আসলে প্রবাসী ভাইদের কষ্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবু আমি আজকে প্রবাসী ভাইদের নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরব। আশা করি আজকের এই পোষ্ট টি প্রবাসী ভাইদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলছে। তাই প্রবাসী ভাইরা পোস্টটি গুরুত্বসহকারে সম্পূর্ণ পড়বেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
একমাত্র প্রবাসী ভাইয়েরা জানে প্রবাস জীবন কতটা কষ্টে কাটে। প্রবাসী ভাইদের জীবনে থাকে এক অপ্রকাশিত কষ্ট যা তারা কখনো সহজে প্রকাশ করতে চায় না। তারা শুধু সকলের সুখ দেখতে চায় যার কারণে নিজের দেশ ছেড়ে বাইরের দেশে পাড়ি জমান। চলুন এবার প্রবাসীদের কিছু কষ্টের স্ট্যাটাস জেনে নেয়া যাক।
> একমাত্র প্রবাসীরাই জানে সকল আপনজনকে ছেড়ে থাকা কতটা কষ্টের। আপন মানুষগুলো মনের কোণে কতটা জায়গা জুড়ে থাকে তা শুধু প্রবাসীরাই জানে।
> প্রিয় মানুষদের কাছে থেকে বোঝা যায় না আমরা তাদের কতটা ভালোবাসি। প্রবাস জীবনে আসলে বোঝা যায় প্রিয় মানুষগুলো মনের কোণে কতটা জায়গা জুড়ে ছিল।
> প্রবাস জীবন এমন একটা জীবন যেখানে আপনি চাইলেও পিতা-মাতা ভাই-বোন ও আপনার প্রিয় মানুষটির মুখ দেখতে পারবেন না। কেননা সেখানে থাকবে আপনার ডিউটির বাধা।
> প্রবাসীরা কখনো নিজের জন্য টাকা উপার্জন করে না। তাদের কষ্টার্জিত টাকার বিনিময় পরিবারের সবাই সুখে থাকে।
> নিজের প্রিয় মাতৃভূমিকে ছেড়ে যায় শুধু মাত্র পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও প্রিয় মানুষটি সুখের জন্য।
> আমাদের অধিকাংশ পরিবারের সুখের পেছনে রয়েছে প্রবাসী ভাইদের বুক ভরা কান্না ও কষ্ট। যা আপনি উপলব্ধি করতে পারেন না।
> একমাত্র প্রবাসীরাই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের জন্য পাঠায়। আর কিছুদিন পর তাকেই শুনতে হয় আমাদের জন্য কি করেছিস।
> মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রবাসীরা টাকা উপার্জন করে। কিন্তু একটা সময় সেই প্রবাসীকে ও তাদের কষ্টকে আমরা উপহাস করে থাকি।
> আমরা কখনোই প্রবাসী ভাইদের বুঝতে চায় না। তাদের কষ্টকে অনুধাবন করতে চায়না। কিন্তু তাদের কষ্ট শুধু তারাই বুঝে।
> আমি আপনি হয়তো অনুধাবন করতে পারে না কিন্তু প্রবাস জীবন হলো খুবই কষ্টের। নিজের প্রিয় মানুষটি ছেড়ে থাকাটা কতটি কষ্টের তা সেই জানে যে নিজের প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে এসেছে।
> শুধুমাত্র নিজের পরিবারের জন্য প্রবাসী ভাইয়েরা অনেক আত্মত্যাগ করে থাকে। নিজে ভালো কাপড় না পরে তারা পরিবারকে ভালো কাপড় কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে।
> ঈদের দিন পর্যন্ত প্রবাসী ভাইদের কাজ করতে হয়। এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে।
> প্রবাস জীবন মানে আরাম-আয়েশের কোন জায়গা না। প্রবাস জীবন মানে অন্যকে ভালো রাখার জন্য নিজে কষ্ট করে যাওয়া।
> যে নিজের কষ্টকে কষ্ট মনে না করে বিনা স্বার্থে কাজ করে যায় সে হল প্রবাসী।
> প্রবাসী ভাইয়েরা হল জীবন যুদ্ধে হার না মানা সৈনিক। যে সৈনিক অন্যের স্বপ্নাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের স্বপ্নকে কুরবানী করে।
> পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ মানুষের মধ্যে প্রবাসী ভাইয়েরা অন্যতম। কেননা তারা পিতা-মাতা ভাই-বোন ও-ই স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য নিজের সুখকে বিসর্জন দেয়।
> ভালোবাসা শিখতে হলে প্রবাসী ভাইদের দেখুন। তাদের ভালোবাসা নিখুঁত এবং তাদের ভালোবাসা অসীম।
> একমাত্র প্রবাসীরা নেওয়ার মানুষ না। তারা হল দেওয়ার মানুষ। তাদের কাছে কোন কিছু চাইলে তারা দিতে দেরি করেনা। এতে তাদের যত কষ্টই হোক না কেন।
> আপনার কষ্টার্জিত টাকা যদি আপনার পিতা-মাতা খেতে না পারে তবে সে টাকার কোন মূল্য নেই।
> ভাই কেউ তো বোঝেনা প্রবাসীর যন্ত্রনা। সবাই ভাবে প্রবাসীদের সুখ দুঃখটা কেউ দেখেনা। প্রবাস হলো আসল জেলখানা।
> আমরা যারা দেশে থাকি তারা চিন্তা করি বিদেশে মনে হয় অনেক সুখ এবং সেখানে টাকার গাছ আছে। আসলে কি তাই? বাস্তবতার মুখোমুখি না হলে বুঝতেই পারতাম না বাস্তবতা কতটা কঠিন।
> আমরা অনেকের কাছ থেকে শুনি প্রবাস জীবনের গল্প। সেই গল্পগুলো কি আমরা আজও বিশ্বাস করি? প্রকৃতপক্ষে আমরা বিশ্বাস করি না । কেননা আমরা বাস্তবটা দেখিনা এর কারণে আমরা পার্থক্য গুলো আলাদা করতে পারিনা।
আমি সৌদি থাকি প্রায় দুই বছর হলো। 4 লাখ টাকা খরচ করে আসলাম। বাবার বয়স হয়ে গেছে এখন আর আগের মত কাজ করতে পারে না। নিজের কাছেই খারাপ লাগে যখন শুনি বাবা এখনো কাজ করে। ক্ষমা করে দিও বাবা তোমার কষ্টটা দূর করতে পারলাম।
এই প্রবাসে না আসলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না কষ্ট কাকে বলে। হয়তোবা বুঝতে পারতাম তুমি কতটা কষ্ট করছ আমাদের মানুষ করার জন্য। সরি বাবা।
প্রবাসে আসার পর বুঝতে পারলাম টাকা ইনকাম করা কতটা কষ্ট। জীবনের মানে টা আসলে কি হয়তোবা সেটা অজানাই থেকে যেত যদি না প্রবাসে আসতাম। এখানে এসে দেখলাম মানুষ কতটা কষ্ট করে। কেননা মানুষ অল্প বেতনের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ময়লা পরিষ্কার করে তাও আবার 12 ঘন্টা কেউ আবার 15 ঘণ্টা কাজ করে।
হাজারো কষ্ট থাকা সত্বেও প্রবাসীরা কখনো থেমে থাকে না। তারা বেঁচে থাকে তাদের পরিবারের জন্য। সে জানে সে যদি থেমে যায় তাহলে পরিবারও থেমে যাবে। কারণ তার ধারায় তার পরিবার চলে। সে যদি থেমে যায় তাহলে তার পরিবার না খেয়ে থাকবে। এটাই মনে হয় দুনিয়ার এক অদ্ভুত নিয়ম।
নিজে দুই টাকা খরচ না করে কষ্টের টাকা জমিয়ে পরিবারের খরচ চালাই। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাওয়ার জন্য সিরিয়াল ধরতে হয় সেটাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না খাবার তো দূরের কথা। তবুও আমাদের কষ্ট করে যেতে হয় শুধুমাত্র পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে।
পাঁচ বছর ধরে বিদেশ এসেছে বোকা প্রবাসী। কিছুদিন পরে যাবে বাড়ি মুখে অনেক হাসি। করবে গিয়ে বিয়ে-শাদী কিনেছে সোনাদানা। স্বপ্ন এলো মনের ভেতর ষোল আনা। এমন সময় বাড়ি থেকে খবর এলো তার বাড়ির পাশের জমি দরকার। বাবা-মায়ের মনের আশা তোমার কাছে এ জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নাই।
এমন সস্তা জমিতে আর পাওয়া যাবে না যেভাবেই হোক কিনে দাওনা জমি খানা। এই কথা শুনে প্রবাসী ভাই বাড়িতে যাওয়ার সুখ ভুলে বুকভরা কষ্ট নিয়ে তার জমানো টাকাগুলো পিতার হাতে তুলে দেয় তার স্বপ্ন পূরণের জন্য। এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে। আশা গুলোকে তখন কুরবানী দিয়ে দেয়।
দিনের পর দিন প্রবাসী ভাইরা পড়ে থাকে বিদেশের মাটিতে। বাবা মা স্ত্রী সন্তানের ভালোবাসা ত্যাগ করে তারা চলে আসে প্রবাস জীবন। শুধুমাত্র তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু তারা বোঝেনা এর যন্ত্রণা কতটা কষ্ট। বুঝবে কি করে তারা তো আর প্রিয় মানুষকে ছেড়ে আলাদা থাকে না।
আসলে যারা প্রিয় মানুষটি ছেড়ে দূরে থাকে তারাই বুঝতে পারে কষ্টটা কতটা গভীর। ভারাক্রান্ত মনটা তাদের প্রিয় মানুষকে খুঁজে কিন্তু সেই চোখকে তখন খুজে নিতে হয় কাজ। মন না চাইলেও কাদের জন্য তাদেরকে বের হতে হয়।
দিন রাত মিলে প্রায় 12 থেকে 15 ঘন্টা কাজ করতে হয়। এই অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তাদের আবার রুমে ফিরে গোসল দিয়ে রান্নাবান্না করতে হয় খাওয়ার উদ্দেশ্যে। কেননা রান্না না করলে পেটে খাবার জুটবে না। এতটা কষ্ট করে তাদের দিন অতিবাহিত করতে হয়।
অনেক সময় ঈদের দিন পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয়। নামাজটা পড়ার সুযোগ পায় না। পিতা-মাতা ভাই-বোন স্ত্রি স্বজনরা নিজেদের আবদার প্রবাসী ভাইদের কাছে তুলে ধরে। তারা নিজেদের সুখ শান্তি কুরবানী দিয়ে প্রিয় মানুষদের স্বপ্নকে পূরণ করে থাকে।
কিন্তু একটা সময় তাদের অবহেলার সম্মুখীন হতে হয়। যে মানুষগুলোর জন্য সে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছে সেই মানুষগুলো একটা সময় তাকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। তার সাথে বেইমানি করে থাকে। তখন তার উপকার গুলো তাদের মনে থাকেনা। আমি সকল প্রবাসী ভাইদের জানাই আমার মনের কোণে থেকে ভালোবাসা।