আপনি কি বিদেশে পড়তে চান? কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোন সাবজেক্ট বেছে নিলে ভবিষ্যতে টাকা, সম্মান, আর ক্যারিয়ার – সবকিছুই নিশ্চিত হবে?
যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে আজকের এই লেখাটি কেবল আপনার জন্য। মনে রাখবেন, বিদেশে পড়তে যাওয়া মানে শুধু বিমানে উঠে নতুন দেশে যাওয়া নয়! বরং এটি আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যা আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
ভুল সাবজেক্ট বেছে নিলে হয়তো তা কাগজের মাঝেই ডিগ্রি হয়ে থাকবে, কিন্তু চাকরি থাকবে না! আবার সঠিক সাবজেক্ট হলে স্বপ্নের ক্যারিয়ার, মোটা বেতন আর স্ট্যান্ডার্ড লাইফ সবই আপনার হবে। সো কোনো তথ্য মিস করতে না চাইলে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে সাথেই থাকুন। জানুন বিদেশে পড়ার জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো হবে।
কম্পিউটার সায়েন্স ও আইটি
এই সাবজেক্টকে সোজা বাংলায় আপনি টাকা ছাপানোর সাবজেক্ট বলতে পারেন। বর্তমান বিশ্ব ডিজিটালে রূপ নিয়েছে৷ তাই আইটি সেক্টরে চাকরির সুযোগ সবচেয়ে বেশি। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, ডেটা সায়েন্টিস্ট এগুলো এখন হটকেক!
যারা এই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছে তাদের বড় বড় কোম্পানি যেমন Google, Microsoft, Amazon বিশাল বেতনে চাকরি দিচ্ছে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট জব এবং স্টার্টআপ করার বিশাল সুযোগ তো রয়েছেই।
এক্ষেত্রে যারা পড়তে চান তারা যুক্তরাষ্ট্রের MIT, Stanford, Harvard, কানাডাার University of Toronto, University of British Columbia এবং জার্মানির TU Munich, RWTH Aachen এর মতো ভার্সিটিগুলিতে ভর্তি হতে পারেন।
ব্যবসায় প্রশাসন (MBA)
যারা সিইও হতে চান তাদের জন্যে এই সাবজেক্টটি। যদি আপনি ব্যবসা বা ম্যানেজমেন্টে আগ্রহী হন তাহলে দেখবেন এই সার্টিফিকেটের আন্ডারে আপনি কত ধরণের সুযোগ পাচ্ছেন৷ বড় কোম্পানিগুলোর CEO, CFO, এবং ম্যানেজমেন্ট লেভেলের চাকরির জন্য কিন্তু এই সাবজেক্টে MBA বাধ্যতামূলক।
তাছাড়া মার্কেটিং, ফিন্যান্স, হিউম্যান রিসোর্স যেকোনো ফিল্ডে কাজের সুযোগও রয়েছে। আর এই সাবজেক্টে পড়ার জন্য বেছে নিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের Harvard, Wharton, Stanford, ইউরোপের INSEAD (ফ্রান্স), London Business School এবং কানাডার Rotman School of Management, Schulich School of Business এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি।
মেডিকেল ও হেলথ সায়েন্স
মনে রাখবেন ডাক্তার মানেই টাকা আর সম্মান! মানুষের সেবার পাশাপাশি হাই স্কেলের টাকা ইনকাম করতে মেডিকেল ও হেলথ সায়েন্সের উপর বিদেশে স্কলারশিপ করতে পারেন৷ উন্নত দেশে ডাক্তারদের বিশাল চাহিদা রয়েছে। তাই আশা করি চাকরি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না।
বিশেষ করে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ায় ডাক্তারদের ভালো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আর আপনিও চাইলে এই সুযোগ লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে যুক্তরাজ্যের University of Oxford, University of Cambridge, অস্ট্রেলিয়ার University of Sydney, Monash University, কানাডা University of Toronto বা McGill University বেছে নিতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং
মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, এনার্জিসহ সবধরনের ইঞ্জিনিয়ারদের বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে। জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের জন্য প্রচুর সুযোগ থাকায় আশা করি আপনার চাকরি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না।
এক্ষেত্রে পড়ার জন্য জার্মানের TU Munich, RWTH Aachen বেছে নিতে পারেন। এসব ভার্সিটিতে কোনো ধরণের টাকা দিতে হবে না। আর যাদের কানাডা ভালো লাগে তারা University of British Columbia, University of Toronto এবং যাদের যুক্তরাষ্ট্র ভালো লাগে তারা MIT, Caltech, Stanford বেছে নিতে পারেন।
অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যান্স
পয়সার হিসাব রাখবেন! দেখবেন পয়সা আসবেই! অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যান্সে স্কলারশিপ করার আগে মনে রাখবেন বর্তমানে ব্যাংকিং, ইনভেস্টমেন্ট, ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট এইসব সেক্টরে দক্ষ জনবলের চাহিদা অনেক বেশি।
CFA, CPA, ACCA কোর্স করলেই দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তরে আপনি কাজের সুযোগ পেয়ে যাবেন। যাদের এই মেজরের উপর স্কলারশিপ করার ইচ্ছা আছে তারা যুক্তরাজ্যের London School of Economics, University of Oxford, কানাডার University of Toronto, York University, অস্ট্রেলিয়ার University of Sydney কিংবা Monash University ট্রাই করতে পারেন।
বিদেশে পড়ার জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো নয়?
এবার আসি বিদেশে পড়ার জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো নয় সে ব্যাপারে! কিছু সাবজেক্ট আছে যেগুলোর ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো হবে বলে মনে হয় না! যেমন পিওর আর্টস। এই সাবজেক্টের কিন্তু চাহিদাও কম, চাকরি পাওয়াও কঠিন।
পাশাপাশি সোশ্যাল সায়েন্সের কথাও বলা যেতে পারে। যা গবেষণা বা একাডেমিক ক্যারিয়ার ছাড়া চাকরির সুযোগ একেবারেই সীমিত। আর যদি লোকাল ল নিয়ে পড়েন তাও খুব একটা কাজে আসবে না। কারণ বিদেশে এর কোনো মূল্য নেই।
ইতি কথা
সবশেষে বলবো বিদেশে পড়ার জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো তা জানার চাইতে আপনার কোনটা ভালো লাগে এবং ভবিষ্যতে কি প্ল্যান তা জানা জরুরি। দক্ষতা, পছন্দ ও ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী তার ওপর ডিসিশন নিন। যদি টেকনোলজি ও কোডিং পছন্দ করেন তবে কম্পিউটার সায়েন্স নিন। যাদের ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস ভালো লাগে তারা MBA বা ফিন্যান্স নিয়ে পড়ুন। মোটকথা সঠিক সিদ্ধান্ত নিন! যাতে পরে আফসোস করতে না হয়।