রোজা শুধু ইবাদত নয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের এক অনন্য উপায়। আপনি কি জানেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন রোজাকে স্বাস্থ্যগত সুবিধার এক মহৌষধ হিসেবে দেখছে? ব্যাপারটা বুঝতে হলে জানতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কে। সুতরাং বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন৷
ওজন কমানোর চমৎকার উপায়
যারা ভাবছেন রোজা রাখলেই তো দুর্বল হয়ে যাবে তাদের বলে রাখি রোজা আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে আপনাকে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে। The American Journal of Clinical Nutrition এর এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, রোজা রাখলে ৩-৮% পর্যন্ত ওজন কমতে পারে মাত্র ৩-৪ সপ্তাহে।
তাছাড়া রোজার সময় ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। যার কারণে শরীর জমে থাকা ফ্যাটকে শক্তিতে রূপান্তর করে এই রোজা। শুধু কি তাই? intermittent fasting বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওজন কমানোর ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। আর এই ফাস্টিং সিস্টেম কিন্তু হুবহু রোজার মতো। তাই, যদি আপনি ডায়েট চার্ট দেখে ক্লান্ত হয়ে থাকেন তাহলে একটিবার ইসলামিক ‘ডায়েট প্ল্যান’ মানে রোজা ট্রাই করে দেখুন!
মস্তিষ্কের জন্য রহমত
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা হিসাবে মস্তিষ্কের জন্য এর উপকারিতা সম্পর্কেও না বললে নয়। রোজা শুধু শরীরের জন্যই নয়। বরং এই রোজা আপনার মস্তিষ্কের জন্যও অসাধারণ উপকারী!
গবেষণা বলছে, রোজা রাখলে ব্রেইন-ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর বা BDNF বাড়ে। যা আমাদের মস্তিষ্কের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। পাশাপাশি আমাদের দেহের আলঝেইমার ও পারকিনসনের মতো রোগকেও প্রতিরোধ করে এই ফ্যাক্টর।
অন্যদিকে, বেশি খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক প্রায়ই ‘ফুড কমা’-তে চলে যায়। অর্থাৎ আমাদের ব্রেইন অলস হয়ে পড়ে। তাই, কাজের ফোকাস বাড়াতে চাইলে টানা ১ মাসে কোনো রোজাই মিস করবেন না। দেখবেন মস্তিষ্ক আগের চাইতে অনেক সচল হয়ে গেছে।
শরীরের ডিটক্স
ফ্রি অফ কস্টে আপনি যদি বেস্ট Ultimate Detox Plan চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে রোজা রাখা শুরু করে দিতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা হিসাবে এই পয়েন্টই কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যারা ডিটক্স ড্রিংকস কেনেন, তারা কিন্তু রোজা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।
কারণ আমরা সবাই জানি, খাবার খাওয়া বন্ধ থাকলে, শরীর তার জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়। ফলে কোষগুলো নতুন করে রিজেনারেট হয় এবং এতে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে!
এদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৬ ঘণ্টার রোজা আমাদের দেহে অটোফ্যাজি প্রক্রিয়া চালু করে। যা আমাদের জন্যে একেবারেই বেস্ট ডিটক্স সিস্টেম।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
আপনি কি জানেন, রোজা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩০-৪০% কমে যায়?
হ্যাঁ! এমনটাই হয়! কারণ রোজা রাখলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে। পাশাপাশি এতে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যায়। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা হতে পারে বেস্ট ন্যাচারাল ট্রিটম্যান্ট। তবে হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
হার্ট রাখে সুস্থ
গবেষণা বলছে রোজা রাখলে আমাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
Journal of Nutrition and Metabolism এর এক গবেষণা রেজাল্ট থেকে জানা যায় রোজা রাখার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৫% কমে যেতে পারে! সুতরাং বুঝতেই পারছেন, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে রোজা ঠিক কতটা উপকারি!
বয়স কমিয়ে তরুণ রাখে
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা হিসাবে বলা আছে রোজা রাখলে শরীরে গ্রোথ হরমোন বেড়ে যায়। আর এই গ্রোথ হরমোন আমাদের দেহের বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে! গবেষণা বলছে, ৪৮ ঘণ্টার রোজায় গ্রোথ হরমোন ৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়! সুতরাং যারা চিরযৌবন ধরে রাখতে চান, তারা দামি অ্যান্টি-এজিং ক্রিমের বদলে রোজাকে বেছে নিতে পারেন!
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করাও চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা লিস্টের একটি পয়েন্ট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোজার সময় শরীরের কোষগুলো অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। শুধু কি তাই? রোজা রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কমে যায়।
ইতি কথা
মনে রাখবেন রোজা শুধু একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়! বরং এটি এক বিশুদ্ধ স্বাস্থ্য পদ্ধতি! আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ যা আবিষ্কার করছে, ইসলাম তা ১৪০০ বছর আগেই বলে দিয়েছে! সুতরাং আজ থেকেই ইসলামের সহজ অথচ বৈজ্ঞানিক এই নিয়ম মেনে সুস্থ জীবন উপভোগ করুন।