পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বলেন কিংবা ভালো পড়াশোনার পরিবেশ বলেন সবকিছুর দিক দিয়েই জাপান কিন্তু সেরা। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে চাইলে জাপানে পড়াশোনা করতে পারেন। হতে পারে তা হাফ ফ্রিতে কিংবা পুরোপুরি ফ্রিতে। চলুন তবে আজ বাংলাদেশ থেকে জাপানে কিভাবে ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া যায় সে-সম্পর্কে জানি।
শুরুতে চলুন জাপানের স্কলারশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কে ছোটখাটো একটি পরিচয়পর্ব তুলে ধরি। বর্তমানে জাপানে যেসব জাপানের স্কলারশিপ প্রোগ্রাম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেসব প্রোগ্রাম হলো:
এমএএসএও স্কলারশিপ মূলত জাপান সরকারের একটি পপুলার স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। একজন বাংলাদেশী এখানে আপনিও আবেদন করতে পারবেন। এমএএসএও স্কলারশিপের অধীনে আপনি ফ্রি টিউশন, ফ্রি থাকা-খাওয়া এমনকি মাসিক ভাতাও পাবেন। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো আপনাকে:
ফ্রিতে জাপানে পড়াশোনা করতে ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপের জন্যেও চাইলে আবেদন করতে পারেন। জাপানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজ নিজ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য মূলত এসব স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তো সম্পূর্ণ ফ্রিতে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়।
জাপানি প্রফেশনাল স্কলারশিপ মূলত প্রফেশনাল ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য। এখানে আপনি প্রফেশনাল শিক্ষা নিতে পারবেন। কর্মসংস্থান এমনকি বৃত্তিও পাবেন।
এবার আসি জাপানে ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়ের ব্যাপারে। জাপানে ফ্রি স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে যেসব স্টেপের মধ্যে যেতে হবে সেসব স্টেপ হলো:
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: প্রথমে আপনার আগ্রহের সাবজেক্ট কি তা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রোগ্রাম অনুসারে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। বলে রাখা ভালো জাপানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে।
রিসার্চ: এরপর নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে স্কলারশিপের সুযোগ ও শর্তাবলী দেখে নিন। যোগাযোগ করুন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেক্টরের কতৃপক্ষের সাথে। প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন৷
শর্তাবলী ও ডকুমেন্টস: এরপর যা করতে হবে তা হলো স্কলারশিপের শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যাচাই! প্রতিটি স্কলারশিপের শর্ত ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কিন্তু ভিন্ন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কমন কিছু ডকুমেন্টস হলো:
আবেদন: এসব স্কলারশিপের আবেদন সাধারণত অনলাইনেই হয়ে থাকে। সো আপনি ঘরে বসে আবেদন করতে পারবেন৷ স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোগ্রামের নিয়ম পড়ে অনলাইন চট করে আবেদন করে নেবেন। তবে আপনি যদি MEXT স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে জাপান দূতাবাসে গিয়ে আবেদন করতে হতে পারে।
এক্সাম ও ইন্টারভিউ: স্কলারশিপে আবেদনের ক্ষেত্রে কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য আপনাকে এক্সাম এবং ইন্টারভিউ দু’টোই দিতে হবে।
জাপানী ভাষা দক্ষতা: যদিও ইংরেজি মাধ্যমে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার চান্স আছে কিন্তু জাপানি ভাষা শিখতে পারলে অনেক সুবিধা পাবেন৷ জাপানের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমের কোর্স করা গেলেও থাকা-খাওয়াসহ যেকোনো কাজে জাপানি ভাষার উপর স্কিল আপনার স্বস্তি হিসাবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে প্রিপারেশন নিয়ে JLPT (Japanese Language Proficiency Test) পরীক্ষা দিতে পারেন।
যারা জাপানের সাধারণ স্কলারশিপ এবং ফ্রি স্কলারশিপে পার্থক্যের ব্যাপারে এখনো কনফিউজড তাদের বলে রাখি ফ্রি স্কলারশিপে আপনি টিউশন ফি ফুল ফ্রি পাবেন। তাছাড়া তারা আপনার থাকা জায়গার খরচটুকু বহন করতে হবে এবং যাতায়াত খরচ বহন করাটাও তাদের দায়িত্বে থাকবে। তবে নরমাল স্কলারশিপগুলোতে আপনি এসব সুযোগ পাবেন না। হতে পারে তারা আপনাকে টিউশন ফি বা মাসিক বৃত্তি প্রদান করছে।
মনে রাখবেন বাংলাদেশ থেকে জাপানে ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ কিন্তু অনেক বেশি। তবে এক্ষেত্রে আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তাবলি অনুসরণ করা। আর বিশ্ববিদ্যালয় চুজের ক্ষেত্রে নিচের অপশনগুলি ট্রাই করতে পারেন:
টোকিও ইউনিভার্সিটি! জাপানের সবচেয়ে ফেমাস এবং জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠান। এমএএসএও (MEXT) স্কলারশিপের মাধ্যমে এখানে আপনি ভর্তি হতে পারবেন। বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গবেষণা নিয়ে যাদের ক্যারিয়ার প্ল্যান তাদের জন্য এই ভার্সিটি হতে পারে বেস্ট অপশন। এখানে আপনি পুরোপুরি ফ্রিতেও কিন্তু পড়তে পারবেন কোনো টাকা খরচ ছাড়াই।
কিয়োতো ইউনিভার্সিটি জাপানের অন্যতম একটি বিখ্যাত রিসার্চ বেইজড বিশ্ববিদ্যালয়। যার আন্ডারে আপনি এমএএসএও স্কলারশিপ এবং অন্যান্য স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মানবিক ৩ টি ক্যাটাগরিতেই এখানে ভালো প্রোগ্রামে ভর্তি হবার সুযোগ রয়েছে।
ওসাকা ইউনিভার্সিটিও একটি রিসার্চ বেইজড ইউনিভার্সিটি। যা বর্তমানে বিভিন্ন স্কলারশিপ অফার করে আসছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জাপানের অন্যতম বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। যার কারণে এখানে এমএএসএও স্কলারশিপ ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপও পাওয়া যায়।