ভাবুন তো, আপনি সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। হাতে ফ্রেশ আকামা, মাথায় বড় বড় স্বপ্ন। হয়তো একটা গাড়ি কিনেছেন বা কেনার প্ল্যান করছেন। কিন্তু হঠাৎই দেখা দিলো এক নতুন সমস্যা। সেটি হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স আর গাড়ির ইন্সুরেন্স!
ঠিক তখনই মাথায় আসে হাজারো প্রশ্ন লাইসেন্স কিভাবে করব, কি কি ডকুমেন্ট লাগবে, গাড়ির ইন্সুরেন্স কোনটা ভালো, খরচ কত হবে! আপনার এসমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাজিয়েছি আমাদের আজকের এই গাইডলাইন। তাই সাথেই থাকুন!
সৌদি আরবে গাড়ি চালানো মানে শুধু এক্সিলারেটরে চাপ দেওয়া নয়। বরং এর পাশাপাশি থাকতে হবে নিরাপত্তা, আইনি বিষয়, এবং নিয়মকানুনের সঠিক ধারণা।
তাছাড়া দেশটিতে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো শুধু বেআইনি নয়! বরং এটি এমন এক কাজ যা করলে কয়েক হাজার রিয়াল জরিমানা গুনতে হতে পারে। আর যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায় এবং আপনার গাড়ির ইন্সুরেন্স না থাকে, তখন সেই ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে হয়তো আপনার মাসের বাজেট উল্টে যাবে।
সংক্ষেপে বললে, লাইসেন্স আপনাকে বৈধতা দেবে। আর ইন্সুরেন্স আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
এবার সরাসরি আসি আলোচনায়! সৌদি আরবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে শুরুতে আপনাকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করতে হবে। যা করতে হবে সৌদি সরকারের অফিসিয়াল পোর্টাল Absher এর মাধ্যমে। সেখানে গিয়ে আপনার আকামা নম্বর ব্যবহার করে লগইন করতে হবে।
তারপর ‘Appointments’ সেকশনে গিয়ে ‘Traffic’ নির্বাচন করে নিতে হবে। এরপর ড্রাইভিং স্কুল এবং আপনার রিজিয়ন সিলেক্ট করে নিন। ব্যাস! এতেই বুকিং করার কাজ শেষ।
তবে মনে রাখবেন, এই ধাপটি যত তাড়াতাড়ি সারবেন তত ভালো। কারণ কখনও কখনও স্লট পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। বিশেষ করে রিয়াদ বা জেদ্দার মতো ব্যস্ত শহরে স্লট দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
বুকিং তো করলেন! এবার ক্লাস করার পালা। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার পর আপনাকে যে একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে সেটি মূলত মোট তিনটি ধাপে বিভক্ত। এগুলি হলো:
এখানে আপনাকে শেখানো হবে রাস্তায় সঠিকভাবে কিভাবে চলাচল করতে হয়, কোন সাইন কি বোঝায়, কোন ক্ষেত্রে থামতে হবে, কোন ক্ষেত্রে ওভারটেক করতে পারবেন। থিয়োরি ক্লাসের পর একটি লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। অনেকেই এই পরীক্ষাকে অবহেলা করেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না, সৌদি ট্রাফিক নিয়ম বুঝতে না পারলে রাস্তায় টিকে থাকা মুশকিল।
থিয়োরিতে পাস করার পর আপনাকে ড্রাইভিং সিমুলেটর এবং স্কুল ট্র্যাকে প্র্যাকটিস করতে হবে। যা আপনাকে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা তৈরিতে সাহায্য করবে।
এরপর শেষ ধাপে এসে আপনাকে রিয়েল রাস্তায় গাড়ি চালানো শেখানো হবে।
বলে রাখা ভালোএই পুরো প্রশিক্ষণের খরচ আনুমানিক ২,৭৬০ সৌদি রিয়ালের মতো পড়বে। খরচ অনেক মনে হলেও মনে রাখবেন, এটি একবারের ইনভেস্টমেন্ট যা আপনার বহু বছর ধরে কাজে দেবে।
লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আপনার মেডিকেল টেস্টও বাধ্যতামূলক। আর এটি করতে হবে সৌদি সরকারের অনুমোদিত কোনো ক্লিনিকে। পরীক্ষায় সাধারণত চোখের পরীক্ষা, রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ এবং অন্যান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য চেকআপ করা হয়। আর ঝামেলার কোনো ভয় নেই। কারণ এই রিপোর্ট সরাসরি অনলাইনে Efada সিস্টেমে চলে যাবে। যার কারণে আপনাকে আলাদা করে কোনো কাগজ জমা দিতে হবে না।
সব ধাপ শেষ হলে কর্তৃপক্ষ আপনার জন্য একটি ড্রাইভিং পরীক্ষা আয়োজন করবে। এই পরীক্ষায় পাস করলে আপনাকে একটি ফি পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত ৫ বছরের লাইসেন্সের জন্য খরচ হয় ২০০ রিয়াল। আর ১০ বছরের জন্য ৪০০ রিয়াল।
ফি দেওয়ার পর একই দিনেই লাইসেন্স হাতে পাবার সুযোগ থাকে। তাই পরীক্ষা শেষ করার পর আর দেরি না করে সাথে সাথে কাজগুলো করে ফেলবেন।
সবশষে Muroor অফিসে এই সব কাগজ জমা দিলে, অনেক সময় একই দিনে আপনার সৌদি লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাবে।
লাইসেন্স পাওয়ার পর গাড়ি চালানোর জন্য আপনাকে ইন্সুরেন্স করতে হবে। সৌদি আরবে মূলত দুই ধরনের গাড়ি ইন্সুরেন্স পাওয়া যায়। এগুলি হলো:
ইন্সুরেন্স করানোর আগে অবশ্যই পলিসির শর্ত ভালোভাবে পড়ে নেবেন। কারণ অনেক সময় ছোট ছোট শর্ত না জানার কারণে পরে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়।
প্রথম বছর নতুন ড্রাইভারদের ইন্সুরেন্স খরচ একটু বেশি হতে পারে। কারণ কোম্পানিগুলো ধরে নেয় যে নতুন ড্রাইভারদের দুর্ঘটনায় সম্ভাবনা বেশি।
তবে চিন্তা নেই, আপনার ড্রাইভিং রেকর্ড পরিষ্কার থাকলে পরবর্তী বছর থেকে No Claims Discount বা NCD পেয়ে যাবেন। যা আপনার খরচ অনেক কমিয়ে দেবে।
এবার আসি সৌদি আরবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কিছু সমস্যা ও সমাধানের ব্যাপারে।
১. যদি লাইসেন্স করাতে গিয়ে আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পান তবে নিয়মিত চেক করতে থাকুন। পাশাপাশি চেষ্টা করুন খুব সকালে লগইন করার৷
২. ডকুমেন্ট মিসিংয়ের সমস্যা এড়াতে সব কাগজপত্র আগে থেকেই স্ক্যান এবং প্রিন্ট করে রাখুন।
৩. টেস্টে ফেল করতে না চাইলে পরীক্ষার আগে প্রচুর অনুশীলন করুন এবং সাইন বোর্ডের সিস্টেমটা ভালোভাবে মুখস্থ রাখুন।
৪. ইনসুরেন্স রিজেক্টেড হতে চাইলে সব পলিসি বা শর্ত ভালোভাবে বুঝে সাইন করুন এবং ড্রাইভারের নাম অবশ্যই তালিকায় রাখুন।