বাজেটের মধ্যে জাপান ট্যুর চান কে? প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক প্রযুক্তির এক পার্ফেক্ট কম্বিনেশন এই জাপান। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে আকর্ষণ করা এই দেশটিতে ঘোরাঘুরির স্থান নেহায়েত কম নয়৷
কম খরচে আপনিও চাইলে জাপান ঘরে আসতে পারেন৷ আর তারই অংশ হিসাবে আজ আমরা চলে এসেছি জাপানের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে একটি ফুল গাইডলাইন নিয়ে। বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন।
জাপানের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নিই জাপানে যাওয়ার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কিভাবে করবেন, কি কি কাগজ লাগবে এবং কি কি স্টেপের মধ্য দিয়ে আপনাকে সামনে আগাতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হিসাবে আপনার থাকতে হবে ৬ মাস মেয়াদবিশিষ্ট পাসপোর্ট, সম্পূর্ণ পূরণ করা ভিসা আবেদন ফর্ম, রিসেন্টলি তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যুর প্ল্যান এবং হোটেল বুকিং কনফার্মেশন এর রিসিট।
ডকুমেন্টস জমাদান: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং ফর্মটি নিয়ে আপনাকে যেতে হবে ঢাকায় জাপান দূতাবাসে এবং সেখানেই ডকুমেন্টসগুলি জমা দিতে হবে।
ভিসা ফি: যেদিন দূতাবাসে যাবেন সেদিন আপনাকে আনুমানিক ২,৫০০ টাকা ভিসা ফি বাবদ পরিশোধ করতে হবে। চাইলে কাজটি আপনি ঘরে বসে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সাহায্যেও সেরে নিতে পারেন৷
মনে রাখবেন বিমানের মতো এয়ারলাইনগুলো টোকিও এবং ওসাকার মতো প্রধান শহরে ফ্লাইট সার্ভিস দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে সেসব সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। রাউন্ড-ট্রিপ খরচ আগেভাগে বুকিং করলে এক্ষেত্রে ৪০,০০০–৫০,০০০ টাকা খরচ পড়বে। আর সরাসরি ফ্লাইটে যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টার মতো।
জাপানের যাতায়াত ব্যবস্থা হিসাবে শহরে আপনি জাপান রেল পাস বা JR Pass ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ৭ দিনের খরচ হিসাবে ২৫,০০০ টাকার আশপাশে খরচ হতে পারে। আর যদি আপনি লোকার পরিবহন যেমন সাবওয়ে ও বাস ব্যবহার করতে চান সেক্ষেতারে ভাড়া হিসাবে প্রতিবারই খরচ পড়বে ৭৫–২২৫ টাকা।
এবার সরাসরি আসি মূল পয়েন্টে। যারা নামমাত্র খরচে জাপান ট্যুর দিতে চান তারা যে ১০ টি পর্যটন স্থানকে ফোকাস করতে পারেন সেই ১০ টি স্থান হলো:
উএনো পার্ক, টোকিও
বসন্তকালে চেরি ফুল, ফ্রি জাদুঘর এবং খুব সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী বাগানের জন্য এই উএনো পার্ক, টোকিও কিন্তু খুব বিখ্যাত। তাছাড়া এই পার্কে প্রবেশ করতে আপনার কোনো টাকা খরচ করতে হবে না৷ সম্পূর্ণ ফ্রিতে ঘুরে আসতে পারবেন।
তবে হ্যাঁ পরিবহন খরচ হিসাবে উএনো স্টেশনে যেতে সাবওয়ে ভাড়া হিসাবে ১৫০–২০০ টাকার মতো খরচ পড়তে পারেন।
সেনসো-জি মন্দির, টোকিও
সেনসো-জি মন্দির হলো টোকিওর প্রাচীনতম বৌদ্ধ মন্দির এবং নাকামিসে শপিং স্ট্রিট। এখানেও প্রবেশ করতে আপনার কোনো টাকা খরচ করতে হবে। যারা বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করেন তারা ধর্মীয় টার্গেটকে মাথায় রেখেও এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
আর যাদের জাপানের ট্রেডিশনাল জিনিসপত্র ভালো লাগে তারা নাকামিসে শপিং স্ট্রিট থেকে ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করতে পারবেন।
কিয়োটোর আরাশিয়ামা বাঁশবন
কখনো বাঁশবন দেখেছেন? জাপানের বাঁশবন কিন্তু অসম্ভব সুন্দর! এই স্থানটি মূলত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত একটি শান্ত বাঁশবন। যেখানে যেতে পারবেন সম্পূর্ণ ফ্রিতে। তবে হ্যাঁ স্থানটিতে যেতে ট্রেন ভাড়া হিসাবে খরচ করতে হবে ২৫০-৩০০ টাকা।
ফুশিমি ইনারি শিনে, কিয়োটো
ফুশিমি ইনারি শিনে মূলত এমন একটি দর্শনীয় স্থান যেটি লাল টোরি গেট এবং পাহাড়ি ট্রেইলের জন্য খুব বিখ্যাত। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা এই স্থানটিতে কিন্তু প্রচুর এনজয় করতে পারবেন। সম্পূর্ণ ফ্রিতে এখানে ঘুরতে গেলে গাড়ি ভাড়া হিসাবে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ২০০/-।
হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্ক
হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্ক মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। ১৯৪৫ সালের পরমাণু বোমা হামলার স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে এখানে আপনি অনেক স্মৃতি খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন।
নিজ চোখে দেখতে পারবেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। মূলত ট্রামে করে আপনাকে এখানে যেতে হবে এবং ভাড়া হিসাবে গুনতে হবে ১২০ টাকা।
নারার ডিয়ার পার্ক
নারার ডিয়ার পার্ক মূলত হরিণ দেখার জন্য বিখ্যাত। এখানকার হরিণেরা কিন্তু খুব ফ্রেন্ডলি। আপনি তাদের সাথে খুব সুন্দর কিছু মুহুর্ত কাটাতে পারবেন। বিশেষ করে নিজ হাতে তাদের এটা-ওটা খাওয়াতে পারবেন। তাছাড়া এখানে অনেক পুরোনো একটি মন্দিরও আছে।
যারা হরিণদের নিজ হাতে খাওয়াতে চান তাদের ২০০ টাকা খরচ করতে হবে খাবার কেনার জন্য। আর গাড়ি ভাড়া হিসাবে কিয়োটো থেকে ট্রেন ভাড়া পড়বে মাত্র ৫০০ টাকা।
ওসাকা ক্যাসেল
প্রাসাদ দেখতে দেখতে কার কার ভালো লাগে? জাপানের এই ওসাকা ক্যাসেল নামক দর্শনীয় স্থানটি কিন্তু ঐতিহাসিক প্রাসাদ এবং চমৎকার পার্কের জন্য বেশ বিখ্যাত! এখানে যেতে হলে আপনাকে মাত্র ৬০০ ইয়েন বা ৪৫০ টাকা প্রবেশ ফি হিসাবে খরচ করতে হবে। আর সাবওয়ে ভাড়া হিসাবে প্রায় ২০০ টাকার মতো গুণতে হবে।
মাউন্ট ফুজি (৫ম স্টেশন)
মাউন্ট ফুজি বা ফুজির ৫ম স্টেশন হলো জাপানের আরো একটি ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান। যেখানে গেলে অন্তর জুড়িয়ে যাবে। জাপানের আইকনিক পর্বতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এই স্থানটি থেকে।
বলে রাখা ভালো এখানে প্রবেশ করতে আপনাকে একটা টাকাও খরচ করতে হবে না। তবে টোকিও থেকে বাসে যাতায়াত খরচ হিসাবে গুনতে হবে ৩,০০০ টাকা।
আকিহাবারা, টোকিও
বাজেট ইলেকট্রনিক্স, অ্যানিমে শপ এবং ইউনিক ক্যাফের যেনো এক পার্ফেক্ট কম্বিনেশন এই আকিহাবারা। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বা অ্যানিমেপ্রেমী হলে কিছুক্ষণের জন্যে এই স্থানটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে উপভোগ করে যেতে পারেন।
খরচ হিসাবে কেনাকাটার জন্য কিছু টাকা এবং সাবওয়ে ভাড়া হিসাবে ১৫০–২০০ টাকা পকেটে থাকলেই হলো।
ওকিনাওয়ার সৈকত
সবশেষে বলবো ওকিনাওয়ার সৈকতের কথা। গরমের দিনে এই স্থানের সৌন্দর্য শতগুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া কম খরচে ওয়াটার অ্যাক্টিভিটিস উপভোগের ক্ষেত্রেও এই ওকিনাওয়ার সৈকত একশোতে একশো।
প্রবেশের ক্ষেত্রে আপনাকে একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না। তবে বাস ভাড়া হিসাবে পকেটে থাকতে হবে ১০০–২০০ টাকা।