ইতিকাফে বসে কী কী আমল করবেন?

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪
ইতিকাফে বসে কী কী আমল
ইতিকাফে বসে কী কী আমল

(১) অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করা:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি ইস্তিগফার পড়তেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৭]
সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়বেন সাধ্যমত। এছাড়া, আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি, আল্লাহুম্মাগফিরলি, রাব্বিগফিরলি ইত্যাদি সহজ ইস্তিগফারগুলো বেশি বেশি পড়বেন। অন্যান্য ইস্তিগফারও পড়বেন, যেগুলো জানা আছে।
(৩) অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা:
হাদিসে এসেছে, “তোমরা কুরআন পাঠ করো, কারণ, কুরআন কিয়ামতের দিন তার সাথীর (পাঠকের) জন্য সুপারিশকারী হবে।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৫৯]
সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস—এই ৩টি সুরা প্রত্যেক নামাজের পর ১ বার করে পড়বেন। ঘুমানোর আগে এবং সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়বেন। বিশেষ করে, রাতে সুরা মুলক এবং সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়বেন। জুমার দিনে সুরা কাহাফ পড়বেন।
হাদিস এবং ধর্মীয় বইও পড়া যেতে পারে।
(৪) বেশি বেশি যিকর করা:
একদিন নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সামনে বললেন, ‘‘মুফাররাদগণ (একাকী মানুষেরা) এগিয়ে গেলো।’’ সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মুফাররাদ কারা?’ তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর বেশি বেশি যিকরকারী নারী-পুরুষেরা।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭০১]
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার—এগুলো প্রত্যেকটি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার করে পড়বেন। যত বেশি পারবেন, তত ভালো। এছাড়া ‘লা হাউলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম’ এবং ‘সুবহানাল্লাহিল আযিমি ওয়া বিহামদিহ’ এই তাসবিহগুলো বেশি বেশি পড়বেন।
(৫) নবিজির উপর দরুদ পাঠ করা:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, তার ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি (মর্যাদার) স্তর উন্নীত করবেন।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯৭; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৪; হাদিসটি সহিহ]
নামাজের শেষ বৈঠকে আমরা যে দরুদ পড়ি, সেটিই সর্বোত্তম। এছাড়াও অন্যান্য দরুদ পড়তে পারেন। সুনানে নাসায়ির সহিহ হাদিসে বর্ণিত একটি সহজ দরুদ হলো, ‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি আ-লা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ’’।
(৬) সাধ্যানুসারে নফল নামাজ পড়া:
একজন সাহাবি জান্নাতে নবিজির সান্নিধ্য লাভের জন্য তীব্র বাসনা ব্যক্ত করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, ‘‘তাহলে বেশি বেশি সিজদার মাধ্যমে (অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে) তুমি নিজের জন্যই আমাকে সাহায্য করো।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৯৮১]
ইতিকাফকারী গুরুত্বের সাথে তাহাজ্জুদ, চাশত (দোহা), যাওয়াল, তাহিয়্যাতুল অজু, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজ আদায় করবেন। ইতিকাফের দিনগুলোতে এগুলোতে অভ্যস্ত হওয়া ব্যক্তির জন্য কঠিন নয়।
(৭) আন্তরিকভাবে দু‘আ করা:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কিছু নেই।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৭০; হাদিসটি হাসান]
বিশেষ করে, শেষ রাতে এবং জুমার দিন আসরের পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দু‘আ করবেন।
(৮) বিশেষ দুটো দু‘আ বেশি বেশি পড়া:
ইবরাহিম (আ.)-এর দু‘আটি পড়তে পারেন—
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদারকে আপনি সেদিন ক্ষমা করে দিয়েন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে। [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোনটি কদরের রাত, তাহলে ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
[আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘অ্ফু ‘আন্নি]
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫০; হাদিসটি সহিহ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ