স্কিল ভিসায় বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
স্কিল ভিসায় বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া
স্কিল ভিসায় বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া

স্কিল ভিসা (Skilled Visa) এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতা বা যোগ্যতা অনুযায়ী বিদেশে কাজ করার সুযোগ পান। অনেক দেশই অভিজ্ঞ এবং দক্ষ পেশাজীবীদের নিজেদের দেশে আনার জন্য স্কিল ভিসা প্রদান করে থাকে। স্কিল ভিসা সাধারণত বিশেষায়িত দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়। স্কিল ভিসা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধাপ রয়েছে, যেমন পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা যাচাই, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রমাণ ইত্যাদি।

স্কিল ভিসায় বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া:

১. সঠিক দেশ নির্বাচন

প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন দেশে যেতে চান এবং সেই দেশে কোন ধরণের দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। বেশ কিছু দেশ দক্ষ কর্মীর অভাব মেটাতে স্কিল ভিসার সুযোগ দেয়। নিচে কিছু দেশের স্কিল ভিসার উদাহরণ দেয়া হলো:

  • অস্ট্রেলিয়া: General Skilled Migration (GSM) প্রোগ্রাম
  • কানাডা: Express Entry প্রোগ্রাম (Federal Skilled Worker Program)
  • যুক্তরাজ্য: Skilled Worker Visa
  • জার্মানি: EU Blue Card বা Skilled Immigration Act (Skilled Worker Visa)
  • নিউজিল্যান্ড: Skilled Migrant Category (SMC) Visa
  • যুক্তরাষ্ট্র: H-1B Visa (কিছু ক্ষেত্রে এটি স্কিল ভিসার মত কাজ করে)

২. যোগ্যতা যাচাই

স্কিল ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে যাচাই করতে হবে আপনার যোগ্যতা সেই দেশের চাহিদার সঙ্গে মিলছে কিনা। প্রতিটি দেশ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও পেশার তালিকা তৈরি করে, যেগুলো প্রার্থীদের থাকতে হবে।

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পেশার প্রয়োজন অনুযায়ী হতে হবে।
  • দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা: নির্দিষ্ট পেশায় যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকতে হবে।
  • ইংরেজি ভাষার দক্ষতা: বেশিরভাগ দেশে ইংরেজিতে পারদর্শিতা প্রয়োজন হয়। IELTS, TOEFL বা অন্যান্য ভাষাগত পরীক্ষায় ভালো স্কোর প্রয়োজন হতে পারে।

৩. পেশা তালিকা পরীক্ষা করা

প্রতিটি দেশ একটি দক্ষ পেশার তালিকা (Skilled Occupation List – SOL) প্রকাশ করে যেখানে চাহিদাসম্পন্ন পেশাগুলো উল্লেখ করা হয়। এই তালিকায় আপনার পেশা থাকলে, আপনি সেই দেশের স্কিল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার নির্দিষ্ট SOL রয়েছে।

৪. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা

স্কিল ভিসার জন্য আবেদন করার সময় বেশ কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়, যেমন:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ (ডিগ্রি/সার্টিফিকেট)
  • পেশাগত অভিজ্ঞতার প্রমাণ (কাজের চুক্তি, রেফারেন্স লেটার)
  • ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ (IELTS, TOEFL স্কোর)
  • পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট)
  • স্বাস্থ্য ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

৫. আবেদন প্রক্রিয়া

যখন আপনার ডকুমেন্টস প্রস্তুত হবে, তখন সেই দেশের নির্দিষ্ট স্কিল ভিসা প্রোগ্রামে আবেদন করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেদনটি অনলাইনে জমা দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়:

  • প্রথম ধাপ: প্রাথমিক আবেদন জমা দেওয়া।
  • দ্বিতীয় ধাপ: পয়েন্ট ভিত্তিক সিস্টেমে স্কোরিং (যেমন কানাডার Express Entry বা অস্ট্রেলিয়ার GSM প্রোগ্রামে পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন)।
  • তৃতীয় ধাপ: আবেদন যাচাই করা এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার বা পরীক্ষা সম্পন্ন করা।

৬. ইন্টারভিউ এবং মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন

অনেক দেশের স্কিল ভিসা প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কখনও কখনও একটি সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।

৭. ভিসা অনুমোদন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়া

যদি আপনার আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং আপনি সফলভাবে ভিসা পেয়ে যান, তখন আপনি সেই দেশে যেতে পারবেন এবং সেই নির্দিষ্ট পেশায় কাজ শুরু করতে পারবেন।

স্কিল ভিসার জনপ্রিয় দেশ এবং তাদের প্রোগ্রাম

১. কানাডা (Express Entry)

কানাডা স্কিলড কর্মীদের জন্য Express Entry নামে একটি দ্রুত এবং পয়েন্ট-ভিত্তিক ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম চালু করেছে। এর অধীনে তিনটি প্রধান প্রোগ্রাম রয়েছে:

  • Federal Skilled Worker Program
  • Federal Skilled Trades Program
  • Canadian Experience Class

২. অস্ট্রেলিয়া (Skilled Migration Program)

অস্ট্রেলিয়ার General Skilled Migration (GSM) প্রোগ্রামটি স্কিল ভিসার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। এখানে পয়েন্ট ভিত্তিক সিস্টেম রয়েছে এবং অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এর অধীনে ভিসা রয়েছে:

  • Skilled Independent Visa (Subclass 189)
  • Skilled Nominated Visa (Subclass 190)
  • Skilled Work Regional (Provisional) Visa (Subclass 491)

৩. যুক্তরাজ্য (Skilled Worker Visa)

যুক্তরাজ্য স্কিলড কর্মীদের জন্য Skilled Worker Visa প্রদান করে, যা Tier 2 ভিসার বিকল্প হিসেবে চালু হয়েছে। এই ভিসার মাধ্যমে অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুযোগ পান।

৪. জার্মানি (Skilled Immigration Act)

জার্মানি দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন একটি আইন চালু করেছে, যার নাম Skilled Immigration Act। এর অধীনে উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীদের ভিসার সুবিধা প্রদান করা হয়।

স্কিল ভিসার মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও, এটি অভিজ্ঞ এবং দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ