সৌদি আরবে সংঘাতে জড়িয়ে হাসপাতালে ২০ প্রবাসী

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার লুন্দিয়া গ্রামের ঝগড়ার জেরে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের অবস্থানরত প্রবাসী দুই পক্ষের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এত অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুই পক্ষের দুইজন গুরুত্বর আহত হন।

আহতরা হলেন- লুন্দিয়া গ্রামের পাগলা বাড়ির রইছ মিয়া (৩৫) ও শেখ বাড়ির মো. আনু মিয়া (২৭)। রিয়াদ শহরের মুল রাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। পরে ঘটনাস্থলে রিয়াদ থানা পুলিশ ধাওয়া করলে দুই পক্ষের প্রায় দুই শতাধিক লোকজন পালিয়ে যায়। এ সময় শেখ বাড়ির দুজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ওই ঝগড়ায় পাগলা বাড়ির নেতৃত্ব দেয় প্রবাসী বাবু মিয়া, সালাম মিয়া, মো. খোকন মিয়া ও শেখ বাড়ির নেতৃত্ব দেয় রহমত আলী ও আবুল কালাম। ওই সংঘর্ষ চলাকালীন সময় ভৈরবের অন্যান্য প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ প্রচার করলে ভৈরববাসী ও লুন্দিয়া গ্রামবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকালে উপজেলার লুন্দিয়া পাগলা বাড়ির মরহুম হাজী আমিন উদ্দিনের ছেলে প্রবাসী সোলাইমান ৯ বছর পর দেশে এসে তার পিতার কবর জিয়ারত করতে, একই বাড়ির আবুল কাশেমকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে এলাকার কবরস্থানে যায়। তখন ফেরার পথে পূর্ব শত্রুতার জেরে শেখ বাড়ির কামাল ও উজ্জ্বল সোলাইমান ও কাশেমের উপর রাস্তা আটকিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এত কাশেম (৪৫) গুরুত্বর আহত হয়।

এই ঘটনা সৌদি আরবের রিয়াদে জানাজানি হলে অবস্থানরত লুন্দিয়া গ্রামের প্রবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ৯টার দিকে (স্থানীয় সময় ৬:৩০) দুই পক্ষের প্রায় দুই শতাধিক প্রবাসী শেখ বাড়ি ও পাগলা বাড়ির লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ইট পাটকেলের আঘাতে প্রায় ২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে পাগলা বাড়ির রইছ মিয়া ও শেখ বাড়ির আনু মিয়া গুরুত্বর আহত হয়। গুরুত্বর আহতসহ বাকী আহতরা রিয়াদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

সূত্রের বরাতে জানা যায়, লুন্দিয়া গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক লোক সৌদি প্রবাসী। এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক লোক রিয়াদে অবস্থান করে। বেশিরভাগ লাক পাগলা বাড়ি ও শেখ বাড়ির বংশের। প্রায় ২০ বছর যাবত লুন্দিয়ার লোকজন রিয়াদে প্রবাসী হিসেবে অবস্থান করছেন।

ঘটনার বিবরণে আরও জানা যায়, উপজেলার মেঘনা অববাহিকায় আগানগর ইউনিয়নে লুন্দিয়া গস্খামটি অবস্থিত। প্রায় ৮/১০ বছর যাবত আধিপত্য নিয়ে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে কয়েকটি বংশের লোকজন জড়িত। গত ২০২১ সনে আধিপত্য নিয়ে ১৭ এপ্রিল পাগলা বাড়ি ও শেখ বাড়ির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে খুন হন দুইজন। এরা শেখ বাড়ির খালেক মিয়ার ছেলে পাবেল ও মোতালিব মিয়ার ছেলে মুকবুল। দুই খুনের জেরে ভৈরব থানায় দুটি মামলা হয়।

আসামি করা হয় পাগলা বাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন বংশের লোকদেরকে। এক মামলার আসামি ১১৪ জন ও অন্য খুনের মামলার আসামি ৯১ জন। মামলাগুলো সিআইডি থেকে স্থান্তরিত হয়ে পিআইবি কাছে তদন্তাধীন আছে। দুই মামলার ২০৫জন আসামি আদালতের মাধ্যমে বর্তমানে জামিনে রয়েছে।

জোড়া খুনের নিহত পাবেলের বড় ভাই উজ্জ্বল ও খালেক দলবল নিয়ে শুক্রবার প্রতিপক্ষের সোলাইমান ও কাশেমকে পেয়ে হামলা কওে আহত করেন। এর জের ধরে রিয়াদ শহরে অবস্থানরত লুন্দিয়া গ্রামের প্রবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

পাগলা বাড়ির বংশের নেতৃত্বে থাকা হাজী আব্দুল মজিদ বড় মিয়া বলেন, গ্রামে যাতে আর কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে। এর জন্য আমি প্রতিপক্ষসহ সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি।

শেখ বাড়ির নেতৃত্বে থাকা মোমেন শিকদার জানান, গ্রামে শুক্রবারে যে ঘটনা ঘটেছে তা আমরা বসে ইতিমধ্যে (শনিবার দুপুরে) মীমাংসা করেছি। আর সৌদি আরবের রিয়াদে যা ঘটেছে তা আমরা ওদেরকে বলে দিয়েছি মীমাংসা করতে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. মাকছুদুল আলম বলেন, বিদেশে যে ঘনাই ঘটুক লুন্দিয়া গ্রামের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ