কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন কাজের ভিসা সাধারণত কয় ধরণের হয়ে থাকে, কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, কোন কোন দেশে গেলে ভালো হবে কিংবা কোনো রিস্ক আছে কিনা! আর আপনার এসব ইনফরমেশনের চাহিদা মেটাতেই আমাদের আজকের এই লেখাটি৷ সাথেই থাকুন।
কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক ভিসা হলো একটি সরকারি ডকুমেন্টস। আপনি যদি বাইরের দেশে গিয়ে কাজ করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এমন একটি ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত কাজের ভিসা ছাড়া আপনি পৃথিবীর কোনো দেশে গিয়ে কাজ করার পারমিশন পাবেন না। বলে রাখা ভালো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের কাজের ভিসার ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনীয়তা, আবেদন প্রক্রিয়া এবং খরচের উপর ডিপেন্ড করে ভিসাকে এক একটি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে।
কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে নিশ্চিত করে নিতে হবে মূলত কয় ধরণের কাজের ভিসা বর্তমানে বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে:
স্কিলড ভিসা: যেকোনো জবের বা কাজের চাহিদা অনুযায়ী যদি আপনার নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি এই স্কিলড ভিসার আন্ডারে পছন্দের দেশে যেতে পারবেন।
টেম্পোরারি ভিসা: আপনি যদি খুব অল্প সময়ে করার মতো কোনো ভালো কাজ খুঁজেন পান এবং তার আন্ডারে বাইরের দেশে যেতে চান সেক্ষেত্রে টেম্পোরারি ভিসা চুজ করতে পারেন৷ এই ভিসা মূলত তাদের জন্য তারা মৌসুমি কর্মী হিসাবে অল্প সময়ের জন্য বাইরে কাজ করতে যাবে।
স্পনসর্ড ভিসা: আপনি যে কোম্পানি থেকে জব পাচ্ছেন সে কোম্পানির মালিক বা কতৃপক্ষ যদি আপনার ভিসার ব্যবস্থা করে সেক্ষেত্রে তা হবে স্পনসর্ড ভিসা।
এমপ্লয়মেন্ট ভিসা: অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই বিদেশে কোম্পানি তৈরি করে সেখানেই উদ্যোক্তা বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে চায়। এক্ষেত্রে আপনি অন্য কারো আন্ডারে কাজ না করে নিজেই নিজের আন্ডারে কাজ করবেন। আর এই কাজ করতে যেতে হলে আপনার যে ধরণের ভিসার প্রয়োজন হবে সেটি হলো এমপ্লয়মেন্ট ভিসা।
কোম্পানি ট্রান্সফার ভিসা: সবশেষে বলবো কোম্পানি ট্রান্সফার ভিসার কথা। এই ধরণের ভিসা মূলত তাদের জন্য যারা দেশেরই কোনো একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন কিন্তু সেই কোম্পানির অন্য আরেকটি দেশে ব্রাঞ্চ থাকায় তাদের সে দেশে যেতে হবে৷
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের ভিসার জন্য আবেদন করছেন তারা প্রত্যেকেই কমন কিছু দেশকে চুজ করছেন বা করতে চাইছেন। সুবিধা এবং খরচের দিক দিয়ে বেশকিছু ভালো দেশ হিসেবে আমরা যেসব দেশ নিয়ে কথা বলতে পারি সেসব দেশ হলো:
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ওমানে বাংলাদেশের অনেক প্রবাসী বহুদিন ধরে কাজ করে আসছেন৷ একেবারেই কাজ পারে না কিংবা টুকটাক কাজ পারে এমন কর্মীদের জন্যে এসব দেশ আসলেই পার্ফেক্ট গন্তব্য হিসাবে কাজ করে৷
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ওমানের মতো ইউরোপের ইতালি, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতেও বাংলাদেশী প্রচুর প্রবাসীদের কাজ করতে দেখা যায়। তবে এসব দেশে কাজ করতে হলে হয় আপনাকে পুরোপুরি কাজে দক্ষ হতে হবে নয়তো টুকটাক কাজ জানতেই হবে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মালয়েশিয়ার মতো জনপ্রিয় দেশগুলিতেও বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
এবারে চলুন সরাসরি চলে যায় কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার ফুল গাইডলাইনের ব্যাপারে। আপনাকে যা যা করতে হবে:
১. আপনি যে দেশে যাবেন বলে ভাবছেন সে দেশ নিয়ে প্রয়োজনীয় রিসার্চ সেরে ফেলুন। সে দেশের ভাষা কেমন, চাকরি কেমন, গেলে ভালো থাকবেন কিনা, খরচ কেমন পড়বে সবকিছু রিসার্চ করে নিন। আর এই রিসার্চের কাজে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন।
২. চাকরির অফার পেতে যা যা করা লাগে করুন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঘাঁটাঘাঁটি করুন কিংবা পরিচিত যদি কেউ থাকে তাদের ব্যবস্থা করে দিতে বলুন। মনে রাখবেন অফার ছাড়া কাজের ভিসা পাবেন না।
৩. এরপর আপনাকে নিজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে ৬ মাসের মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, চাকরির অফার লেটার, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ডকুমেন্টস, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, মেডিকেল সার্টিফিকেট ইত্যাদি ডকুমেন্টস রেডি করে রাখুন।
৪. আবেদন ফর্ম পূরণ করে উপরোক্ত ডকুমেন্টসগুলিসহ সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আপনার আবেদন জমা দিন। চাইলে অনলাইনে ঘরে বসেও কাজটি সেরে নিতে পারেন।
৫. ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় দেশ এবং ভিসার প্রসেসিংয়ের উপর নির্ভর করে কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন। ঠিক কতদিন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে তা আবেদন জমা দেবার সময় জেনে নিন।
আশা করি কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার সময় উপরোক্ত গাইডলাইনটি ফলো করতে পারলে আপনার ভিসা হাতে পেতে কোনো সমস্যাই হবে না। মনে রাখবেন কাজ করতে জানা এবং যে দেশে যাবেন সে দেশের ভাষা জানাটা আবশ্যক। অবশ্যই নিজেকে দক্ষ এবং প্রস্তুত করে তবেই বিদেশ যাবেন৷