প্রবাস জীবনের কষ্টের গল্প

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

আমরা যারা প্রবাসী তাদের কেউ টাকার জন্য, কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য যেটাই হোক কথা একটাই সেটা আমরা প্রবাসী। নিজের দেশ, নিজের জন্মভূমী, নিজের দেশের মাটি আর প্রবাস জীবনের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। প্রবাস জীবনে যদি কেউ রাস্তায় হাটেন বা কোথাও বেড়াতে যান কিংবা অফিসে কাজ করেন সব জায়গাতে আপনি যে প্রবাসী তা অন্য সবাই প্রমান করে দেবে। না হয় বেশি খাতির করে, না হয় নাক উচিয়ে বলে দেবে আপনি প্রবাসী, আপনি অন্য জাতি, আপনি অন্য মানুষ। হা কথাটা সত্য কিন্তু আমরাও চাই স্বাভাবিক হতে, সবার সাথে এক সাথে চলতে, কথা বলতে। এর মধ্যে কয়েকটি জিনিস বাধা হয়ে দাড়ায়।

এর মধ্যে সবার আগে বাধা দেয় কথা। আর কথার জন্য চাই ঐ ভাষায় পূর্ণ দক্ষতা যা অর্জন করা একজন পূর্ণ বয়ষ্কের জন্য খুবই কষ্টকর। একজন ততটুকু শিক্ষতে পারে যতটুকু তার নিজের চলার জন্য প্রয়োজন। এজন্য ভাষাগত একটা বড় ব্যবধান থেকে যায়। এর পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা খাবার। আমরা বাঙ্গালীরা ভাত, ডাল, মাছ আর মায়ের হাতের মমতা দিয়ে রান্না কারা বাংলার টাটকা স্বতেজ সব্জি, ভাজি খেতে অভ্যস্ত। এর বদলে যেকনো দেশের যত ভাল খাবারই হোক না কেন কিছু দিন পর তা বিদ্রহ করে। বিদেশে ঐ দেশের প্রচলিত খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে প্রত্যেকে রীতিমত মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।

চলাফেরা বা বন্ধু বান্ধব সে তো আর এক অবস্থা। বন্ধু বলতে আমরা বাঙ্গালীরা যা বুঝি, যা জানি, যে ছবি মনের মাঝে ভাসে, সেটা থেকে আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য সব দেশের বন্ধুর সংঙ্গা ভিন্ন। আমরা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাব, আড্ডা মারবো, ঘুরবো, সন্ধায় কোন এক চায়ের দোকান অথবা খেলার মাঠে অথবা বাজারে অথবা পছন্দের কোন জায়গায় বাসা, হাসি তামাসা করা, গল্প (যার কোন লাইন থাকে না) করতে করতে বাসায় ফেরার সময় পার হয়ে যাবে। কারন সময়ের কথা কারও মনে থাকে না।

এত কিছুর পরও প্রবাসীরা হাসিমুখে সব মেনে নেয় কারন প্রবাসী সবাই একটা স্বপ্ন নিয়ে প্রবাস জীবন বেছে নেয়। এরপর পরিবারের মানুষও যখন কথা বলে বা চিঠি লেখে তখন কেমন আছিস, কোন চিন্তা করিস না, আমরা ভালো আছি, বাড়ির কোন সমস্যা অথবা সমস্যার সমাধান, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলই বলে। কেউ কেউ অনেক সময় ঝগড়া করে, তর্ক করে, নালিস করে।

আমার মনে হয় কোন প্রবাসীকে দেশ থেকে (অন্তত যাদের প্রবাস জীবনের অভিঙ্গতা নাই) একজন প্রবাসীর মনের অবস্থা, তার একাকিত্ত্ব, তার আবেগ, তার কষ্ট, তার উদাসীনতা, তার নিরব কান্না এগুলো বুঝতে পারে না। এটা সত্য যে এই অনুভূতী গুলো অনুভব করাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। প্রবাসী জীবনে প্রবাসীরাই এই গুলো বেশি অনুভব করেন।

প্রবাস জীবনে কেউ দুঃখ পায় না, কারন দুঃখ পেতে আপনজন প্রয়জন হয়। আপনজন ব্যতীত অন্য কেউ দুঃখ দিতে পারে না। প্রবাস জীবন এমনই যে এই জীবনে দুঃখ পাওয়া যায় না। তবে প্রবাস জীবনের সঙ্গী হয় কষ্ট এবং এমন ভাবে লেগে থাকে যে পিছুই ছাড়তে চাই না। দুঃখ এবং কষ্টের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান তা প্রবাসীদের মতো অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না। প্রবাসে প্রবাসীরা যা অর্জন করেন সেটা অর্থ কিংবা শিক্ষা যায় হোক না কেন সেটা তার অতুলনীয় কষ্টের ফসল ছাড়া কিছুই না।

আপনাদের কাছে অনুরোধ, যারা দেশে আছেন আর বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-সজন অথবা পুত্র-কন্যা কিংবা স্বামী-স্ত্রী যেই প্রবাসী হোক না কেন সব কিছুর মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের সেই কষ্ট, অনভূতি, বেদনা, নিরব কান্না একটু বোঝার চেষ্টা করবেন। তাদেরকে যতখানি সম্ভব একাকিত্ত থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করবেন, তাদেরকে যত খানি সম্ভব নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা করবেন। অপনি কল্পনাও করতে পারবেন না আপনার বিশেষ এই অনুভূতি একজন প্রবাসীর জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলবে। তার প্রবাস জীবন কতখানি আনন্দময় হয়ে উঠবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ