(১) সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর যিকর করলে শয়তানের পক্ষ থেকে ঘুম এসে যায়। তোমরা চাইলে অনুশীলন করে দেখতে পারো। তোমাদের কেউ যখন শয্যাগ্রহণ করে এবং ঘুমানোর ইচ্ছা করে, তখন সে যেন মহামহিম আল্লাহর যিকর করে।’ [ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ১২২০; বর্ণনাটি সহিহ]
.
(২) যায়েদ ইবনু সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার দীর্ঘদিনের অনিদ্রাজনিত রোগের ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, বলো—
.
اَللّٰهُمَّ غَارَتِ النُّجُوْمُ، وَهَدَأَتِ الْعُيُوْنُ، وَأَنْتَ حَيٌّ قَيُّوْمٌ، لاَ تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ أَهْدِئْ لَيْلِيْ، وَأَنِمْ عَيْنِيْ
.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা গা-রাতিন নুজুম, ওয়া হাদাআতিল উ’য়ুন, ওয়া আনতা ‘হাইয়ুন ক্বাইয়ুম, লা তাঅ্খুযুকা সিনাতুউ ওয়ালা নাওম, ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ুম, আহদিঅ্ লাইলী ওয়া আনিম ‘আইনী।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! তারকারাজি নিভে গেছে; (মানুষের) চোখগুলো (ঘুমে) শান্ত হয়ে গেছে; আর আপনি তো চিরঞ্জীব-চিরস্থায়ী—তন্দ্রা ও নিদ্রা যাকে স্পর্শ করতে পারে না। হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আমার রাতকে শান্তিময় করুন এবং আমার চোখে ঘুম দিন।
.
(যায়েদ রা. বলেন) আমি এটি বললাম এবং মহামহিম আল্লাহ আমার সমস্যা দূর করে দিলেন। [ইমাম বুসিরি, ইতহাফুল খিয়ারাহ: ৬/৪৬২; হাদিসটি দুর্বল, তবে আমলযোগ্য]
.
(৩) বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ আল-মাখযুমি (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অভিযোগ করে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুশ্চিন্তা বা স্নায়ুবিক চাপের কারণে রাতে আমি ঘুমাতে পারি না।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করো, তখন বলো—
.
اَللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রব্বাস সামা-ওয়াতিস সাব‘ই ওয়া মা আযল্লাত, ওয়া রব্বাল আরদ্বী-না ওয়া মা আক্বাল্লাত, ওয়া রব্বাশ শায়া-ত্বিনি ওয়া মা আদ্বল্লাত, কুন লি জা-রান মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম জামি-‘আ, আঁই ইয়াফরুত্বা ‘আলায়্যা আ‘হাদুম মিনহুম, আও আঁই ইয়াবগিয়া ‘আলায়্যা ‘আযযা জা-রুকা, ওয়া জাল্লা সানা-উকা ওয়া লা ইলা-হা গায়রুক, ওয়া লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
.
“হে আল্লাহ! সাত আসমানের রব এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া বিস্তার করেছে তার রব, জমিনসমূহের রব এবং যা কিছু তা ধারণ করে, তার রব, যিনি শয়তানদেরও রব এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করে, তাদেরও রব! আপনি আমাকে আপনার সকল সৃষ্টির অনিষ্ট হতে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যান, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার উপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার উপর অবিচার করতে না পারে। আপনার প্রতিবেশী সম্মানিত; আপনার প্রশংসা সুমহান। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫২৩; হাদিসটির সনদ দুর্বল]
.
এগুলোর পাশাপাশি ঘুমের আগের দু‘আ ও যিকরগুলো পড়তে থাকবেন। যতটুকু পারেন তিলাওয়াত করতে থাকবেন।
.
গবেষকগণ বলেন, ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুম আসতে লেইট হয়। তাই, এ দিকটা লক্ষ্য রাখা দরকার। তাছাড়া, দিনের বেলা বেশি ঘুমালে অনেকের রাতে ঘুম আসতে বিলম্ব হয়। তাই, রাতে যাদের ঘুম আসে না, তারা দিনে একদম না ঘুমাতে পারলে ভালো।