প্রবাসী মারা গেলে যা করবেন
প্রবাসজীবনের সবচেয়ে কষ্টের কিংবক একাকীত্বের মুহুর্ত হলো মৃত্যু। মৃত্যুর সময় প্রবাসজীবনে কারো উপস্থিতি তো দূরে থাক স্বান্তনার বাণীটুকুও পাওয়া যায় না। অতঃপর জীবন পাখি উড়ে গেলে যুদ্ধরত লাশকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে পড়তে হয় আরেক ঝামেলায়। ফেইস করতে হয় নানান ধরণের নিয়মকানুন। চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক প্রবাসী মারা গেলে করণীয়গুলি কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে।
শুরুতেই বলে রাখি, বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সরকার বাড়তি একটি সুবিধা প্রদান করছে। সেটি হলো সরকার নিজ থেকেই পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে সরকারি অনুদান দিচ্ছে মৃত প্রবাসীর পরিবারকে।
এক্ষেত্রে পূর্ব হতেই মৃত ব্যাক্তিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি (ডেমো) অফিসে ইমেইল কিংবা শরীরে উপস্থিত থেকে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রবাসীরা যে দেশে মৃত্যুবরণ করে সেদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশে লাশ পাঠানো হয়ে থাকে। এই ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্বজনদের ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদানের মাধ্যমে মৃতের পরিবহন এবং দাফনের খরচ মেটাতে সাহায্য করা হয়।
এই টাকাটুকু মৃত কর্মীর লিগ্যাল অভিভাবকদের নিকট পাঠানো হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে এই টাকাটাটুকু পেতে হলে অভিভাবকদের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র, পরিবারের সদস্য সনদপত্রের নমুনা এবং লাশ পরিবহন ও দাফন খরচের অর্থ গ্রহণের জন্য ক্ষমতা অর্পণপত্র নামক ডকুমেন্টসগুলি শো করাতে হবে।
বর্তমানে মৃতের পরিবার আর্থিক সহায়তা হিসাবে সরকারের পক্ষ হতে পাচ্ছে ৩ লক্ষ টাকা। আর এই অর্থ প্রদানের নিয়ম বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হয়েছে সেই ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তারিখ থেকে।
নিরাপত্তার বিষয়টুকু বিবেচনা করে এই অর্থ পেতে হলে মৃতের পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের কাছ থেকে দাফতরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদের ব্যবস্থা করতে হবে।
কারণ এই ৩ লক্ষ টাকা অনুদান লাভের ক্ষেত্রে উক্ত সনদপত্র বেশ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
পাশাপাশি কতৃপক্ষের কাছে শো করতে হবে চারশ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি, যিনি টাকা গ্রহণ করবেন তার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদের (ডেথ সার্টিফিকেট) সত্যায়িত ফটোকপি।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আন্ডারে সাধারণত এই ধরণের সুবিধাদি প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিসে। এছাড়াও একই সার্ভিস পেতে যোগাযোগ করতে পারেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে।
আর হ্যাঁ! কোনো প্রশ্ন থাকলে সরাসরি ০১৯৭১৪৩০২০৩ বা ৯৩৫৮৯৭৬ ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন।
যারা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিসে যোগাযোগ করতে চান তাদের বলে রাখি প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এই অফিস জনসাধারণের জন্যে খোলা থাকে।
সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য জানার থাকলে আপনাকে ফোন করতে হবে ০১৭৮৪৩৩৩৩৩৩, ০১৭৯৪৩৩৩৩৩৩, ৯৩৩৪৮৮৮ নাম্বারে এবং উক্ত তথ্যটুকু পরের মাসে ঠিকই আপনাকে প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রাপ্তির সময়টুকুর ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন। তথ্য পাবেন ঠিক পরের মাসে। সাথে সাথে নয়।
পরিশেষে বলতে চাই আপনি যদি একজন প্রবাসী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই সময় থাকতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যতা নিশ্চিত করবেন। কারণ বিপদকালের বড় সহায়ক হিসাবে কিছু পেতে চাইলে তার ব্যবস্থা খানিকটা আগেভাগেই করা চাই।
মনে রাখবেন…অনিশ্চিত মৃত্যু হয়তো ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই! তবে সঠিকরূপে নিজের যত্ন নিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার কাজটুকু আমরা ঠিকই নিশ্চিত করতে পারি। একজন প্রবাসী হিসাবে নিজের শরীরের যত্ন নিজেই নিন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়াদির প্রতি নজর রাখুন এবং যেকোনো অসুস্থতায় বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।