সন্তানদের শিক্ষিত করে মা বাবা নিঃসঙ্গ

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫
সন্তানদের শিক্ষিত করে মা বাবা নিঃসঙ্গ
সন্তানদের শিক্ষিত করে মা বাবা নিঃসঙ্গ

সন্তানদের শিক্ষিত করার পর অনেক মা-বাবা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, যা সমাজে একটি সাধারণ কিন্তু গভীর বিষয়। এর কারণগুলো অনেক জটিল এবং জীবনের নানা দিককে স্পর্শ করে।

১. সন্তানদের চাকরি বা পড়াশোনার জন্য দূরে চলে যাওয়া:

  • আজকের যুগে ভালো শিক্ষার সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য সন্তানদের প্রায়শই নিজ শহর বা দেশের বাইরে যেতে হয়। ফলে মা-বাবা একা থেকে যান।
  • এক সময় যেসব সন্তান প্রতিদিন মা-বাবার সাথে থাকতেন, তারা দূরে চলে যাওয়ার কারণে শূন্যতা তৈরি হয়।

২. পরিবারে সময় কম দেওয়া:

  • আধুনিক জীবনে কাজের চাপ এবং ব্যস্ততা এত বেশি যে সন্তানরা মা-বাবার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ খুব কম পান।
  • অনেক সময় সন্তানরা নিজেদের জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, তারা মা-বাবার অনুভূতি বুঝতে পারেন না।

৩. সমাজের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি:

  • আগের দিনে যৌথ পরিবারের চল ছিল, যেখানে সবাই একসঙ্গে থাকত। কিন্তু এখন একক পরিবার (nuclear family) ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
  • সন্তানরা নিজেদের জীবনসঙ্গী এবং সন্তানদের নিয়ে আলাদা থাকতে পছন্দ করেন, যা মা-বাবাকে নিঃসঙ্গ করে তোলে।

৪. টেকনোলজির কারণে সম্পর্কের দূরত্ব:

  • মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্ক রাখার মাধ্যম হলেও, বাস্তবে এটি অনেক সময় দূরত্ব বাড়ায়।
  • সন্তানরা অনেক সময় ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এতটাই ব্যস্ত থাকে যে মা-বাবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ কম হয়।

৫. সন্তানদের আলাদা জীবন গড়ার স্বাভাবিক প্রবণতা:

  • শিক্ষিত ও স্বাধীন হওয়ার পরে সন্তানরা নিজেদের লক্ষ্য এবং স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
  • তারা মনে করেন যে মা-বাবা তাদের জন্য অনেক করেছেন, এখন তারা নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যাবেন।

৬. আবেগীয় দূরত্ব:

  • সন্তান এবং মা-বাবার মধ্যে প্রায়ই একটি প্রজন্মের ব্যবধান দেখা যায়। ফলে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়।
  • কিছু সন্তান মা-বাবার অনুভূতির প্রতি উদাসীন হয়ে ওঠেন, যা সম্পর্ককে দুর্বল করে তোলে।

৭. সমাজে মূল্যবোধের পরিবর্তন:

  • অনেক সমাজে এখন “নিজের জীবন” নিয়ে ব্যস্ত থাকার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে পারিবারিক দায়িত্ব বা মা-বাবার প্রতি যত্নের গুরুত্ব অনেকটা কমে যাচ্ছে।

কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে?

  • সন্তানদের দায়িত্বশীল হতে শেখানো: ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের মা-বাবার প্রতি দায়িত্ববোধ এবং শ্রদ্ধা শেখানো উচিত।
  • যোগাযোগ বাড়ানো: সন্তানদের যত ব্যস্তই হোক না কেন, নিয়মিত মা-বাবার সাথে সময় কাটানো এবং যোগাযোগ রাখা জরুরি।
  • মা-বাবার মানসিক প্রস্তুতি: মা-বাবাদের উচিত তাদের জীবনে একটি সময়ে সন্তানরা দূরে চলে যেতে পারে, এই বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া।
  • সমাজে সচেতনতা বাড়ানো: পরিবার এবং সামাজিক দায়িত্বের গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
  • মা-বাবার জীবনের নতুন অর্থ খোঁজা: সন্তানদের ছাড়াও মা-বাবা যদি নিজেদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য নতুন শখ বা সমাজসেবামূলক কাজ করেন, তাহলে তাদের নিঃসঙ্গতা কমে আসবে।

সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলা মা-বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এবং আনন্দের বিষয়। তবে সন্তানদেরও উচিত মা-বাবার অবদান এবং তাদের অনুভূতিগুলোকে সম্মান জানানো। পরিবার একে অপরের প্রতি যতটা যত্নশীল হবে, সম্পর্ক ততটাই সুন্দর এবং অর্থবহ হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ