যাদের কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ইচ্ছা আছে আমাদের আজকের এই গাইডলাইনটি শুধুমাত্র তাদের জন্যেই। যেখানে আমরা কম সিজিপিএ নিয়েও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। সুতরাং সাথেই থাকুন।
উচ্চ শিক্ষায় সিজিপিএ কেনো গুরুত্বপূর্ণ?
শুরুতে বলে রাখি যারা সিজিপিএ এর মানে জানেন না তাদের এর মানে বা পূর্ণরূপ জেনে রাখা উচিত। এর পূর্ণরূপ হলো Cumulative Grade Point Average। আপনার একাডেমিক পারফরম্যান্সের একটি গাণিতিক হিসাব হলো এই সিজিপিএ।
বলে রাখা ভালো বাংলাদেশে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ৪.০ বা ৫.০ স্কেলে সিজিপিএ কাউন্ট করে থাকে। আর সাধারণত, ৪.০ স্কেলে ৩.৫ বা ৫.০ স্কেলে ৪.০ এর ওপরে সিজিপিএকে হাই কোয়ালিটির রেজাল্ট বলা হয়ে থাকে। পাশাপাশি ৩.০ এর নিচে সিজিপিএকে সাধারণত কম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই! অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ফলাফলের বাইরেও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে স্টুডেন্টদের সুযোগ দেয়।
কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাঁধা
এবার আসি কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বেশকিছু কমন বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে। যদিও চ্যালেঞ্জগুলো সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবুও জেনে রাখতে কোনো ক্ষতি নেই। বিশেষ করে:
নোটিশ দেওয়ার সময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম সিজিপিএর শর্ত দিয়ে রাখে।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই হাই একাডেমিক রেজাল্ট সাধারণত স্কলারশিপের জন্য প্রধান শর্ত হিসাবে আরোপ করে দেয়।
কম সিজিপিএ থাকা শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে নিজেদের অযোগ্য মনে করে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে।
কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করবেন যেভাবে
এবার আসি কিছু ট্রিকসের ব্যাপারে৷ যা আপনার কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির রাস্তা ক্লিয়ার করবে। আপনি কিন্তু চাইলেই কম সিজিপিএ পুষিয়ে আনতে পারেন স্ট্যান্ডার্ডাইজড পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার মাধ্যমে।
কারণ অনেক গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম সিজিপিএর চেয়ে GRE/GMAT স্কোরকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যেমন যেমন IELTS-এ ৭.০+ বা TOEFL-এ ৯০+ স্কোর যাদের তাদের কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়াটা সবচেয়ে সহজ হয়ে যাবে।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তো কথাই নেই। এটা হতে কোনো প্রজেক্ট বা প্রকাশিত গবেষণা পেপার্রস! এক্ষেত্রে যদি কোনো কমিউনিটি সার্ভিসে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাও কাজে লাগানো যাবে।
সবশেষে বলবো বেশকিছু অনলাইন কোর্সে টাইম ইনভেস্ট করার কথা। এক্ষেত্রে আপনি ফ্রিতে Coursera, edX, Udemy-এর মতো প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিতে পারেন।
কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয় এমন দেশ
আপনি চাইলে কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে পারেন। আর এক্ষেত্রে টার্গেটে যেসব দেশ রাখা যেতে পারে সেসব দেশ হলো:
যুক্তরাষ্ট্র
যেখানে গড় সিজিপিএ প্রয়োজন ৩.০+। কারণ এখানে GRE, SOP, এবং এক্সট্রা কারিকুলামে বেশি ফোকাস করা হয়। বলে রাখা ভালো এখানকার ভার্সিটি হিসাবে ট্রাই করতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি অব ব্রিজপোর্ট!
কানাডা
আর যারা কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান তারা কানাডাকেও বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে গড় সিজিপিএ প্রয়োজন ২.৮+। IELTS/TOEFL স্কোর এবং অন্যান্য প্রফেশনাল থাকলে তা প্লাস পয়েন্ট হিসাবে কাউন্ট হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে টার্গেট করতে পারবেন ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা অথবা রয়েল রোডস ইউনিভার্সিটি।
অস্ট্রেলিয়া
এবার আসি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারে। যেখানে গড় সিজিপিএ প্রয়োজন ২.৫+। আর আপনার যদি এই ধরণের সিজিপিএ থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেই সাথে বিশেষ সুবিধা হিসেবে থাকছে প্রি-মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং ভোকেশনাল এডুকেশন।
যুক্তরাজ্য
অবাক হবার কিছুই নেই! আপনি চাইলেই যুক্তরাজ্যের ভালো ভালো ভার্সিটিতেও কম সিজিপিএ নিয়ে স্কলারশিপ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আবেদন করতে হলে গড় সিজিপিএ প্রয়োজন ২.৮। বলে রাখা ভালো এই ধরণের স্কলারশিপে “সেকেন্ড-ক্লাস অনার্স” এন্ট্রি রুট হলো সবচেয়ে বড় সুবিধা। যাইহোক! যাদের সিজিপিএ কম তারা টার্গেট হিসাবে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার বা মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির উপর ফোকাস রাখতে পারেন।
কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দেবে যেসব স্কলারশিপ
সুতরাং যারা কম সিজিপিএ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতো চান তারা ভালোমতো রিসার্চ করে আবেদন করুন। আর তার আগে একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন ছাড়া অন্যান্য দিকে ফোকাস করুন। ফ্লেক্সিবল শর্তযুক্ত প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে পারলে দেখবেন সহজেই এপ্রুভাল পেয়ে গেছেন। পাশাপাশি আপনার পছন্দ, ফিউচার প্ল্যান, চাকরি সুবিধা, ভবিষ্যত সবকিছু বিবেচনা করে তবেই ভার্সিটি ও বিষয় নির্ধারণের অনুরোধ রইলো। হ্যাপি লার্নিং!