উচ্চ শিক্ষায় ফেলোশিপ

উচ্চ শিক্ষায় ফেলোশিপ কি: জানুন বিস্তারিত

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

উচ্চ শিক্ষায় ফেলোশিপ কি এবং কেনো

উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন অনেকের মনেই থাকে৷ কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা সেই স্বপ্নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে ফেলোশিপ হতে পারে একটি পার্ফেক্ট সমাধান। তাই, আজ আমরা জানবো উচ্চ শিক্ষায় ফেলোশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাথে জানবো কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে এটি পাওয়া যায়, এবং এর সুবিধাগুলো কি কি সে-সম্পর্কে।

ফেলোশিপ কী?

সোজা বাংলায় ফেলোশিপ এক প্রকার আর্থিক সহায়তা। যা কোনো স্টুডেন্টের রিসার্চ, উচ্চ শিক্ষা বা নির্দিষ্ট কোনো প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে দেওয়া হয়ে হয়ে থাকে। আরেকটু সহজ করে যদি বলি এটি মূলত একধরণের শিক্ষাবৃত্তির মতো। অর্থ্যাৎ আপনি পড়াশোনা করবেন আর আপনার খরচ দেবে একটি নির্দিষ্ট কতৃপক্ষ।

ফেলোশিপ কেন দরকার?

শিক্ষার জন্য টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ, এবং রিসার্চের কস্ট সবকিছুই আকাশছোঁয়া হতে পারে। তবে ফেলোশিপ এই ব্যয়ভার কমিয়ে আনে। তাছাড়া যারা ফেলোশিপ পায় তারা সরাসরি আর্থিক সহায়তা পায় রিসার্চের জন্য। যা নরমালি খুব একটা পাওয়া যায় না। শুধু কি তাই? ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে ফেলোশিপ পাওয়া মানেই আপনার সিভি-তে একটি বড় প্লাস পয়েন্ট যোগ হওয়া। ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে আপনাকে এই পয়েন্ট অন্যদের চাইতে এগিয়ে রাখবে শতগুনে।

ফেলোশিপ কয় ধরণের হয়ে থাকে?

এবার আসি ফেলোশিপ কয় ধরণের হয়ে থাকে সে ব্যাপারে।

মাস্টার্স ফেলোশিপ

যারা স্নাতক শেষ করেছেন এবং মাস্টার্সে ভর্তি হতে চান, তাদের জন্য এই মাস্টার্স ফেলোশিপ। এই ফিলোশিপ কিন্তু প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপ এবং ক্যারিয়ার গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

কীভাবে মাস্টার্স ফেলোশিপ কাজ করে?

আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি প্রদান করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়া, গবেষণার খরচ এবং ট্যুরের জন্যেও টাকা দেওয়া হয়। যারা আবেদন করতে চান তাদের বলে রাখি এই মাস্টার্স ফেলোশিপে সাধারণত একাডেমিক পারফরম্যান্স, SOP (Statement of Purpose), এবং রেফারেন্স লেটারের ওপর জোর দেয়া হয়।

জনপ্রিয় মাস্টার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রাম

Erasmus Mundus Joint Masters: ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ফেলোশিপ প্রোগ্রাম মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দেশে কোনো অর্থ ছাড়াই পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। সম্পূর্ণ টিউশন ফি কভার, থাকা-খাওয়ার খরচ, এবং মাসিক স্টাইপেন্ড হিসাবে প্রতি মাসে ১,০০০-১,৫০০ ইউরো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় এই প্রোগ্রামে।

Fulbright Foreign Student Program (USA): যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেলোশিপ হলো এটি। টিউশন ফি, বিমানের খরচ, বই কেনার খরচ, এবং মাসিক ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে এই প্রোগ্রামে।

Chevening Scholarship (UK): যারা যুক্তরাজ্যে এক বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রাম করতে চান তারা ফ্রিতে পড়াশোনার জন্য এই ফেলোশিপ চুজ করতে পারেন৷ এখানে পুরো টিউশন ফি মওকুফ এবং মাসিক স্টাইপেন্ড সুবিধা পাবেন। বোনাস হিসাবে পাবেন UK-এর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ।

পিএইচডি ফেলোশিপ

রিসার্চ বেইজড পড়াশোনার জন্য এই ধরণের ফেলোশিপ বেশ জনপ্রিয়। পিএইচডি ফেলোশিপ আপনাকে গবেষণার খরচ এবং মাসিক স্টাইপেন্ড বা ভাতা নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। বিশেষ করে যারা একাডেমিক ক্ষেত্রে নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তারা এই ধরণের ফেলোশিপ প্রোগ্রামে জয়েন হয়ে ভালোই সুফল পেতে পারেন৷ এই ধরণের কোর্সের মেয়াদ সাধারণত ৩-৫ বছর হয়ে থাকে। তাছাড়া আরো একটি ইনফো একেবারে না জানালেই নয় এবং সেটি হলো প্রতিটি পিএইচডি ফেলোশিপ প্রোগ্রামে একজন রিসার্চ সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়ে থাকে।

জনপ্রিয় পিএইচডি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম

Marie Skłodowska-Curie Fellowship (EU): ইউরোপীয় ইউনিয়নের পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ করে এই প্রোগ্রাম। এখানে আপনি রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল, ট্যুরের খরচ এবং মাসিক ভাতা হিসাবে প্রতি বছর ৩৫,০০০-৫০,০০০ ইউরো পাবেন।

DAAD Fellowship (Germany): জার্মানিতে যারা ফেলোশিপ করতে চান তাদের জন্য এই প্রোগ্রাম। সম্পূর্ণ টিউশন ফি ফ্রি এবং মাসিক ভাতা হিসাবে ৮৫০-১,২০০ ইউরো পাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামের।

Commonwealth Scholarship: কমনওয়েলথ দেশে এই প্রোগ্রামের আন্ডারে আপনিও চাইলে ফেলোশিপ করতে পারবেন৷ টিউশন ফি, ট্যুর খরচ এবং মাসিক ভাতা হিসাবে পাবেন ১,১০০-১,৫০০ পাউন্ড প্রতি মাসে।

পোস্টডক ফেলোশিপ

পোস্টডক ফেলোশিপ হলো তাদের জন্য যারা পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন এবং নিজের রিসার্চ নিয়ে আরো এগিয়ে যেতে চান। একাডেমিক এবং প্রফেশনাল স্কিল বাড়াতে এই ধরণের ফেলোশিপের জুড়ি মেলা ভার।

পোস্টডক ফেলোশিপের সুবিধা

পোস্টডক ফেলোশিপের সুবিধা হিসাবে আপনি ফ্রিতে নিজের ইচ্ছামতো রিসার্চ চালিয়ে যেতে পারবেন। মাসিক ভাতা, রিসার্চের খরচ এবং ট্যুর খরচও এই প্রোগ্রামের আন্ডারে চলে৷ তাছাড়া যারা রিসার্চ করতে গিয়ে ভালো নেটওয়ার্কিং সুযোগ চাচ্ছেন তারাও এই ফেলোশিপের আন্ডারে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।

জনপ্রিয় পোস্টডক ফেলোশিপ প্রোগ্রাম

Humboldt Research Fellowship (Germany): দুনিয়ার যেকোনো প্রান্ত থেকে জার্মানে গিয়ে আপনি এই Humboldt Research Fellowship প্রোগ্রামে জয়েন হতে পারবেন৷ মাসিক স্টাইপেন্ড এবং আপনার রিসার্চ খরচ তারাই দেবে। মাসিক খরচ হিসাবে প্রতি মাসে পাবেন ২,৬০০ ইউরো।

Newton International Fellowship (UK): যারা যুক্তরাজ্যে রিসার্চ করতে চান তারা এই ফেলোশিপ চুজ করতে পারেন। রিসার্চের ফুল খরচ তারা দেবে। পাশাপাশি মাসিক ভাতা হিসাবে প্রতি বছর ২৪,০০০ পাউন্ড পাবেন।

Fulbright Postdoctoral Scholar Award (USA): পিএইচডি সম্পন্ন রিসার্চারদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রিসার্চের সুযোগ করে দেবে এই ফেলোশিপ।

মনে রাখবেন মাস্টার্স, পিএইচডি এবং পোস্টডক ফেলোশিপ শিক্ষার্থীদের রিসার্চ স্কিল অর্জনে বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার শিক্ষাগত ধাপ অনুযায়ী সঠিক ফেলোশিপ নির্বাচন করুন। একবার এপ্রুভ না করলে বারবার অন্য প্রোগ্রামে ট্রাই করুন। কারণ সুযোগের দরজায় বারবার নক করলে একদিন তা খুলবেই!

বাংলাদেশে থেকে ফেলোশিপ পাওয়ার উপায়

বাংলাদেশে থেকে ফেলোশিপ পেতে শুরুতে রিসার্চ করুন৷ অনলাইনে নির্দিষ্ট ফেলোশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এরপর প্রায় সব ফেলোশিপেরই যোগ্যতার মানদণ্ড রয়েছে এবং তার সাথে নিজের যোগ্যতা মিলিয়ে নিন৷ যেমন জিপিএ, রিসার্চ টপিক, ভাষা সবকিছু মিলিয়ে নিন৷ আবেদন করতে স্ট্রং স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) লিখুন। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিন। সেইসাথে পাসপোর্ট, সনদপত্র, রিসার্চ পেপার্স, রেফারেন্স লেটার এগুলো প্রস্তুত রাখুন।

ফেলোশিপে সফল হওয়ার টিপস

ডেডলাইনের প্রতি নজর রাখুন
সময়মতো আবেদন করুন
প্রতিযোগিতা বুঝুন
নিজেকে আলাদা করে তুলুন
রেফারেন্স লেটার সংগ্রহ করুন
ভালো IELTS বা TOEFL স্কোর নিশ্চিত করুন
ভুল তথ্য প্রদানের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

ফেলোশিপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

মনে রাখবেন অনেক সময় ফেলোশিপের পেছনে ৫০,০০০-১০,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। মাসিক স্টাইপেন্ড হিসাবে সবকিছু ঠিক থাকলে আপনিও ১০০০-২৫০০ ডলার পেতে পারেন৷ মনে রাখবেন বিশ্বের ৩০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ প্রোগ্রাম প্রদান করে থাকে৷ সুতরাং এক প্রোগ্রামে না পারলে আরেক প্রোগ্রামে ফোকাস করুন৷ হাল ছাড়বেন না। বলে রাখা ভালো সবচেয়ে বেশি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। সো যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাই করতে পারেন বা বাড়তি ফোকাস দিতে পারেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ