হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে কেমন ছিলো দুনিয়া?

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
হযরত আদম (আঃ)

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে কেমন ছিলো দুনিয়া? কিংবা কখনো পৃথিবীর অতীত সম্পর্কে জানার আগ্রহ জেগেছে? 

 

চলুন তবে আজ জেনে নেওয়া যাক হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগেকার সেই দুনিয়া সম্পর্কে। দেখা যাক ঠিক কতটা ইন্টারেস্টিং ছিলো সে-সময়টা! 

 

শুরুতেই বলে রাখি আদম (আঃ) এর সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে কারা বাস করতো সে-সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে কোরান বা সুন্নাহ এর কোনো রেফারেন্স নেই। 

 

তবে আমাদের আজকের শেয়ার করা সকল তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সাহাবা (সাহাবী), তাবেয়ীনদের (উত্তরাধিকারীদের) এবং মুফাসসিরীনদের (কুরআনের তাফসীরকারদের) বিভিন্ন তথ্যের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। 

 

ধারণা করা হয় শুরুতেই পৃথিবীতে কেবলমাত্র জ্বীনদের বসতি ছিলো। মূলত এসব জ্বীনদের আল্লাহ তায়ালা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন! বলে রাখা ভালো মুফাসসিরীনদের কাছ থেকেই ঠিক এমনটা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। 

 

এক্ষেত্রে আত-তাবারী তার তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “পৃথিবীতে সর্বপ্রথম বসবাসকারী ছিলো জ্বীনরা এবং তারা একে-অপরের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে মারামারি করতে করতে একে-অন্যকে হত্যা করেছিলো!” 

 

এছাড়াও আর-রাবী ইবনে আনাস বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বুধবারে সৃষ্টি করেছেন, আর জ্বীনদের বৃহস্পতিবার সৃষ্টি করেছেন এবং সবশেষে আদমকে শুক্রবারে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীতে কিছু জ্বীন কাফের হয়ে গেলে ফেরেশতারা তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে এবং পৃথিবীতে রক্তপাত ও ফাসাদ দেখা দেয়।” 

 

এইতো গেলো প্রথম মত! এবার চলুন হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে পৃথিবীর পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো একটি ভিন্ন মত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

 

২য় মতটিতে ধারণা করা হয় আদম (আঃ) এর সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে জ্বীন বা অন্য কেউ ছিলো না। 

 

আত-তাবারী এর তাফসীরে আবদ আর-রহমান ইবনে যায়দ থেকে জানা যায়, (মহান আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বললেন, “আমি পৃথিবীতে একটি প্রাণী সৃষ্টি করতে চাই এবং তাকে সেখানকার খলিফা বানাতে চাই।” সেদিন ফেরেশতা ছাড়া আল্লাহর কোনো সৃষ্টি ছিলো না এবং পৃথিবীতে কোনো প্রাণী ছিলো না।)

 

তবে বিভিন্ন রেফারেন্স ঘাঁটাঘাঁটি করে জানা যায়, আল্লাহ পাক শুরুতেই আলো এবং অন্ধকার সৃষ্টি করেন। ইবনে জরির মুহাম্মদ বিন ইসহাক বর্ণিত তথ্য অনুসারে এমনটাই জানা যায়। 

 

যদিও কেউ কেউ বলেন আল্লাহ তায়ালা কালামের পর কুরসিকে সৃষ্টি করেছেন। কুরসির পর আরশ, এরপর মহাশূন্য ও আঁধার। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে পানি সৃষ্টি করেন। 

 

হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহঃ) এর প্রসিদ্ধ কিতাব সিররুল আসরারে হাদীসে কুদসী নকল থেকে জানা যায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি সর্বপ্রথম নূর দ্বারা মুহাম্মদ (সাঃ) রুহ সৃষ্টি করেছি”।

 

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে পৃথিবীকে সাজানোর আগে আল্লাহ তায়ালা তার নূর দ্বারা প্রিয় হাবীব রাসুলুল্লাহকেই সাঃ সৃষ্টি করেছেন! 

 

এছাড়াও সূরা হা-মিম সিজদার নবম ও দশম আয়াত লক্ষ্য করলেই দেখবেন, এতে হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে পৃথিবীর সৃষ্টির গল্পটি সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে! এ-থেকে জানা যায়, রবি ও সোমবার এই দুই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

সবকিছু মিলিয়ে হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে পৃথিবীর পরিস্থিতি কিংবা সৃষ্টির গল্পটা ঠিক এমন…! 

 

মূলত আদমকে আঃ সৃষ্টির প্রায় ২০০০ বছর আগে পৃথিবীতে জ্বীনদের পাঠানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন ফিতনা- ফাসাদের কারণে আল্লাহ তায়ালা সে-সময় এই জ্বীন জাতির উপর ক্ষেপে যান।

 

এরপর একটা সময়ে এসে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে ফেরেশতাদের এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। এ-সময় ফেরেশতারা জ্বীনদের মেরে বন-জঙ্গলে এবং সমুদ্রে তাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালার হুকুম মতে একটা সময়ে এসে পৃথিবীতে পাঠানো হয় প্রথম সৃষ্টি হওয়া মানুষ এবং নবী হযরত আদমকে আঃ! 

 

মূলত হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির আগে পৃথিবীর পরিস্থিতি ঠিক এমনটাই ছিলো! তো ভিউয়ার্স, আমাদের আজকের এই আয়োজনটি কেমন লাগলো আপনার? জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! আর হ্যাঁ! লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও কার্পণ্য না করবার অনুরোধ রইলো! 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ