অভিবাসীদের স্বপ্নের দেশ ইংল্যান্ডে বাস্তবতা ফিকে হয়ে আসছে। কেয়ার ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড (২০ হাজার পাউন্ড সমান ৩০ লাখ টাকা) খরচ করে দেশটিতে আসছেন অনেকে। ভুয়া নিয়োগদাতারা পূর্ণকালীন কাজের কাগুজে নিশ্চয়তা দিলেও, ব্রিটেনে আসার পর পূর্ণকালীন তো দূরের কথা, এক ঘণ্টাও কাজ দিতে পারছে না তারা।
লন্ডনে ঘরের ভেতরে এক-একটি ডাবল রুমের গড় ভাড়া পৌঁছেছে ৯০০ পাউন্ডে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটির বিভিন্ন খাতে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত থাকায় কাজের সংকট ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে ব্ল্যাক মার্কেটে সরকার নির্ধারিত মজুরির চেয়ে অর্ধেক মজুরিতে কাজ করতে চাইলেও মিলছে না কাজ। এতে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
একদিকে ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট নিয়োগদাতা কাজ দিতে পারছে না, এমন অভিযোগ অসংখ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে করানো ইউনিভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে অনুত্তীর্ণ হচ্ছেন, অনেকের ফলাফল স্থগিত হচ্ছে। জীবিকার সংস্থান করতে নাকাল হতে হচ্ছে তাদের।
এমন বাস্তবতায় স্বপ্নের দেশ ব্রিটেনে স্বপ্নভঙ্গের দহন নিয়ে অন্তহীন দুর্ভোগে দিন কাটছে কয়েক হাজার বাংলাদেশির।
মুন্না আজিজ, সাইফুর রহমান, তানভীর আহমেদসহ কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্রিটেনে আসার পর চার থেকে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিগুলো এখনও তাদের ট্রেনিংই শুরু করেনি। কোম্পানি কাজ না দিলে ভিসা বাতিলের শঙ্কায় রয়েছেন হাজারো বাংলাদেশি কেয়ার শ্রমিক।
এ বিষয়ে লন্ডনের কিংডম সলিসিটর্সের প্রিন্সিপাল সলিসিটর ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা ব্রিটেনে আসছেন, তারা শুধু আসার জন্যই আসছেন। ব্রিটেনে আসা যতটা সহজ, কাজ পাওয়া তার চেয়ে দশ গুণ কঠিন।
মূল নিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে দালালের মাধ্যমে এলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। যেখানে একজন নিয়োগকারীর দুই-তিনজন কর্মীর দরকার, সেখানে নিয়োগকারী ১০ থেকে ১২ জন লোক এনে কাজ দিতে পারছে না। তাই কাজ না থাকায় ভিসা বাতিল হচ্ছে।
ওয়ার্ক পারমিটের শর্ত হলো কাজ থাকতে হবে। অনেক কোম্পানি বিপুল টাকা হাতিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। গত নভেম্বর মাসে এসেও এখন পর্যন্ত বিনা কাজে মানুষের দয়ায় দিন পার করছেন অনেক প্রবাসী।
ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, মূলত যারা কেয়ার ভিসায় এসেছেন, তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কাজ দিতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কেয়ার প্রবাসী এলে আট হাজারই বেকার থাকছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মাহবুবুল করীম সুয়েদ বলেন, অনেকে জমিজমা বিক্রি করে, বাবার পেনশনের টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে আসেন। কিন্তু এক টাকাও রোজগার করতে পারছেন না। ফলে কাজ না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, মাঝখান থেকে কেয়ার ভিসার নামে একদল স্বদেশি দালাল শত কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।