রামাদানের রোজা খুবই স্পেশাল নেক আমল। এটি অতুলনীয়। চলুন, রামাদানের রোজার ১১টি বিশেষ ফজিলত ও লাভ সম্পর্কে জানি।
(১) রোজার সমমানের কোনো আমল নেই।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কোন ইবাদত সর্বোত্তম?’ উত্তরে নবিজি বলেন, ‘‘তোমার উচিত রোজা রাখা, কেননা এর সমমানের কিছু নেই।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ২২২২; হাদিসটি সহিহ]
(২) রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ধৈর্যের (রামাদান) মাসে রোজা এবং প্রত্যেক মাসের ৩ দিন রোজা রাখা অন্তরের বিদ্বেষ-শত্রুতা দূর করে দেয়।” [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৩০৭০; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১০৩২; হাদিসটি সহিহ]
(৩) রোজা অতীতের সব গুনাহ মুছে দেয়।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদানে রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০১]
(৪) রোজা জাহান্নাম থেকে ঢালস্বরূপ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে ঢালস্বরূপ।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ২২৩৪; হাদিসটি সহিহ]
(৫) একমাত্র রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই দেবেন!
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের প্রতিটি (ভালো) কাজের প্রতিদান ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’’ মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু রোজা ব্যতীত। কেননা, এটি আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো। বান্দা আমার জন্যই তার কামনা-বাসনা এবং পানাহার থেকে বিরত থেকেছে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৫৯৭]
(৬) জিহাদের ময়দানে একটি রোজার মাহাত্ম্য:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের পথ দূরে রাখবেন।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৩০৬]
(৭) রোজাদারের বিশেষ জান্নাতি গেইট!
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদার ব্যক্তিবর্গ প্রবেশ করবে; তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, ‘‘রোজাদার ব্যক্তিরা কোথায়?’’ তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই বন্ধ করে দেওয়া হবে, আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৮৯৬]
(৮) রোজাদার কিয়ামতের দিন তৃষ্ণার্ত হবে না।
উপরের হাদিসটির বর্ধিত অংশে আরও এসেছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সেই (রাইয়্যান) দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে (বিশেষ পানীয়) পান করবে আর যে পান করবে, সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ২২৩৬; হাদিসটি সহিহ]
(৯) একমাত্র রোজার ব্যাপারেই আল্লাহ বলেছেন যে, এই আমলটি স্রেফ আল্লাহর জন্য!
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই তার নিজের জন্য, কেবল রোজা ব্যতীত; কেননা এটি আমার জন্য (করা হয়) আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০৪]
(১০) রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধও অত্যন্ত দামী।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের (কস্তুরির) ঘ্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০৪]
(১১) রোজাদার তার রোজার বিনিময় পেয়ে কিয়ামতের দিন অত্যন্ত আনন্দিত হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশির উপলক্ষ রয়েছে, যা তাকে আনন্দিত করে/করবে—যখন সে ইফতার করে, আনন্দ লাভ করে এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০৪]