আর দশটা সাধারণ স্ত্রীদের মতো প্রবাসীর স্ত্রীরা কানে ফোন নিয়ে রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারেন না। প্রবাসীর স্ত্রীদের এমন অবস্থায় দেখা মাত্রই পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের দিকে বাঁকা নজরে তাকিয়ে থাকেন, আর ভাবতে থাকেন নিশ্চয়ই তারা অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে প্রেমালাপে ব্যস্ত আছেন।
এর স্বামী তো বিদেশে, কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন কথা বলার সুযোগ পায় নাকি স্ত্রীর সঙ্গে? তবে এত কথা কার সাথে বলে সারাদিন? এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে রীতিমতো কানাঘুষা চলতে থাকে পাড়ার প্রত্যেকটা বাড়ীতে।
এসব ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা সামাজিক মাধ্যম গুলো ঘাঁটলে, হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায় প্রবাসীর স্ত্রীদের বিরুদ্ধে বড় বড় শিরোনাম। কেউ বা স্বামীর সংসার ছেড়ে অন্যকোন পুরুষের হাত ধরে চলে গেছেন। কেউ বা প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে ফেঁসে গেছেন।
এমন বিচিত্র সব শিরোনামের পোস্টগুলোতে হাজার হাজার মানুষের মন্তব্য দেখলে বোঝা যায় এদেশের মানুষের মনে প্রবাসীর স্ত্রীদের নিয়ে কি পরিমানের নেতিবাচক চিন্তা কাজ করে।
তবে প্রবাসীর স্ত্রীদের নিয়ে এমন কু-মন্তব্য বা নেতিবাচক চিন্তা করার পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বাংলাদেশে পরকীয়া জনিত ঘটনা ঘাঁটলে দেখা যায় অধিকাংশ ঘটনা গুলোতেই প্রবাসীর স্ত্রীরা জড়িত থাকেন।
এমন ঘৃণিত কাজের সঙ্গে কেনই’বা প্রবাসীর স্ত্রীরা জড়িয়ে পড়েন? এর পেছনের কারণ কি? এর কারণ জানতে হলে আপনাকে গোড়ার দিকে যেতে হবে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মনে করে থাকেন প্রবাসী মানেই হচ্ছে টাকার উড়োজাহাজ।
ঠিক এ কারণেই একটু অস্বচ্ছল পরিবারের বাবা মা’রা মনে করে থাকেন কোন একজন প্রবাসীর কাছে নিজেদের মেয়েকে তুলে দিতে পারলেই হয়ত কাঁধ থেকে বোঝা নামানো যাবে, সেই সাথে তাদের মেয়েও সারাজীবন টাকার বিছানায় জীবন কাটাতে পারবে।
তাই খুব অল্প বয়সেই মেয়েদের বিদেশে থাকা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। যেই বয়সে একটা মেয়ের স্বাভাবিক বুঝ- ব্যবস্থাই আসার কথা না, সেই বয়সটাতেই মেয়েটাকে সংসার জীবনে পা রাখতে হয়। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গন্ডি সেখানেই শেষ হয়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামীর সাথে এরা বেশী দিন সময় কাটাতে পারেনা। কয়েকমাস পরেই তাদের স্বামী আবার বিদেশে চলে যায়। আর ফিরতি দেশে আসতে কয়েক বছর লেগে যায়। যেহেতু সে স্বামীর সঙ্গে বেশী একটা সময় কাটাতে পারে না তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটির স্বামীর প্রতি তেমন একটা ভালোবাসা কিংবা আকর্ষণ জন্মায় না।
আর বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে কোলজুড়ে চলে আসে সন্তান। এমন গুরত্বপূর্ণ সময়ে তার স্বামী কিন্তু তার পাশে থাকে না। এত অল্প বয়সে মা হওয়ার গুরুত্ব বা স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব কোন কিছুই মাথায় ধরেনা মেয়েটির৷
আর বাবা মা যে আশায় মেয়েটিকে বিদেশ থাকা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে থাকেন। সে আশা তো পূরণ হয়ই না উলটো তার বিপরীত ঘটনা ঘটে। বেশীর ভাগ মেয়েরাই স্বামীর বাড়িতে স্রেফ কাজের বুয়া হয়ে থেকে যায়। তাদের সাথে শশুর বাড়ির লোকেরাও মাঝেমধ্যে ভীষণ খারাপ আচরণ করে থাকে।
বয়সটাতো আবেগের, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তখন স্বামীও পাশে থাকেনা। ঠিক এই সময়টাতেই প্রবাসীর স্ত্রীরা আবেগের বশে মারাত্মক ভুল পথে পা বাড়ান। তারা অন্যকোন পুরুষের সাথে ভালোবাসার অভাব পূরণ করতে চান।
হঠাৎ কোন পুরুষের মিষ্টি কথায় তারা এতটাই অন্ধ হয়ে যান যে নিজের সংসার বা বাচ্চা ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। এমনকি খুনখারাবি করতেও এরা রাজি থাকে। পরকীয়ার নোংরা জালে ফেঁসে প্রতিবছর হাজারো জীবন নষ্ট হয়ে যায়।
তাই পরকীয়ার মতো সামাজিক অপরাধ এড়াতে এবার অন্তত আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। সামান্য কিছু টাকার লোভে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে তাদের যথাযথ শিক্ষা গ্রহণে সাহায্য করতে হবে।
আর প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে তার শশুর বাড়ীর লোকদেরও সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ জীবনের অনেক গুরত্বপূর্ণ সময়ে সে তার স্বামীকে পাশে পাচ্ছে না। এসময় তারাই মেয়েটির আপনজন। এসব ছোট খাটো জিনিসে খেয়াল রাখলেই এমন অপরাধের হার অনেকাংশেই কমে যাবে।
“প্রবাস ও প্রবাসীদের জীবনের অজানা কথা জানতে প্রবাস প্রতিদিনের সঙ্গেই থাকুন।”