কখনো ভেবে দেখেছেন কি? করোনা চলাকালীন সময়ে’ও বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কিভাবে আর্থিক ভাবে সক্ষম ছিল?
এর প্রধান কারণ ছিল দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বিশাল অংকের অর্থ। নয়ত করোনার দূর্দশায় সরকারের পক্ষেও জনগনকে এত সহায়তা করা সম্ভব ছিল না।
যেই প্রবাসীদের এত কষ্টে উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে ভালো আছে দেশ,তাদের পরিবার। সেই প্রবাসীরাই কতটুকু ভালো আছে? কতটুকুই’বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারছে তাদের এই উপার্জনকে? বলতে গেলে অনেকের কাছে প্রবাসী মানেই তো শুধুমাত্র ” টাকা কামানোর মেশিন। “
আর্থিক গবেষণায় জানা যায়, প্রবাসীদের আয়ের বিরাট একটি অংশ ব্যয়ই হয় শুধুমাত্র ভোগ বিলাসিতার জন্য। দিনের পর দিন এত কষ্ট করে প্রবাসীরা যেই অর্থ উপার্জন করে বলতে গেলে তার পুরোটাই ভোগ করে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা।
আর এসব ভোগ বিলাসিতার কারণেই, প্রবাসীদের আয় করা অর্থ দিয়ে তেমন কোন বিনিয়োগ হয়না ফলস্বরূপ তৈরী হয়না কোন নতুন কর্মসংস্থান। প্রবাসীদের অর্থে কোন নতুন কর্মসংস্থান তৈরী না হলেও ঠিক এর উল্টো দৃশ্য দেখা যায় বাংলাদেশে।
প্রবাসীর পরিবারে এমন একটি দল তৈরী হয়ে যায়, যাদের কাজই হচ্ছে প্রবাসীদের অর্থে বসে বসে দিন পার করা। সেই পরিবারের সদস্যদের বিলাসিতা আর চাকচিক্য দেখলে মনে হয় না তাদের জন্য দূর প্রবাসে কেউ রক্ত পানি করে দিন রাত খেটে চলেছে। অথচ, প্রবাসে যিনি আছেন তার পাশাপাশি সংসারের যে কেউ হাল ধরবে সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রবাসীদের পরিবারের মাঝে দেখা যায় না।
তবে অর্থ কামানোর আগ্রহ না থাকলেও প্রবাসীদের পরিবারের মাঝে পাওয়া যায় জমি কেনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ভালো জমি কিনে একটা বাড়ী বানানোই যেন তাদের পরিবারের প্রধান লক্ষ্য। আর একবার বাড়ি হয়ে গেলে পাশাপাশি আরো বাড়তি জমি কেনার স্বপ্ন হয়ে যায় তাদের দ্বিতীয় বাসনা।
এসব স্বপ্ন পূরণ করা তাদের পক্ষে বেশ সহজ হয়ে যায় কারণ প্রবাসে তো তাদের টাকা কামানোর মেশিন আছেই। তবে এই লক্ষ কোটি টাকায় তৈরী করা সেই বাড়িতে কি প্রবাসীদের থাকার সুযোগ হয়?
অধিকাংশে ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রবাসীদের শ্রমে উপার্জিত যেই অর্থ দিয়ে যেসব সম্পত্তি গড়ে তোলা হয় সেসব সম্পত্তির মালিকানা প্রবাসীদের নামে থাকেই না।
এসব কারণেই দীর্ঘ সময় পরে দেশে ফেরত এসে অধিকাংশ প্রবাসীদেরই নিজেদের বলতে কিছুই থাকেনা। বছর পর বছর প্রবাসীরা নিজেদের পরিবারের নিকট যেই লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠায়,সেসব টাকার কোন হদীসই পাওয়া যায় না।
নিজের পরিবার, নিজের দেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা নিঃসঙ্গ প্রবাসীরা নিজেদের স্বান্তনা দিতে থাকেন শুধু এই ভেবে, ‘এই তো আর কটা বছর কষ্ট করতে হবে শুধু, এরপর তো আবার ফিরে গিয়ে সব গুছানো দেখতে পাবেন তারা। থাকবে না কোন অভাব কিংবা দুশ্চিন্তা। জীবনের শেষ সময়টুকু শান্তিতে পরিবারকে নিয়ে সময় কাটানো যাবে।’
কিন্তু অভাগা প্রবাসীরা দেশে এসে দেখে এত বছর কষ্ট করেও নিজের বলতে তো কিছুই নেই। কিভাবে তবে আপন দেশে নিজের পরিবারের সাথে বাকি জীবনটা কাটানো যাবে? এসব পরিস্থিতিতে মাথা চাপড়ানো ছাড়া কোন পথই থাকে না অসহায় প্রবাসীদের। শেষমেশ উপায় না পেয়ে চাপা অভিমান আর হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে আবার’ও পাড়ি জমাতে হয় দূর প্রবাসে।
“প্রবাস ও প্রবাসীদের জীবনের অজানা কথা জানতে প্রবাস প্রতিদিনের সঙ্গেই থাকুন।”