কাজের জন্য যারা বাংলাদেশে থেকে প্রবাসে যেতে চান, অথবা প্রবাস থেকে কোন কারনে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য, সরকারি ব্যাংকগুলোর সহায়তা নিতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রবাসীদের সহায়তায় প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষকে ঋণ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যারা কাজের তাগিদে প্রবাসে যেতে চান, কিন্তু আর্থিক সমস্যা রয়েছে, আর্থিক সংগতির অভাব রয়েছে, তারা কোনরকম জামানত ছাড়াই প্রবাসী কল্যণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
তাছাড়া বিদেশ ফিরত প্রবাসীদের কল্যাণে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ব্যাংক নামের আরেকটি ব্যাংক চালু হয়। যেখান থেকেই দেশে ফিরে আসা প্রবাসীরা ঋণ নিয়ে নিজেদের কর্ম উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারেন।
প্রবাসীদের সহায়তায় রয়েছে যেসব ঋণ সুবিধা
প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূলত চারটি স্কিম রয়েছে। এমনটি জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন।
স্কিম গুলো হলো মাইগ্রেশন বা অভিবাসন ঋণ, পুনর্বাসন ঋণ, বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ, বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ।
এই স্কিম গুলোর আওতায় কোন প্রকার জামানত ছাড়াই প্রবাসে গমন করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তি অন্তত পক্ষে দুই বছর মেয়াদে অর্থ সহায়তা নিতে পারবেন। এবং তিনি তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন।
এবং পরবর্তীতে বিদেশ গিয়ে কাজ করে এই ঋণ এর টাকা পরিশোধ করা যাবে ।
জামানত ছাড়া লোন দাতা ব্যাংক সমূহঃ
৫. এন আর বি গ্লোবাল ব্যাংক
৯ থেকে ১০ % সুদে এই ৫ টি ব্যাংক লোন দিচ্ছে। শুধু মাত্র বৈধ ভাবে যারা চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে আগ্রহী তাদের জন্য । আপনি আড়াই থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। তাছাড়া লোন পরিশোধের মেয়াদ থাকবে ১ থেকে তিন বছর পর্যন্ত। তবে ভিসা নিশ্চিন্ত হওয়ার পরই আপনি লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন ।
জামানত ছাড়া লোন -সোনালী ব্যাংক-
প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প নামে বিদেশীদের জন্য এ ঋণ প্রকল্প চালু করেছে সোনালী ব্যাংক। নিয়মানুযায়ী ভাবে অনধিক ৩ লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন সোনালী ব্যাংকের এ প্রকল্পটির মাধ্যমে। তবে অবশ্যই ঋণ নেওয়ার পর দুই অথবা তিন বছরের মধ্যে ২৪ থেকে ৩৬টি কিস্তিতে ঋন পরিশোধ করতে হবে। আপনাকে প্রথম তিন মাস কোন কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। এ প্রকল্পের ঋণের জন্য আপনাকে পরিশোধ করতে শতকরা ১২% সুদ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন:
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক বিদেশীদের জন্য জামানত ব্যতিত যে ঋণ প্রকল্পটি প্রদান করে থাক, তা হলো অভিবাসন ঋণ প্রকল্প। এ ঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণ পেতে হলে শতকরা ৯% হারে আপনাকে সুদ প্রদান করতে হবে। এ প্রকল্পে বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের মেয়াদও ভিন্ন। যেমন- আপনি যদি সিঙ্গাপুর যেতে চান তবে আপনার লোন পরিশোধের মেয়াদ হবে প্রতি মাসে এক বছর। যার কিস্তি প্রদান করতে প্রতি মাসে এবং মাসিক কিস্তি হিসাবে। তাছাড়া যদি অন্য কোন দেশে যেতে চান তবে তা ২২টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। লোটির বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এই লোনটি আপনি পাওয়ার পর প্রথম দুই মাস কোন প্রকার কিস্তি প্রদান করতে হবে না।
অগ্রণী ব্যাংক:
অগ্রণী ব্যাংক বিদেশীদের জন্য লোনের যে সুযোগ রেখেছে সেই প্রকল্পটির নাম হচ্ছে প্রবাসী ঋণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় অগ্রণী ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ হাজার থেকে অনধিক ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা। তবে আপনার বয়সসীমা অবশ্যই হতে হবে ১৮-৪৫ বৎসর বয়সের মধ্যে এবং অবশ্যই আপনাকে বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। এ লোন প্রকল্পটির মধ্যে কিস্তি ১৫-১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক:
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক কর্তৃক এ প্রকল্পটির নাম হলো এনআরবি মাইগ্রেশন লোন। অনধিক ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন এ ঋণ প্রকল্পের আওতায়। ১/২/৩ বছরে শতকরা ১৪% হারে এই লোন পরিশোধ করতে হবে।তাছাড়া প্রথম ৩ মাস আপনাকে কোন প্রকার কিস্তি প্রদান করতে হবে না। এই লোন প্রাপ্যতার জন্য বয়সসীমা হতে হবে ১৮-৫৫ বছর। এবং অবশ্যই বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে হবে।
পূবালী ব্যাংক:
পূবালী ব্যাংক কর্তৃক বিদেশগামীদের জন্য এই ঋণ প্রকল্পটির নাম নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্কিম। ৫০ হাজার হতে আড়াই লক্ষ টাকা লোন দিবে পূবালী ব্যাংক। ২৪টি কিস্তিতে ১৩% সুদে সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য এ লোন প্রদান করা হবে। কোন প্রকার জামানত ছাড়াই এ ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে এবং প্রথম ২ মাস কোন কিস্তি দিতে হবে না।
পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহায়তা
বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে রয়েছে পুনর্বাসন প্রকল্প।
কৃষি ঋণ, মুরগীর খামার, মৎস্য চাষ, বায়োগ্যাস প্লান্ট, সৌর জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, নারী উদ্যোক্তা ইত্যাদি খাতে পুনর্বাসনের জন্য ঋণ পাওয়া যায়।
তবে এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি বিদেশ থেকে দেশে চলে এসেছেন।এবং তার বৈধ কাগজপত্র, ট্রাভেল ডকুমেন্ট থাকতে হবে। এই ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে বিদেশ থেকে আসার পাঁচ বছরের মধ্যে।
তাছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কাজের সংকটে যারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ চালু করেছে সরকার। এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সেটিও পাওয়া যাবে।
দুইশ কোটি টাকার তহবিলের এখন পর্যন্ত অর্ধেকের কম বিতরণ হয়েছে। চার শতাংশ সুদে বিদেশ থেকে ফিরে আসা কর্মীরা এই ঋণ নিয়ে দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগ নিতে পারেন।
সেই সঙ্গে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা ‘বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ’ থেকে ঋণ নিয়ে আর্থিক ক্ষতি বা ধকল কাটাতে চেষ্টা করতে পারেন। এক্ষেত্রে যেসব খাতে ঋণ দেওয়া হবে, সেগুলো হলো মৎস্য, প্রাণী, কুটির শিল্প ইত্যাদি খাতসমুহ। আর এক্ষেত্রে কোন জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। কিন্তু কেউ যদি দুই লাখের বেশি নেয় তবে তাহলে জামানত লাগবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশে যাওয়ার পরে যারা ঋণ নিয়েছেন, তাদের স্বজনদের কাছে টাকা পাঠান সেখান থেকেই ঋণের অর্থ পরিশোধ হয়ে যায়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এই পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৩১৬ জনকে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এবং তার মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করায় তফসিলভুক্ত করতে হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজারের কিছু বেশি ঋণ গ্রহীতা ব্যাক্তিকে।
এর বাইরে বিদেশ থেকে আসার পর বেকার প্রবাসীরা কর্মসংস্থান ব্যাংকের সহায়তাও নিতে পারেন। সেখান থেকে ব্যবসা, কৃষি, কুটির শিল্প, ইত্যাদি খাতে কর্মসংস্থানের লক্ষে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়।
আবেদন করার জন্য যা যা প্রয়োজন:
প্রথমে ব্যাংকের যে নির্ধারিত ফর্ম রয়েছে তা সঠিক ভাবে পূরণ করে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। যা যা প্রয়োজন:
এরপর ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হবে। আর বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে ওই হিসাবের মাধ্যমে।
এবং সেই সঙ্গে বিদেশের কাজের বিবরণ, ভিসা, এজেন্সির প্রত্যয়ন পত্র, বিমান টিকেটসহ ইত্যাদি যাবতীয় সকল কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ব্রুনাই, কাতার, ইতালি, ইউরোপের জন্য নয় শতাংশ সুদে দুই বছরের জন্য ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ঋণ শোধ করতে হবে এক বছরের মধ্যে।
লোনের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন:
উপরে উল্লেখিত সকল কাগজপত্রাদি নিয়ে ব্যাংকের লোন সেকশনে যোগাযোগ করতে হবে । পরবর্তী সকল কার্যক্রম ব্যাংক কর্তৃপক্ষই সম্পূর্ণ করবেন।