টাকার কাছে হেরে যায় মায়া, মমতা, ভালোবাসা এবং সম্পর্ক

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

প্রবাস জীবন আসলে সাধারন কোনো জীবন নয়। এটা বিভিন্ন দিক থেকে অসাধারন। অসাধারন মানেই যে সবসময় সুন্দর হবে তা কিন্তু নয়। অসাধারন রূপক অর্থে এখানে আলাদা এক বিচ্ছিন্ন জীবন।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ বিদেশে পাড়ি জমায়। দেশে রেখে যায় মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশিসহ আরও কত জনকে।

যখন কেউ প্রবাসে পাড়ি জমায় তখন তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যায়। এই অনুভূতি হয়তো শুরুতেই হয়না কিন্তু যখন তারা প্রবাসে একাকী জীবন পার করে তখন তা বারংবার মনে হয়। প্রবাস জীবন মানেই নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ।

রোগ শোক হলে কেউ তেমন দেখার মতো থাকে না। মা যেমন হাত বুলিয়ে দেয়, কিছুক্ষন পর পর জিজ্ঞেস করে খোকা তোর অবস্থা কেমন – এমন করে আর কেউ বলে না।

আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না, ৯০% প্রবাসী দেশে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু তারা এ কথা কাউকে বলতে পারে না। তার কারণ হলো, অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়েছে। এখন টাকা ইনকাম না করে দেশে এলে চলবে কি করে?

আরো পড়ুন  প্রবাস জীবন কতোটা কষ্টের এই গল্পে বুঝবেন

প্রবাসে যারা থাকে তারা সবাই কোনো না কোনো কাজের সাথে জড়িত থাকে। সেখানে খুব হিসেব করে কাজ করতে হয়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কাজে ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর অনেকেই অনেক ঝুকিপূর্ণ কাজ করে। অনেক সময় বিভিন্ন দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে অনেকেই মারা যায়।

তখন তার বুকে এক বুক কষ্ট ছাড়া আর কিছুই থাকে না। পরিবার অনেক সময় লাশটা পর্যন্ত পায় না। আবার, সেখানেও সন্ত্রাসী রয়েছে। হামলা করে সব লুট করে নিয়ে যায়। বিশেষ করে, আফ্রিকায় মাঝে-মধ্যেই এমন ঘটনা শোনা যায়।

আফ্রিকায় বাংলাদেশ থেকে যারা গিয়েছে তাদের বেশিরভাগই সেখানে ব্যবসা করে। তাদের সাথেই এমন ঘটনা সেখানে প্রায়ই ঘটে।

জীবনটাই হলো মাত্র ৬০ বছর। সেখানে বিদেশে অনেকেই ১০ থেকে ২০ বছর কাটিয়ে দেয়। এই ১০ থেকে ২০ টা বছর ব্যক্তি তার সমাজ, পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে এক আলাদা মানুষে পরিণত হয়ে যায়। তার মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসাগুলো পরিবর্তন হয়ে যায়।

প্রবাস জীবন থেকে ফিরে এসে অনেকেই খুব সুখে শান্তিতে দেশে বাস করে। কিন্তু যাদের কপালে কষ্ট থাকে তারা দেশে এসেও কষ্টই ভোগ করে।

বিদেশ থেকে উপার্জন করে সেই টাকা দেশে পাঠানো হলে পরিবারের মানুষ তা ভোগ করে। কিছু কিছু পরিবার দূর প্রবাসে থাকা ঐ মানুষটার কোনো খোঁজই নেয় না। আবার, নিজের স্ত্রীও অনেক সময় সব কিছু নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

যদিও এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিন্তু যাদের সাথে ঘটে তারা কিভাবে বেঁচে থাকে সেটাই আসল প্রশ্ন। প্রবাস জীবন কখনোই সুখের হয় না। এটা মুখে যে ব্যক্তিই বলুক না কেন, সে অভিনয় করে এ কথা বলে।

দেশের মধ্যেই যারা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে রাজধানী শহরে এসে কোনো চাকরি করে তারা কতোটা ভালো থাকে তাদের জিজ্ঞেস করলেই পাবেন। সবাই বলবে, যদি এই চাকরিটা বা এই পরিমান টাকাটা আমি গ্রামে থেকেই ইনকাম করতে পারতাম।

নিজের গ্রাম, নিজের পরিবার আর প্রিয়জন ছাড়া বাইরে থেকে কতোটা যে ভালো থাকা যায় তা যারা বাইরে থাকে তারা ভালো করেই জানে।

প্রবাস জীবন সহজে কেউ গ্রহণ করতে চায় না। কেউ মায়ায় পরে যায়, কেউ আবার পরিবারের চাপে যায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে প্রবাস জীবন একজন মানুষকে তিলে তিলে চুরমার করে দেয়।

প্রবাসে গিয়ে কেউ মরে যায় না কিন্তু এক বুক কষ্ট নিয়ে থাকে। এই কষ্ট যদি দেশের পরিবার-পরিজন, আপনজনগুলো বুঝতো তাহলে তাদের পাঠানো টাকা কখনোই অপচয় করতো না, নিজেরা ভোগ বিলাশী করে জীবন-যাপন করতো না।

একজন প্রবাসীই জানে তার মনের বেদনা। না পারে কাউকে বলতে, না পারে মন চাইলেই চলে আসতে। সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে পরিবার আর প্রিয় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোঁটানোই প্রবাসীদের মূল কাজ। ভালো থাকুক সকল প্রবাসী ভাই ও বোনেরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ