এআই! কারো কাছে ভয়ংকর গোলার নাম! আবার কারো কাছে সময় বাঁচিয়ে জীবনকে আরেকটা সহজ করা মাধ্যমের নাম। এরই প্রেক্ষিতে আজকাল অনেকেই এআইকে কাজে লাগিয়ে ভিডিও তৈরি করছে এবং ইউটিউব মনিটাইজেনশন অর্জন করছে।
তবে সম্প্রতি ইউটিউব কতৃপক্ষ এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের নতুন নিয়ম চালু করেছে। যা নিয়েই থাকছে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা। সুতরাং বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
শুরুতেই বলবো এআই নির্মিত ছবি, ভিডিও বা অডিও এখন চিহ্নিত করা বেশ কঠিন কাজ হয়ে গেছে। এর কারণ একটাই এবং সেটি হলো বর্তমানের ভাইরাল আপডেটেড এআই সিস্টেম। যেসব এআই নিঁখুত রেজাল্ট দিচ্ছে একেবারে ফ্রিতে।
মনে রাখবেন এআইয়ের সাথে ইউটিউব কতৃপক্ষের কোনো শত্রুতা নেই। তবে এআইয়ের সাহায্যে তৈরি করা কন্টেন্টের ব্যাপারে ইউটিউব প্লাটফর্ম তার স্বচ্ছতা বাড়াতে চায়। যাতে করে কষ্ট করে যারা ইউটিউব ভিডিও তৈরি করছে তাদের এই চেষ্টা কোনোভাবেই বৃথা না যায়।
তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সহজ কথায় এআই লেবেল এড করা, এডিট করা ছবি বা ফুটেজে এআই ট্যাগ ব্যবহার করা ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। প্রাথমিকভাবে এমনটাই জানিয়েছে কতৃপক্ষ।
আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া ইউটিউবের এই সিস্টেম নিয়ে গত বছর থেকেই আয়োজন চলছিলো।
এখনো যে তা পুরোপুরি প্রয়োগ করা হচ্ছে তা বলবো না। তবে ইউটিউব কতৃপক্ষ যথেষ্ট সময় দিচ্ছে ক্রিয়েটরদের। যার লিমিট ছাড়িয়ে গেলে প্রয়োজনীয় অ্যাকশন নিতে বাধ্য হবে কতৃপক্ষটি।
সবকিছুর পেছনে একটা রহস্য থাকে। থাকে একটি নির্দিষ্ট ও যুক্তিযুক্ত কারণ। সংশ্লিষ্টজনেরা বলছেন এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের এই নতুন নিয়ম চালু করার পেছনে তেমনই কিছু যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। আর এসব কারণের মাঝে প্রধান কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের নির্বাচন।
আমরা সকলেই জানি ইতিমধ্যেই জনগণের মধ্যে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়াতে এআই কতটা তৎপর হয়ে উঠেছে। মুহুর্তেই পরিবর্তন করা হচ্ছে ভয়েস, ইমেজ এমনকি ভিডিও।
পাশাপাশি আশা করা যাচ্ছে ইউটিউবের এই নতুন এআই ভিত্তিক নিয়ম অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্নতাকেও খানিকটা নির্মুল করতে সহায়ক হবে। বাকিটা নির্ভর করছে এই নিয়ম প্রয়োগ এবং ব্যবহারের উপর।
এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের নতুন নিয়মগুলির ব্যাপারে জানলেও এখনো অনেকেই কনফিউজড। অনেকেই বুঝতে পারছেন না কোন কোন ভিডিওতে এই লেবেল যুক্ত করতে হবে। যারা কনফিউশনে আছেন তারা নিচের দু’টো বিষয় মাথায় রেখে চোখ বন্ধ করে ইউটিউবিং চালিয়ে যেতে পারেন।
কোনো ক্রিয়েটর যদি একজন প্রকৃত ব্যক্তির ভয়েসের একটি সিন্থেটিক সংস্করণ ব্যবহার করে অন্য ব্যাক্তির ভিডিওতে পুশ করেন তাহলে অবশ্যই সে রিলেটেড নির্দিষ্ট লেবেল ভিডিও এড করতে হবে।
আর কোন লেবেল এড করতে হবে তা বাছাই করার সুবির্ধার্থে ইউটিউব কতৃপক্ষ স্ক্রিনে বেশকিছু অপশন শো করাবে। যা থেকে আপনাকে ভয়েস রিলেটেড এআই ডিটেক্টেড লেভেল এড করতে হবে।
এই এআইয়ের যুগে এসে অনেকেই একজনের ফেইসে অন্যজনের ফেইস লাগিয়ে ভিডিও এডিট করে থাকেন। ভবিষ্যতে এই ধরণের ভিডিও দ্রুত গুজব ছড়াতে পারে এমন আশংকায় ইউটিউব কতৃপক্ষ এই ধরণের ভিডিও কন্টেন্টও লেবেল এড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কতৃপক্ষ বলছে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী খুব দ্রুত মোবাইল অ্যাপ থেকে শুরু করে ডেস্কটপ এবং টিভিতে এই লেবেলগুলি শো করানো হবে। বিশেষ করে সংবাদ, নির্বাচন, অর্থ এবং স্বাস্থ্য রিলেটেড প্লে লিষ্টে খুব জোরেসোরে এড করা হবে এসব নির্দিষ্ট লেবেল।
এবার আসি এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের নতুন নিয়মগুলি কাদের উপর প্রয়োগ করা হবে না সে ব্যাপারে। বিশেষ করে যারা ভিডিও তৈরি করার সময় স্ক্রিপ্ট তৈরি করা, ভিডিওর জন্য ধারনা নিয়ে আসা বা অটো ক্যাপশন তৈরি করার মতো সিস্টেমগুলিতে সাহায্য করার জন্য যদি শুধুমাত্র জেনারেটিভ AI ব্যবহার করে থাকেন তাদের এই লেবেল এডের কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
অর্থ্যাৎ আপনি কোনো লেবেল এড করা ছাড়াই এআইয়ের সাহায্য ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি যদি এআইয়ের সাহায্যে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করেন বা ভিডিওতে কালার পরিবর্তন করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে এআই লেবেল এড করতে হবে না।
তবে পুরোপুরি অবাস্তব কিংবা পরিবর্তিত ভিডিওর ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। সোজা বাংলায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলি নিশ্চিত হলে ভিডিও আপলোডের সময় এআই লেবেল যোগ করতে হবে না:
এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের নতুন নিয়ম নিয়ে তো অনেক কথা হলো। যারা এখনো ইউটিউবিং শুরু করেননি আশা করি উপরোক্ত টিপসগুলি তাদের এডভান্স হতে সাহায্য করবে।
এর পাশাপাশি চলুন তবে আলোচনার এই অংশে নতুনদের উদ্দেশ্যে ইউটিউবে Ai দিয়ে ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করার একটি ফুল গাইডলাইন দেওয়া যাক। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকলে আশা করি বুঝতে পারবেন আপনার করণীয়গুলি কি কি।
আপনি নতুন কিংবা পুরাতন যে ক্যাটাগরি ক্রিয়েটরই হোন না কেনো, অবশ্যই আপনি চাইলে এআই ব্যবহার করে ভিডিওর নিশ খুঁজে বের করতে পারেন।
শুধু তাই না! এই কাজে এআই আপনাকে শতভাগ নির্ভুল রেজাল্ট দিতে পারবে। Google Trends-এর মতো টুলস ব্যবহারের পাশাপাশি টপিক বা নিশ আইডিয়া পেতে সাহায্য নিতে পারেন চ্যাটজিপিটির।
নতুন অবস্থায় অনেকেই বুঝতে পারে না ভিডিও কোন অংশে কোন ক্লিপ দেওয়া উচিত, কি ধরণের স্ক্রিপ্ট দেওয়া উচিত কিংবা কোন ভয়েস এফেক্ট কোথায় পার্ফেক্ট। এক্ষেত্রে সরাসরি চ্যাটজিপিটিকে ভিডিও টপিক বুঝিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। এতে করে আপনি পাবেন:
টপিক সিলেক্ট করা এবং স্ক্রিপ্টসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টস জোগাড় করা তো শেষ। এবারে যা করতে হবে তা হলো ভিডিও এডিট। এক্ষেত্রে ক্যাপকাট ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাপকাটে আজকাল বিভিন্ন ফ্রি এআই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষ করে স্টক ভিডিওকে ইচ্ছেমতো এডিট করা, স্টক ইমেজ থেকে ইমেজ ইউজ করা এবং অটো ক্যাপশন ইউজ করার মতো দারুণসব এআই হ্যাকস আপনাকে প্রফেশনাল ভিডিও তৈরিতে ম্যাজিকের মতো সাহায্য করবে।
বর্তমানের এআই অ্যানালিটিক্স টুলসগুলি কিন্তু ক্রিয়েটরদের মারাত্মক লেভেলের সাহায্য করছে। এক্ষেত্রে কন্টেন্ট প্ল্যানিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন zeitgeist এআই টুলস। যা আপনাকে মোটামুটি কিওয়ার্ডসহ পুরো কন্টেন্ট প্ল্যানিংয়ের চমৎকার ধারণা দিয়ে দেবে।
অন্যদিকে ট্রেন্ড ট্রেক করতে এবং এডভান্স লেভেলের ইউটিউবিং করতে ব্যবহার করতে পারেন TubeBuddy। বলে রাখা ভালো এটি হলো এমন একটি এআই টুলস যা YouTube চ্যানেল পরিচালনা ও অপ্টিমাইজ করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
আশা করি আজকের উল্লেখিত এআই ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের নতুন নিয়মগুলি মেনে চললে মনিটাইজেশন পেতে আর কোনো বাঁধা থাকবে না।
পাশাপাশি এআইকে ব্যবহার করতে জানলে দ্রুত ভালো পরিমাণের অডিয়েন্স তৈরি করাটা অনেক সহজ হয়ে উঠবে। সুতরাং চ্যানেলের যত্ন নিন। অডিয়েন্সদের ভালো ভালো কন্টেন্ট উপহার দিন। হ্যাপি ইউটিউবিং।