বিয়ের অভিনয় করে দীর্ঘদিন একসাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস ও শারীরিক মেলামেশা করেন। তিন বছর পর জানা গেল তারা আসলে স্বামী ও স্ত্রী না। তাদের বিয়ে হয়নি। এমন প্রতারণার অভিযোগে জহুরুল হক (৩৫) নামে এক সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর ২নং আমলি আদালতে মামলা করেছেন এক বিধবা নারী।
আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামি জহুরুল হক রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার লাহিড়ী রঘুনাথপুর গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে।
আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদীর স্বামী ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তার একটি পুত্রসন্তান আছে। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে। কুষ্টিয়া জজ আদালতে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়ানি মামলা থাকায় তিনি সেখানে আসা-যাওয়া করতেন। সেখানে আসা-যাওয়ার ফলে কুষ্টিয়া জজকোর্টে জহরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। জহুরুল ওই জজকোর্টে এমএলএসএস পদে চাকরি করেন।
ওই সময় জহুরুল ওই নারীকে জানান, তিনি অবিবাহিত এবং তাকে বিয়ে করবেন। তিনি ওই নারীকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে বিয়ের কথা বললে তিনি রাজি হন। তার কথামতো ২০২০ সালে কুষ্টিয়ার হাউজিংয়ে কদমতলা নামক স্থানে একটি চারতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় যান ওই নারী। সেখানে জহুরুল কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তির সামনে তাকে বলেন ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে তিনি তাকে বিয়ে করলেন। ওই সময় একটি নীল কাগজে ওই নারীর স্বাক্ষর নেন। এরপর থেকে তিনি তাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার ও বিশ্বাস করে কুষ্টিয়ার হাউজিং কদমতলা নামক স্থানে একটি বিল্ডিংয়ে মাঝে-মধ্যেই যাওয়া আসা করতেন এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা করতেন।
পরবর্তীতে ২০২১ সালে পাংশার নারায়ণপুরে একটি ক্লিনিকে চাকরি হলে তিনি পাংশায় চলে আসেন। পাংশায় আসার পর তিনি ও জহুরুল একটি বাসা ভাড়া নেন এবং সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন। তবে তিনি তার কাছে কাবিননামা চাইলে জহুরুল বিভিন্ন টালবাহানা করতেন। এ বিষয়ে উভয় পরিবারের লোকজন অবগত আছেন এবং ওই নারী জহুরুলের বাড়িতেও আসা-যাওয়া করতেন।
গত ৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে বাদীর ভাড়া বাসায় জহুরুল আসেন এবং রাতযাপনকালে তিনি তার কাছে কাবিননামার জন্য চাপ দেন। পরদিন সকালে জহুরুল প্রকাশ করেন তাকে বিয়ে করেননি। বিয়ের অভিনয় করে তার সঙ্গে অবৈধভাবে মেলামেশা করেছেন। ‘তুই কিছুই করতে পারবি না’ বলে জহুরুল সেখান থেকে চলে যান।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ওই নারী জমি বিক্রি করে সরল বিশ্বাসে জহরুল হককে ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকাও তাকে ফেরত দেননি।
মামলার বাদী ওই নারী জানান, আপনাদের মতো আমিও এক সময় ঢাকার সাপ্তাহিক আজকের সূত্রপাত নামের একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছি। আমি এ বিচারের কাজে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জহুরুল হক বলেন, একটা মামলার বিষয়ে ওই মহিলার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি তার কাছে অনেক টাকা পাই, সে টাকা না দিয়ে আমার সঙ্গে উল্টো প্রতারণা করার চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধে আমিও অভিযোগ দিয়েছি বলে জানান তিনি।