটা সংরক্ষণ করে এবং তা সঠিকভাবে পরিচালনা করে। ফাইল ডিলিট করতে, তৈরি করতে কিংবা কপি করতে হলে ব্যবহারকারীদের এই সিস্টেমের সাহায্য নিতেই হয়।
ইউজার ইন্টারফেস: উইন্ডোজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ডিভাইসে একটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের ব্যবস্থা করা। যার সাহায্যে ইউজার কম্পিউটারের সাথে ভালোভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারবে। বিশেষ করে উইন্ডোজের এই সিস্টেমটি ইউজারদের কম্পিউটারে স্টার্ট মেনু, টাস্কবার, ডেস্কটপ ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
নেটওয়ার্কিং পাওয়ার: উইন্ডোজের কিন্তু নেটওয়ার্কিং পাওয়ারও থাকে। যা কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে লোকাল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করতে সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে উইন্ডোজ সাহায্য নেয় বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং প্রোটোকলের। যেমন TCP/IP, DNS, DHCP, ফাইল এবং প্রিন্টার শেয়ারিংসহ অন্যান্য নেটওয়ার্কিং প্রটোকল।
সিকিউরিটি: বিভিন্ন ভাইরাস থেকে ডিভাইসকে রক্ষা করতে সাহায্য করে উইন্ডোজ। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ (UAC), Windows Defender, BitLocker এনক্রিপশন, এবং Microsoft থেকে নিয়মিত সিকিউরিটি সিস্টেম আপডেট করে থাকে উইন্ডোজ।
আপনি কি জানেন উইন্ডোজেরও প্রকাভেদ রয়েছে? চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে উইন্ডোজ ১০ সেটআপ দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে জেনে নিই উইন্ডোজ কত প্রকার ও কি কি সে-সম্পর্কে:
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ: এই ধরণের উইন্ডোজ সাধারণ মাইক্রোসফট কোম্পানি দ্বারা ডেভলপ করা হয়। এসব উইন্ডোজের আবার বিভিন্ন সংস্করণও রয়েছে। যেমন:
গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস উইন্ডোজ: একটি ডিভাইসের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস অনুযায়ীও কিন্তু উইন্ডোজ ভাগ করা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত মেনু, টুলবার এবং অন্যান্য সিস্টেম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয় অ্যাপ্লিকেশান উইন্ডোজ। অন্যদিকে সেটিংস ডায়ালগ ব্যবহার করতে লাগে ডায়ালগ উইন্ডোজ।
উপরোক্ত উইন্ডোজগুলি হলো একটি ডিভাইসের বা কম্পিউটারের প্রাইমারি উইন্ডোজ। এসব ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরণের উইন্ডোজ রয়েছে। একেক উইন্ডোজের কাজ একেকরকম। কিছু উইন্ডোজ ডিভাইসের সাথে আগে থেকেই সেট করা থাকে। আবার কিছু উইন্ডোজ ইনস্টল করে নিতে হয়।
উইন্ডোজ ১০ হলো বর্তমানে সবচেয়ে আপডেটেড একটি উইন্ডোজ। উইন্ডোজ ১০ সেটআপ দেয়ার নিয়ম হলো:
ইনস্টল: শুরুতে আপনার ডিভাইসে উইন্ডোজ ১০ ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টলেশন মিডিয়া থেকে বুট করতে হবে এই উইন্ডোজটিকে। এরপর ভাষা, সময় এবং কীবোর্ড সেট করে “next” অপশনে ক্লিক করে “install now” অপশনে ক্লিক করবেন। পরে আপনাকে যে লাইসেন্সের শর্তাবলী দেবে সেগুলি পরে ওকে করবেন। এরপর ইনস্টল টাইপ হিসাবে চুজ করবেন “কাস্টম” অপশন। সবশেষে ইনস্টল শুরু হলে আপনার পিসি বেশ কয়েকবার রিস্টার্ট হতে পারে।
প্রাইমারি সেটআপ: এবার প্রাইমারি সেট আপের পালা। ইনস্টলেশনের পরে, আপনাকে আপনার কীবোর্ড লেআউট নির্বাচন করতে বলা হবে। এক্ষেত্রে কাজটি করতে পিসিকে Wi-Fi নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ করতে হবে অর্থ্যাৎ নেট লাগবে। অন্যদিকে একাউন্ট সেট আপ করতে Microsoft অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করুন। যারা Microsoft অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চান না তারা যেকোনো লোকাল একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন। এরপর একটি পিন সেট করুন। ডায়াগনস্টিকস এবং ডেটা কালেকশনের সেটিং ঠিক করুন।
পার্সোনালাইজড এবং কনফিগারেশন: আপনার ডেস্কটপের বাইরে থেকে দেখতে কেমন হবে তা কাস্টমাইজ করতে একটি থিম, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং রং বেছে নিন। Settings > Update & Security > Windows Update অপশন ক্লিক করে আপডেট করে নিন। আপনার হার্ডওয়্যারের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাইভার ইনস্টল করে নিন বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে।
সিকিউরিটি এবং ব্যাকআপ: পিসিতে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার চালু করুন। সেই সাথে আপনার সিস্টেমকে ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করতে পিসিতে ফায়ারওয়াল সেটিংস কনফিগার করুন। পাশাপাশি ব্যাকআপ সেটিংসও কনফিগার করে নিন। সবশেষে পুরো প্রসেসে কোনো ভুল হলে তা ঠিক করতে সিস্টেম রিস্টোর পয়েন্ট অপশন ব্যবহার করুন।