একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অনেকেই কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চান। তবে অর্থাভাবে অনেকেই বিদেশে গিয়ে নিজেকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারে বাংলাদেশের প্রবাসী লোন সিস্টেম। যারা এই প্রবাসী লোনের সাহায্য নিয়ে বিদেশে যেতে চান তারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে পারেন। আশা করি কাজে দিবে।
শিরোনাম শুনেই হয়তো বুঝে গেছেন এটি একটি লোন সম্পর্কিত সিস্টেম। যারা প্রবাসে টাকার অভাবে যেতে পারছেন না তাদের জন্যই মূলত এই প্রবাসী লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাপারটা যদি আরেকটু খোলাসাভাবে বলি সেক্ষেত্রে বলবো কোন রকম জামানত ছাড়াই প্রবাসীদের লোন দেওয়ার সিস্টেমকে প্রবাসী লোন বলা হয়ে থাকে।
এই প্রবাসী লোনের ক্ষেত্রে যারা প্রবাসে যেতে চাইছেন কিন্তু টাকার অভাবে যেতে পারছেন না তারা কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ এবং আবেদন করে অন্তত দুই বছর মেয়াদে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে অনলাইনেও কিন্তু আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং যারা বাড়তি হ্যাসেলে জড়াতে চান না তারা ঘরে বসে অনলাইনেও আবেদনের কাজটি সেরে ফেলতে পারেন।
এবার আসি প্রবাসী লোন শোধ করার সিস্টেমের ব্যাপারে। এক্ষেত্রে প্রবাসে গিয়ে কাজ করে আপনি যে টাকাটা আয় করবেন ঠিক সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে প্রবাসী লোনটি পরিশোধ করতে পারবেন। বলে রাখা ভালো এই ঋন ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫ বছরের কিস্তিতে শোধ করা যাবে। এ-সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য হিসেবে আরকিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
মনে রাখবেন সকল প্রবাসী কিংবা প্রবাসে কাজ করে যাওয়া ব্যাক্তিরা এই প্রবাসী লোন পাবেন না। এক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে বেশকিছু ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চিত থাকতে হবে। সুতরাং প্রবাসী লোন কারা পাবেন সে-সম্পর্কে জেনে নিতে নিচের পয়েন্টগুলিতে ফোকাস করতে পারেন:
একজন ব্যাক্তিকে অবশ্যই জামিনদার হিসেবে রাখতে হবে। যিনি কিনা আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছল থাকবেন।
যদি কোনো কারণে আপনি ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন কিংবা আপনার অনুপস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারটি বন্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই এমন আত্মীয়-স্বজন থাকতে হবে যারা আপনার ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবেন।
যার মাধ্যমে আপনি প্রবাসের কাজটি পাচ্ছেন কিংবা যে আত্মীয়ের মাধ্যমে আপনি ভিসাটি পাচ্ছেন তার লোনের ব্যাপারে সম্মতি কিংবা জেনে রাখার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। যা আপনার প্রবাসের যাওয়ার ব্যাপারটির প্রমাণসরূপ কাজ করবে।
প্রবাসী লোন পেতে হলে আপনার সকল যোগ্যতা নিশ্চিত করার পর আবেদন করতে হবে। প্রবাসী লোন আবেদন করতে হলে:
শুরুতেই বলে রাখি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি সাধারণত ৯ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে প্রবাসী লোন দিয়ে থাকে। সুতরাং লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সুদের পরিমাণটি মাথায় রাখতে হবে।
আর যারা বাংলাদেশ বর্তমানে প্রবাসী লোন প্রোভাইড করা ব্যাংকগুলির নাম জানতে চাচ্ছেন তাদের বলবো বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ ইত্যাদি ব্যাংকগুলি বর্তমানে প্রবাসী লোন প্রোভাইড করছে। আপনি চাইলে এসবের যেকোনো একটি ব্যাংকে আবেদন করে লোন নেওয়ার সুযোগটি উপভোগ করতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়?
প্রবাসী লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের ব্যাপারটি একেবারে না বললেই নয়। প্রবাসীদের জন্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট এই ব্যাংকটি একজন বাংলাদেশী হবু প্রবাসীকে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আর এই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সময় হিসেবে বেঁধে দেওয়া হয় অন্তত দুই বছর।
এনআরবি ব্যাংক হলো বাংলাদেশের বেশ জনপ্রিয় একটি ব্যাংক। এখানে প্রবাসীদের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের জন্যেও লোন দেওয়া হয়। আপনি যদি একজন প্রবাসী হিসেবে আপনার সন্তানের জন্য লোন নিতে চান সেক্ষেত্রে ব্যাংকটি থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা লোন নিতে পারবেন।
এছাড়াও অনেকদিন ধরে যারা বিদেশে থাকেন এবং বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছেন তবে আর্জেন্ট লোন লাগছে তারাও ব্যাংকটি থেকে প্রবাসী লোনের অংশ হিসেবে ৫ থেকে ৭ বছর মেয়াদী এক থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন।
জনতা ব্যাংক হলো বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যাংকগুলির একটি। বাংলাদেশের অনেকেই এই ব্যাংকটির সার্ভিস নিয়ে থাকে। এই ব্যাংকটি থেকে প্রবাসী লোন হিসেবে আবেদনকারী ৫ বছর মেয়াদী লোন নেওয়ার সুযোগ। এক্ষেত্রে ব্যাংক কতৃপক্ষ থেকে আবেদনপত্র যোগাড় করে তা পূরণ করতে হবে। বিস্তারিত জানতে নিকটস্থ ব্যাংক কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।
যারা প্রবাসী আছেন কিন্তু অর্থের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারছেন না তারা, যদি ভাবেন যে পরিশোধ করতে পারবেন এবং একটা সময়ে গিয়ে সময়মতো সব অর্থ বুঝিয়ে দিতে পারবেন সেক্ষেত্রে বুরো বাংলাদেশে প্রবাসী লোন এর সাহায্য নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে আবেদন করাকালীন সময়ে আপনাকে আপনার পাসপোর্টের ১ থেকে ৬ পৃষ্টার ফটোকপি ইমেইলে পাঠিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও লোনের টাকা তুলতে পরিবারে যেকেউ ব্যাংক কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
যারা সেভিংস করতে পছন্দ করেন তারা নিশ্চয় রূপালী ব্যাংক সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো বর্তমানে কিন্তু এই জনপ্রিয় ব্যাংকটিও প্রবাসী লোন প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।
মনে রাখবেন, প্রবাসীদের ভিসাগত সমস্যা, বাড়ি বানানো কিংবা অন্য যেকোনো অর্থাভাবের ক্ষেত্রে মাত্র ৯% সুদে একেকজনকে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে রূপালী ব্যাংক কতৃপক্ষ। লোন নিতে স্থানীয় রূপালী ব্যাংক ব্রাঞ্চের সাথে যোগাযোগ করুন।
সাধারণ মানুষের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাংকে প্রবাসী লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এই ব্যাংকটি থেকে প্রবাসী লোন গ্রহণ করতে চান তাদের ‘প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প’ এর সাহায্য নিতে হবে।
এবার আসি লোনের ব্যাপারে। মনে রাখবেন এই প্রবাসী ঋণের পরিমাণ কিন্তু সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। এর বেশি পরিমাণ অর্থ লোন নেওয়া যাবে না। আর পরিশোধের মেয়াদ নিয়ে যদি বলি তবে বলবো এই লোন শোধ করতে আপনি সময় পাবেন সর্বোচ্চ ৩ বছর।
এছাড়াও এই ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ দুই বছর ২৪ কিস্তি বা তিন বছর বা ৩৬ কিস্তিতে ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন যেকেউই!
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে প্রবাসী লোনের ব্যাপারে শুরুতে বলে রাখি এই ব্যাংকটি কিন্তু ৪ টি ক্যাটাগরিতে লোন নেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এর মাঝে ১ টি প্রকল্প হলো অভিবাসী লোন প্রকল্প কিংবা প্রবাসী লোন প্রকল্প! আপনিও যদি প্রবাসী লোন নিতে চান সেক্ষেত্রে এই সেক্টরটিতে আবেদন করে লোন গ্রহণ করতে পারেন।
আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে প্রবাসী লোন পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কোনো আত্মীয়স্বজনের কাছ নেওয়া ভিসায় বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে একজন জামিনদারকেও নির্ধারণ করে রাখতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো নির্ধারণ করা জামিনদার যেনো পুরোপুরিভাবে স্বচ্ছল হয় এবং আপনার অপারগতায় সে যেনো লোন পরিশোধ করতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
এবার আসি ব্র্যাক এনজিও প্রবাসী লোন এর ব্যাপারে। আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন এই ব্র্যাক ব্যাংক কিন্তু সাধারণ ব্যবহারকারীকে প্রায় ১৪ ধরণের লোন গ্রহণের সুযোগ প্রদান করছে। যার মাঝে ১ টি জনপ্রিয় লোন হলো প্রবাসী লোন৷ যা কেবল প্রবাসীদের জন্যেই প্রযোজ্য!
বলে রাখা ভালো ব্র্যাক ব্যাংকের আওতায় প্রবাসী লোন নিতে হলে আপনাকে ২৫-৫০ বছর বয়সী হতে হবে। যারা এই ব্র্যাক এনজিও প্রবাসী লোন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তারা নিকটস্থ ব্র্যাঞ্চের যোগাযোগ করুন এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদন করে ফেলুন।
এবার আসি যারা ইতিমধ্যেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে চাচ্ছেন তারা ঠিক কি কি সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন সে-সম্পর্কে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধাগুলি হলো:
প্রবাসীরা কিভাবে লোন পাবে?
আপনারা যারা প্রবাসী তারা প্রবাসে যাবার আগেই নিকটস্থ ব্যাংক কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করে ফেলুন। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রবাসী যাবার আগে নিজেই যোগাযোগ করে লোন সংগ্রহ করতে পারবেন। অন্যথায় আবেদন পর্ব সেরে ফেলে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা লোনের টাকা সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি সরকারি?
হ্যাঁ! এই ব্যাংকটি পুরোপুরি সরকারি একটি ব্যাংক। যা বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতার সাথে অনেক বছর ধরে সার্ভিস দিয়ে আসছে।
সরকারি ঋণের উৎস কি?
সঞ্চয়পত্র, বৈদেশিক ঋণ, অনুদানসহ অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর বর্তমানে সরকারি ঋণের উৎস হিসাবে কাজ করছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়! এই ধরণের সিস্টেম বিশ্বের বিভিন্ন দেশই ফলো করে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয়?
যারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা ব্যাংকটি থেকে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা লোন নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
প্রবাসী লোনসহ এ-সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্যকে একসাথে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ-ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন নেই। যদিও থাকে তবে তা কমেন্টবক্সে সরাসরিই জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা সাধ্যমতো আপনাদের উপকারে আসার চেষ্টা করবো। আজ এতোটুকুই। প্রবাস জীবনকে আরো সুন্দর এবং অর্থবহ করতে প্রবাসী লোনের সহায়তা নিন এবং ভালো থাকুন।