ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। ইউরোপের সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং স্থান মানসম্মতধর্মী হওয়ায় স্কলারশিপের লিষ্টে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এই ইউরোপকে বেছে নিতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে আর্থিক দিকটুকু নাজুক হলেও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না কেউই!
সম্প্রতি ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলি বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অসামান্য পারফরম্যান্সের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই দেশের অধ্যয়ন এবং শিক্ষাগত প্রশিক্ষণের একটি পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকায় এর চাহিদা বেড়েছে প্রচুর।
ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সহ পড়াশোনার খরচ, বাসস্থান, ভাতা এবং আরও অনেক কিছু যোগ করেই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই লেখাটি। যারা দেশটিতে অল্প খরচে বা একেবারে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে চান তারা শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
ইউরোপ মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার গুণমান এবং কর্মক্ষমতা বজায় রেখেই ইউরোপ কম খরচে বা বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীই এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
উল্লেখ্য যে অন্যান্য মহাদেশের তুলনায়, ইউরোপে বসবাস করা বেশ ব্যয়বহুল ব্যাপার। সুতরাং এদিকটা সামাল দিতেও ইউরোপের শিক্ষা বিষয়ক কতৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে বৃত্তি প্রদান করবে।
আপনি কি বিনামূল্যে ইউরোপে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করছেন? যদি করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে দ্রুত প্রস্তুতির মাঠে নেমে পড়তে হবে। কারণ এই মাঠে প্রচুর কম্পিটিটর। যার কারণে নিজেকে টিকিয়ে রাখাটা শেষ মুহুর্তে এসে কঠিন মনে হবে।
আবেদন করার আগে এবং আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে একদিকে যেমন আপনাকে একাডেমিক ডায়েরি বজায় রাখতে হবে, ঠিক তেমনই এর পাশাপাশি রিসার্চ করতে হবে সাবজেক্ট অনুযায়ী সেরা মানের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চলে এলাম আর্টিকেলের মূল অংশে অর্থ্যাৎ ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনায়। এই অংশে আমরা বেশকিছু টিপস শেয়ার করবো। যার ফলো করে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন ইউরোপে ফ্রিতে কিংবা হাফ-ফ্রিতে পড়াশোনা শেষ করার সুবর্ণ সুযোগ।
ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় হিসাবে শুরুতে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রিসার্চ করতে হবে। ইউরোপ অনেক বড় একটি মহাদেশ। যার অধীনে ৪৪ টির মতো দেশ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি দেশ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে হবে।
৪৪ টি দেশে থাকা এতোগুলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে নিজের পছন্দ বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা চাট্টিখানি কথা নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে আগে থেকেই রিসার্চ করে নেওয়া জরুরি। নতুবা কোর্সের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এবং আপনার চাহিদা ও আগ্রহ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে পরবর্তীতে তা ঝামেলা মনে হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রিসার্চ করার সময় আপনাকে ফ্রিতে স্কলারশিপ দেবে এমন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে নিতে হবে। মহাদেশটির বেশকিছু দেশে সাশ্রয়ী মূল্যের বা পুরোপুরি টিউশন-মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এক্ষেত্রে সহজেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে শর্ট লিষ্ট তৈরি করে তা দিয়েই রিসার্চ করতে পারেন।
বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করতে একটি তথ্য শেয়ার করছি। মূলত নরওয়ে, জার্মানি এবং চেক প্রজাতন্ত্রের দেশগুলিতে সকলের জন্যই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় হিসাবে আপনি শুরুতে এসব দেশকে টার্গেট করতে পারেন।
মনে রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ করার ক্ষেত্রে কেবল কোন বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ফ্রিতে পড়াশোনা করার সুযোগ প্রদান করছে তা যাচাই করলেই হবে না।
পাশাপাশি সেখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন, আপনার ক্যারিয়ারের সাথে মিলে এমন প্রোগ্রাম আছে কিনা, জীবনযাত্রার খরচ কেমন, যাতায়াতের খরচ কেমন ইত্যাদিও রিসার্চ করে নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রিসার্চ করা হয়ে গেলে ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় হিসাবে এবারে আপনাকে আবেদন পত্র তৈরি করতে হবে এবং তা জমা দিতে হবে।
ইউরোপে ২৭০০ টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনার পড়াশোনার আর্থিক ব্যয় বিবেচনা করেন যখন আপনি এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্দিষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিবেন তখন সেখানকার প্রোগ্রাম এবং ধরণ অনুযায়ী আপনাকে আবেদন পত্র রেডি করে নিতে হবে।
ইউরোপ মূলত তাদের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য পাবলিক সিস্টেম এবং আন্তজার্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য কম খরচে টিউশন ফির ব্যবস্থা রেখেছে। সুতরাং সে অনুযায়ী আবেদনের মাধ্যমে আপনাকে আগাতে হবে। কিভাবে এই আবেদনপত্র তৈরি করবেন তা নির্দিষ্ট বিশ্বিবদ্যালয়ই ঠিক করে দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রিসার্চ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করা হয়ে গেলে আপনাকে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হবে।
শুরুতে বলে রাখি ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করে থাকে। আপনি চাইলে এবং টিকে থাকতে পারলে দু’টো সুযোগই গ্রহণ করতে পারেন।
যারা ইতিমধ্যেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করে ফেলেছেন তারা এবারে বৃত্তির আবেদনের মাধ্যমে টিউশন, বাসস্থান এবং অন্যান্য খরচগুলি কভার করতে পারবেন।
এই মহাদেশটির প্রায় প্রতিটি দেশেই ডিগ্রি-স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে বৃত্তির ব্যবস্থা করা থাকে।
ইউরোপে ফ্রিতে স্নাতক শেষ করে Utrecht University বেছে নিতে পারেন। Utrecht University দেশের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
স্কলারশিপের পাশাপাশি যারা স্নাতকে পড়ছে তাদের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আর্থিক পুরষ্কারেরও ব্যবস্থা করে। এই আর্থিক পুরস্কারের পরিমাণ ৫০০০ ইউরো থেকে শুরু করে ১৭০০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও ইউনিভার্সিটি অফ টুয়েন্টিতেও আপনি ফ্রিতে বৃত্তির আন্ডারে থেকে পড়াশোনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে হল্যান্ড বৃত্তি, ডাচ শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা নিতে হবে।
ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় হিসাবে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। সুইস গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স মূলত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মাস্টার্সের ব্যবস্থা করেছে।
তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবলমাত্র ২ টি খাতের জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে। এগুলি হলো গবেষণা ও শিল্প। শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল, গবেষণা কাজ এবং সম্ভাব্যতার উপর নির্ভর করে তারা এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
এছাড়াও ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কয়েকটি বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকোর মতো দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয় তারা বৃত্তির ক্ষেত্রে বেশ প্রায়োরিটি পেয়ে থাকে।
উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃত্তির সিস্টেম হলো ইক্যুইটি এবং মেরিট স্কলারশিপ। যা সাধারণত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির উপর বিবেচনা করে প্রদান করা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে যাদের স্বপ্ন ফিনল্যান্ডে পড়া তারা হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিতে পারেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তজার্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তি প্রোগ্রাম প্রদান করে থাকে।
ইউনাইটেড কিংডমের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মূলত বিদেশী ডক্টরেট শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ডিং বিশিষ্ট স্নাতকোত্তর বৃত্তি প্রদান করে থাকে। যা টিউশন ফি, গবেষণা এবং জীবনযাত্রার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ হিসাবে বিবেচিত হয়।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ৩৬ মাসের জন্য শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বহন করে। যা পেতে হলে শিক্ষার্থীকে একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
ইউরোপে বিনামূল্যে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে তো জানলেন। এবারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রি ও কোর্স বাছাই করে প্রস্তুতি গ্রহণের পালা।
মনে রাখবেন এসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সে খুব বেশ প্রতিযোগিতা থাকে। যেখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে কঠোরভাবে পড়াশোনা এবং স্কিল ডেভলপমেন্ট করতে হবে। আপনার প্রতি রইলো শুভ কামনা।