প্রকৃতির এক অপার লীলাভূমি এই বাংলাদেশেই এমন একটা জায়গা রয়েছে যেখানে আপনি মেঘের ভিতরে হাঁটতে পারেন, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এক সাথে উপভোগ করতে পারেন এবং রাত হলে দেখতে পারেন তারায় ভরা আকাশ। হুম সত্যি। আর সেই জায়গাটি হলো সাজেক ভ্যালি।
অনেকেই ভাবেন সাজেকে যাওয়া অনেক ব্যয়বহুল, ঝামেলার এবং রাস্তাঘাট অনেক দুর্গম। কিন্তু রিয়েলিটি হলো ঠিকভাবে প্ল্যান করলে কিন্তু স্বল্প বাজেটেই সাজেকে ঘোরা যায়। আর তাই আমরা আজকের এই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইড-এ আপনাকে জানাবো কীভাবে সাজেক যাবেন, কোথায় থাকবেন, কত খরচ পড়বে, কী দেখবেন ইত্যাদি সম্পর্কে। সো স্টেই টিল এন্ড।
মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি অবস্থিত রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়, ভারতের মিজোরাম সীমান্তের একদম কাছে। তবে মজার বিষয় হলো, সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে, রাঙামাটি নয়।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের মুল ফোকাস হলো সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইড
আনাকে স্টেপ বাই স্টেপ জানানো। এক্ষেত্রে আপনার ট্রাভেল প্ল্যান হবে, ঢাকা টু সাজেক।
প্রথমেই আপনাকে সরাসরি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। যদি আপনি এসি বাসে আসেন, তাহলে ভাড়া লাগবে১২০০-১৪০০ টাকার মতো শ্যামলী, হানিফ এবং ঈগল পরিবহনে। সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ ঘন্টার মতো।
এরপর খাগড়াছড়ি থেকে দিঘিনালা বা বাঘাইহাট যেতে হবে। এক্ষেত্রে লোকাল বাস বা সিএনজিতে ভাড়া লাগব ৮০ থেকে ১০০ টাকার মতো এবং সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। আর দিঘিনালা বা বাঘাইহাট থেকেই আপনাকে যেতে হবে আপনার ফাইনাল ডেস্টিনেশন সাজেকে।
আমাদের সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডের এই অংশে আমরা আপনাকে জানাবো বিখ্যাত চান্দের গাড়ি সম্পর্কে। মূলত বাঘাহাট থেকে সাজেক যেতে চান্দের গাড়িই হবে আপনার একমাত্র ভরসা। যদি বন্ধুবান্ধবের সাথে যান তাহলে ভাড়া পড়বে ৫০০–৭০০ টাকা জনপ্রতি। আর সময় লাগবে ২.৫–৩ ঘণ্টার মতো। আর আর্মির চেকপোস্টে যাতে কোনো বিপাকে না পড়েন সেজন্য মাস্টবি আইডি কার্ড সঙ্গে রাখবেন।
বর্তমানে মেঘের রাজ্য সাজেক বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। সাজেকে বর্তমানে অনেকগুলো কটেজ, রিসোর্ট এবং হোমস্টে আছে। চাইলে মেঘে ঘেরা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে অপূর্ব সুন্দর রাত কাটাতে পারবেন।
সাজেক ভ্রমণে জনপ্রিয় কিছু থাকার জায়গা
সাজেকে বেশ কিছু থাকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Runmoy Resort, Megh Machang, Lushai Cottage, Jungle Inn ইত্যাদি। বাজেট অনুযায়ী আপনি পছন্দের রিসোর্টে রাত কাটাতে পারেন।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইড হিসেবে এখন আপনি জানতে পারবেন সাজেকে থাকার খরচ সম্পর্কে। এক্ষেত্রে রুম ভাড়া পড়বে ১,৫০০-২,৫০০ টাকা সাধারণ কটেজে এবং ৩,৫০০-৫,০০০ টাকা ভাল মানের রিসোর্টে।
মেঘের রাজ্যে গিয়ে যদি ট্রডিশনাল খাবার খাওয়া না যায় তাহলে তো মাজাই হলো না। আর সাজেকে লোকাল খাবারই কিন্তু বেস্ট। যেমন বাঁশের চিকেন, পাহাড়ি ডাল, চালভাজা, বাঁশ কাঁচি শাক, পাহাড়ি মরিচের আচার ইত্যাদি। সাজেকের বিখ্যাত কিছু হোটেল হলো খাবার ঘর, পাহাড়ি রান্নাঘর এবং মেঘদূত ভোজনালয়। আর এসব হোটেলেএক বেলার খাবার খরচ পড়ব ২০০-৩০০ টাকার মতো।
সাজেক মানেই শুধু মেঘের সাথে পাহাড়ের খেলা নয়। এখানে আছে সুন্দর প্রকৃতি, স্যাম্বা নাচ, আদিবাসী সংস্কৃতি আর নিরবতা। আর সাজেকের হেলিপ্যাডে গিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন ভোরে সূর্য ওঠা আর বিকেলে ডুবে যাওয়ার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডের এই অংশে আমরা আপনাকে জানাবো সাজেক ভ্যালির কিছু বিখ্যাত এবং অপূর্ব সুন্দর স্থান সম্পর্কে।
আমাদের সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডের মুল টার্হেট হলো সাজেক ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে আপনাকে একটা ক্লিয়ার আইডিয়া দেয়া।
এক্ষেত্রে ২ রাত ৩ দিন থাকার জন্য বজােট প্ল্যান হবে, বাস ভাড়া ২,৪০০ টাকা, চান্দের গাড়ি ৬০০-৭০০ টাকা, কম্বাইন হোটেল বা কটেজ ভাড়া ৮০০-১,০০০ টাকা এবং খাবার খরচ ৬০০ থেক ৭০০ টাকা জনপ্রতি।
এবং লোকাল স্পটভিজিটসহ সব মিলিয়ে মোট ৪৫০০-৫৫০০ টাকা খরচ হবে।
পাহাড়, অরণ্য আর মেঘ একত্রিত হয়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশ ধারণ কর এই সাজেকে। এ যেন এক মেঘের রাজ্য। আর তাই শহুরে পরিবেশ এবং একঘেয়েমি থেকে রেহাই পেতে আজই ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি থেকে। আশা করি আমরা আপনাকে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ একটি গাইড এবং প্ল্যান দিতে পেরেছি। শুভ হোক আপনার ভ্রমণ।