আমরা অনেকেই মনে করি প্রবাস জীবন মানেই হচ্ছে বিলাসিতা। সাদা ধবধবে বিলাতী মানুষের মাঝে দিব্যিই তো সুখেই আছেন প্রবাসীরা। কিছু কিনতে ইচ্ছা করলেই পকেট থেকে চকচকে ডলার খসে পড়ে প্রবাসীদের। ব্যস! মুহুর্তেই ডলারে কেনা হয়ে যায় দামী দামী সব শখের জিনিস।
এগুলো শুধুমাত্র আমাদের কল্পনা। বাস্তব জীবনে কি সত্যিই সুখে আছেন যোজন যোজন দূরে থাকা প্রবাসীরা? আসলে কল্পনার বাহিরে এসব নিয়ে আমরা কখনোই ভেবে দেখিনি। বাস্তব সত্যি তো এটাই প্রবাস জীবন চাকচিক্যের নয়,প্রবাস জীবন মানেই একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা।
আচ্ছা, একটা ঈদ আপনজনদের ছাড়া কাটাতে হবে এ কথা কল্পনা করতেও যেন বুকটার ভেতর একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। অথচ প্রবাসীদের তো বছর পর বছর ভীন দেশে স্বজন ছাড়া ঈদ পালন করতে হয়। এই ঈদ কি সত্যি তাদের জন্য সুখের হয়?
দেশে থাকা প্রবাসীদের পরিবারের জন্য ঈদ বহু আনন্দের হলেও, প্রবাসে থাকা মানুষটার কাছে ঈদ মানেই বিষন্নতা। অসহায় প্রবাসীরা চেষ্টা করেও বিলাতীদের মাঝে আপনজনদের সেই পরম মায়া খুঁজে পাননা। একাকিত্বই যেন তখন তাদের একমাত্র সঙ্গী।
হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা স্বজনদের কাছে চাইলেই তারা মনের দুঃখ প্রকাশ করতে পারেননা। সারাদিন গতরখাটা কাজের পর যথেষ্ট সময়টুকু পাওয়া যায় না স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার।
আর মাঝেমধ্যে সময় পাওয়া গেলেও সব মনের কথা দেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে তারা বলতে পারেন না শুধুমাত্র এই ভয়ে যদি এসব শুনে তারা দুশ্চিন্তা করে অসুস্থ হয়ে পড়েন,তখন কিভাবে তারা প্রবাসে বসে এসব সামলাবেন?
একটা সময় সব দুঃখ চাপিয়ে রাখতে রাখতে এরা এতটাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন যে ছোট কষ্ট গুলোও তখন তাদের কাছে পাহাড় সমান মনে হয়।
তবে এতকিছুর পরেও, দিনশেষে স্বজনদের কথা ভেবে, নিজেকে সামলে নতুন একটি দিনের শুরু করেন প্রবাসীরা। এত কষ্ট তো পরিবারের জন্যই,তাদের একটু ভালো রাখার জন্য এই কষ্টটুকু সহ্য করতে রাজি থাকেন প্রবাসীরা।
অনেক প্রবাসীরা এভাবেই নিজেদের স্বান্তনা দিতে থাকেন, এই তো আর কিছু দিন তারপর বাবার সাথে আবারো বাজারের পথে যেতে যেতে প্রবাস জীবনের গল্প করা যাবে। আবারো কোন এক ঈদে মায়ের হাতের মজার খাবার খেতে পারলেই হয়ত কষ্টগুলো নিমিষেই চলে যাবে।
কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম! একটা সময় অনেক প্রবাসীদের এই স্বান্তনা দেওয়ার পথটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই কোন একদিন দূর প্রবাসে চলে আসে স্বজন হারানোর দুঃসংবাদ। মুহূর্তেই পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
যেই আপনজনদের জন্য এত যন্ত্রণা সহ্য করেও প্রবাসে পড়ে থাকা,অথচ সেই আপনজনের শেষ সময়টাতেও কাছে না থাকার কষ্টটা বুঝি একজন প্রবাসীই বুঝতে পারেন।
বছরের বছর এমন বহু স্বজন হারানোর চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে আছেন প্রবাসীরা। হয়ত মোবাইল ফোনে থাকা ছবিগুলোই সেই স্বজনদের শেষ স্মৃতি। এ জীবনে প্রিয় মুখগুলো দেশে গিয়ে আর একটিবারের জন্যেও দেখা যাবে না। এর থেকে নির্মম আর কঠিন বাস্তবতা আর কী হতে পারে?
একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা একটা সময় এই অসহায় প্রবাসীদের গভীর হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। এমনও অনেক প্রবাসী আছেন যারা নানা রকম অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন শুধুমাত্র নিজেদের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য। আবার অনেকে এই মানসিক চাপ নিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেঁছে নেন।
যদিওবা প্রবাসীদের এই একাকিত্ব কিংবা নিঃসঙ্গতা একেবারে কখনোই দূর করা সম্ভব নয়। তবুও প্রবাসীদের পরিবার, স্বজন কিংবা বন্ধুদের উচিত প্রতিদিন অল্প হলেও দূরে থাকা সেই মানুষটার খোঁজখবর নেওয়া। যাতে করে প্রবাসীরা আপনজনের সঙ্গে কিছুটা ভালো সময় কাটাতে পারেন।
“প্রবাস ও প্রবাসীদের জীবনের অজানা কথা জানতে প্রবাস প্রতিদিনের সঙ্গেই থাকুন।”