২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হেনেছিল দেশের বিভিন্ন উপকূলসহ শরণখোলার সাউথখালীতে। বলেশ্বর নদীর পাড়ের বেড়ীবাঁধ ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে জলোচ্ছ্বসে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় দুই হাজার মানুষ। সে সময়ে এলাকাবাসীর দাবি ছি,ল ত্রাণ চাই না একটি টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। দীর্ঘদিন পরে সেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হলেও প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বৃদ্ধি করায় এখনও শেষ হয়নি বেড়ীবাঁধের কাজ।
অন্য দিকে, বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ধসে যাওয়ার পাশাপাশি বাঁধের কাছাকাছি ভাঙন ছুঁই ছুঁই করছে। এলাকাবাসীর দাবি, বেড়ীবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি নদী শাসন করতে হবে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে সিডর নামের মহা প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্নিঝড় চরম আঘাত হানে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জনপদে। ২৪০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার বাতাসের গতি বুঝে উঠার আগেই সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায় বলেশ্বর নদীর সাউথখালীসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। এসময় শুধু শরনখোলার সাউথখালীতে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর সরকারীভাবে প্রকাশ হলেও বেসরকারী মতে এর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার।
বেঁচে থাকা হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনের নিরাপত্তার জন্য একটাই দাবী ছিলো, টেকসই বেড়ী বাঁধ। ১০ বছর পরে নির্মাণ শুরু হলেও নদী শাসন না করার ফলে নির্মাণাধীন বেড়ীবাঁধ বার বার ভেঙে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এলাকাবাসী আতংকে দিন কাটাচ্ছে। মহা প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বসের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে স্রোতস্বিনী বলেশ্বর নদীর করাল গ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার। ৬৩ কিলোমিটার লম্বা ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের এ কাজ ৬ বছর আগে শুরু হলেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই বেড়ীবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ধসে যাচ্ছে।
সিডরের ১৭ বছর পরেও সম্পন্ন হয়নি টেকসই বেড়ীবাঁধ। নির্মাণ শেষ হতে না হতেই বেড়ীবাঁধের উপর নির্মিত ব্লক সরে যাওয়ায় টেকসই বেড়ী নিয়ে শংকিত এলাকাবাসী। সেদিনের সহায়- সম্বল হারানো মানুষগুলো এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের এখন একটাই দাবী, বেড়ী বাঁধের এ কাজের সংগে নদী শাসন করতে হবে। বলেশ্বর নদীর করাল গ্রাসে অনেক জায়গায় বেড়ীবাঁধের কাছেই ভাঙন ছুঁই ছুঁই অবস্থা। আর বাঁধের উপরের ব্লক সরে নিচে নেমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কাজের মান নিয়েও এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন। এটি আরো মজবুতভাবে না করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিডর থেকেও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে তাদের আশংকা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, সিইআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। আমাদের লক্ষ্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা। নদীর ভাঙনের ক্ষত গ্রস্ত মানুষের বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের কথাও আমাদের বিবেচনায় আছে। চলমান বেড়িবাঁধের কাজের মেয়াদ তিন দফা বৃদ্ধি করায় আগামী ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার কথা বলতে রাজী হননি।