আযান দেওয়ার নিয়মসহ আযানের খুঁটিনাটি সকল তথ্য এক লেখাতে

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪
আযান দেওয়ার নিয়মসহ আযানের খুঁটিনাটি সকল তথ্য
আযান দেওয়ার নিয়মসহ আযানের খুঁটিনাটি সকল তথ্য

আযান হলো মুসলিম জাহানের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা। যা মূলত প্রতিদিন ৫ বার করে দেওয়া হয়ে থাকে নামাজের উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে একজন সচেতন মুসলিম হিসাবে আযান দেওয়ার নিয়মসহ আযানের খুঁটিনাটি সকল তথ্য জেনে রাখা জরুরি। চলুন শুরু করা যাক। 

 

আযান ও ইকামত কী?

শুরুতে আমরা আলোচনা করবো আযান সম্পর্কে। আযান একটি আরবি শব্দ এবং এই শব্দের অর্থ হলো “ঘোষণা করা” বা “মানুষকে কিছু শোনানো”। 

 

অন্যদিকে ইকামাহ শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। এই আরবি শব্দের বাংলা অর্থ হতে পারে প্রতিষ্ঠা করা, খাড়া করা এবং পরিবেশন করা। মূলত ইকামত দেওয়ার পূর্বে আযানের মাধ্যমে সেই ইকামতের ঘোষণা করা হয়ে থাকে। 

 

আযানের ইতিহাস কি? 

আমরা অনেকেই আযানের নিয়ম এবং আযান কেনো দেওয়া হয় সে-সম্পর্কে জানি। তবে জানি আযানের সঠিক ইতিহাস কি। যা জানাটা অনেক বেশি জরুরি। 

 

মূলত পৃথিবীতে প্রথমবার আযান দেন বিলাল ইবনে রাবাহ। এই ব্যাক্তি আমাদের প্রিয় নবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহাবি ছিলেন বটে। আর পৃথিবীতে প্রথম আযান ঘোষনা করা হয় মদিনার মসজিদে নববীতে। 

 

আযানের শব্দ কয়টি ও কি কি?

আযানে মূলত আল্লাহু আকবার বাক্যটি ব্যবহার করতে হবে ৪ বার। এরপর আগে আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বাক্যটি ব্যবহার করতে হবে ২ বার এবং পরে ব্যবহার করতে হবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ ২ বার। 

 

সাথে হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ্ ২ বার এবং হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্ ২ বার করে পড়তে হবে। সবশেষে আল্লাহু আকবার ২ বার করে পড়ে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ পড়তে হবে শুধুমাত্র ১ বার। 

 

আযান দেওয়ার নিয়ম কি?

এবার আসি আযান দেওয়ার নিয়মের ব্যাপারে। আযান দিতে হলে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলিকে মাথায় রাখতে হবে: 

  • মুয়াজ্জিনকে অবশ্যই ভালোভাবে অজু করে পবিত্র হতে হবে
  • সময় মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্ধারিত সময়ে আযান দিতে হবে
  • মুয়াজ্জিনকে কেবলার দিকে মুখ অর্থ্যাৎ মক্কায় কাবার দিকে মুখ করতে হবে
  • আযান স্পষ্ট, উচ্চস্বরে ও সুরেলা কণ্ঠে গাইতে হবে
  • মুয়াজ্জিনকে মুসল্লিদের নামাযের জন্য ডাকার নিয়ত করে আযান দিতে হবে
  • সবাই যাতে শুনে তা নিশ্চিত করতে মাইক ব্যবহার করে মিনার থেকে আযান দিতে হবে 

 

আযান দেওয়ার বিধান কি?

আযান দেওয়ার বিধান হলো আযান দেওয়ার সময় অত্যন্ত জোর দেওয়া। কারণ এটি নবীর সুন্নত। ক্লাসিক্যাল আরবি ধ্বনিতত্ত্ব মেনে মুয়াজ্জিনকে আযান দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর যাদের কাছে ব্যাপারটির কঠিন মনে হবে তাদের দক্ষ মুয়েজ্জিনদের দ্বারা রেকর্ডিং শুনে শুনে ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। 

 

আযান দেওয়া কি ফরজ?

বলে রাখা ভালো নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যা কিছুটা ওয়াজিবের কাছাকাছি। পাশাপাশি জানিয়ে রাখা উচিত জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য একামত দেওয়া সুন্নত। আর যদি একাকী ফরজ নামাজ পড়েন সেক্ষেত্রে একামত দেওয়া মুস্তাহাব হিসাবে পরিগণিত হবে। 

 

আযান এর লিরিক্স কি? 

আপনাদের সকলের সুবিধার্থে আযান এর লিরিক্স বাংলায় দেওয়া হলো: 

 

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ

হাইয়া আলাস সালাহ

হাইয়া আলাস সালাহ

হাইয়া আলাল ফালাহ

হাইয়া আলাল ফালাহ

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

 

আজান এর বাংলা অর্থ কি?

আপনি কি জানেন আজান এর বাংলা অর্থ কি? আজানের অর্থ জানাটা প্রতিটি মুসল্লির জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আজান কেনো দেওয়া হয়, এর উদ্দেশ্য কি সবকিছু বোঝা সহজ হয়। সুতরাং চলুন আজান এর বাংলা অর্থ জেনে নেওয়ার মতো ফরজ কাজটি সেরে আসি: 

 

আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান

আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল

নামাজের দিকে আসুন

নামাজের দিকে আসুন

সফলতার দিকে আসুন

সফলতার দিকে আসুন

আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান

আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই

 

আযান দেওয়ার সময় নিষিদ্ধ কাজগুলি কি কি? 

আযান দেওয়ার সময় আপনাকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কাজ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে মাথায় রাখতে হবে: 

  • মুয়াজ্জিনকে অন্য কাজে নিয়োজিত রেখে আজানে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাবে না
  • আজান চলাকালীন সময়ে হাসা, কথা বলা বা অনুপযুক্ত আচরণ করা যাবে না
  • মানুষের বিশেষ করে অমুসলিমদের খুব বেশি বিরক্তিতে ফেলে জোরে আজান দেওয়া যাবে না 

 

বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম কি?

পবিত্রতা, কিবলামুখী হওয়া এবং নিয়ত করার মতো আযানের সাধারণ নিয়ম মেনেই আপনি বাচ্চা হলে আযান দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো একজন পুরুষকে মানুষকে আজান দেবার দায়িত্ব দিতে হবে। এছাড়া আর কোনো বাড়তি নিয়ম নেই। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ