কানাডায় আসার আগে যে বিষয় গুলো খুব ভাল করে ভেবে দেখবেন ।

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩
কানাডা

আপনারা অনেকেই কানাডায় আসার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। অনেকেই হয়তো সুযোগও পেয়েছেন আসার। হয়তো ওয়ার্ক পারমিট নয়তো express entry নয়তো অন্য কোনো ভিসা। কানাডায় আপনাকে আসতে হবে কোনো না কোনো ভিসার মাধ্যমে। আপনি উড়েও আসতে পারবেন না আবার দালালের মাধ্যমেও আসা অসম্ভব।
যাই হোক একেক ভিসায় আসা একেক জনের জীবনযাত্রার মান ও প্রসেস ভিন্ন হবে। স্টুডেন্ট বা ভিজিট ভিসায় যারা আসবেন তাদের সঙ্গে PR বা permanent resident ভিসা নিয়ে আসা মানুষের জীবনযাত্রা ও কানাডার বেনিফিট লাভের সুযোগ একরকম হবে না এটা মাথায় রাখতে হবে।
PR বা permanent resident ভিসা নিয়ে কানাডায় আসা বর্তমানে কতোটা ঠিক হবে সেক্ষেত্রে আমার মতামতটা তুলে ধরব। আমার সঙ্গে অন্য কারোর মতামত না মিলতেও পারে। কারণ সবার অভিজ্ঞতা এক না।
আপনারা যদি মনে করেন কানাডায় আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন তাহলে আপনার জন্য কানাডা সুবিধা হবে না। আপনি নিজ দেশে যে ধরণেরই ডিগ্রিধারী হন না কেন এখানে আসার পর নির্দিষ্ট প্রফেশনের জন্য পড়ালেখা করতে হবে। অনেকেই ওয়ার্ক পারমিটে আসেন অনেক ভালো পজেশনে জব করেন তাদের কথা ভিন্ন। তাদের পড়া লাগে না। আমার স্টুডেন্টের বাবা ইন্ডিয়া থেকে ওয়ার্ক পারমিটে এসেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে Scotiabank এ চাকরি করেন। ইয়ারলি ফ্যামিলি ইনকাম $200k এর বেশি।
এদের কথা ভিন্ন। যারা নিউ ইমিগ্রান্ট হয়ে আসবেন তারা এমনটা হওয়া অনেকটাই অসম্ভব। যারা অত্যন্ত মেধাবী ও ট্যালেন্ট হবেন তারা কিছুটা স্টাডি, রিসার্চ ও চেষ্টা করে অনেক ভালো পজেশনে যেতেও পারবেন। আমার জানা মতে অনেকেই আগে এসেছেন সেইজন্য বললাম। কিন্তু বাকিরা কী করবেন? আপনারা যদি মনে করেন হাই লেভেলের কাজ ছাড়া করবেন না, অনেক বেতন ছাড়া করবেন না তাহলে বেশ অনেকটা টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে পারেন। শুরুতে একটা surviving জব করতে হবে। বেতন মিনিমাম হতে পারে।
ভাবছেন এই ইনকাম দিয়ে চলতে পারবেন কিনা? আসার আগে প্রভিন্সগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা ভালো।
বর্তমানে সারা কানাডায় সাংঘাতিক Inflation চলছে মানে সবকিছুতেই খরচ বেশি। তারমধ্যে টরন্টো হলো সর্বাধিক ব্যয়বহুল শহর। আগে অতটা না থাকলেও এখন এই শহরে খরচ বহন করা সবার জন্য সম্ভব হবে না।
এখানে দুই বেডরুমের এপার্টমেন্ট ভাড়া কমপক্ষে $2000-2500 CAD হবে। আপনি যদি একজন মিনিমাম ওয়েজের চাকরি করেন তাহলে কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে যদি কাজ করার চেষ্টা করেন তাহলে কিছুটা পরিত্রাণ পাবেন।
তবে কানাডা এমন একটা দেশ এখানে বসবাস করতে চাইলে আপনার সাহস, মনোবলের সঙ্গে কষ্ট করার যথেষ্ট আগ্রহ ও শক্তি থাকতে হবে। তাহলেই আপনি যত কম-বেশি ইনকাম করেন না কেনো ভালো থাকতে পারবেন।
কানাডার সবচেয়ে পজেটিভ দিকটা হলো, কম ইনকাম মানুষের জন্য সরকার ভীষণ উদার। সব রকম সুযোগ সুবিধা নিম্ন আয়ের মানুষ পেয়ে থাকেন। যেমন; চাইল্ড বেনিফিট, ডেকেয়ার সুবিধা আরো অনেক কিছু।
সুতরাং মিনিমাম ওয়েজে চাকরি করেও এসব সুযোগ সুবিধা নিয়ে কিন্তু মোটামুটি ভালোই থাকতে পারবেন যে কোনো প্রভিন্সে।
যারা কষ্ট করতে পারবেন তারা অনেক ভালো করতে পারবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়। আসার পর বেশ অনেক বছর লাগবে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। ধৈর্য ধরতে হবে।
এখন অনেকেই বলবেন কেনো তাহলে কানাডায় যাওয়া? এখানেই তো কবি নীরব। এখানে যারা আসেন তারা এখানকার উন্নত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যান। 911 চাপলেই পুলিশ, এম্বুলেন্স ও ফায়ার ট্রাক পাওয়া যায়। পা বাড়ালেই বিলাস বহুল পাবলিক গাড়িতে চড়া যায়। কানাডায় এসব সুবিধা প্রতিটা মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সুতরাং কে হোমলেস বা কে porsche 911 Carrera S চালাচ্ছেন সেটা দেখা হয় না। যে কোনো মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে গেলে বেস্ট চিকিৎসাটাই পাবেন তাৎক্ষণিকভাবে।
আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া করছি শুরুতে struggling করলেও এখন অনেকটা শান্তির বাতাস গায়ে লাগাতে পারছি।
আপনাদের সবার মঙ্গল হোক।

কাজী হালিমা আফরীন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ