দিনাজপুরে গ্রাম আদালতের দিকে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
দিনাজপুরে গ্রাম আদালতের দিকে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে গ্রাম আদালতের প্রতি গ্রামাঞ্চলের মানুষের আস্থা ক্রমশ বাড়ছে। পারিবারিক ও ছোটখাটো বিষয়ে তারা গ্রাম আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষেরা। হাকিমপুর থানার ওসি  বলছেন, গ্রাম আদালতে বিচার কার্যক্রম চালু থাকায় ছোট-খাটো বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের বহুলাংশে কমে গেছে।

আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থী ও গ্রাম আদালতের প্রধানদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

উপজেলার গ্রাম আদালতে মামলার দায়ের করা বিচারপ্রার্থীরা জানান, তারা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পারিবারিক, জমিজমা ও অর্থ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেছেন। আদালত উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ডেকেছেন।

উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে নিস্পত্তি হওয়া মামলার বাদী মুর্শীদপুর গ্রামের মোছা. রাজিয়া খাতুন বলেন, আমি পারিবারিক বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে স্বামীর মামলা দায়ের করি। আদালত উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ডেকেছিলেন। আদালতে আমার মহোরানার টাকার পরিশোধ করার রায় দিয়েছেন।

বোয়ালদাড় ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে নিস্পত্তি হওয়া মামলার বাদী আব্দুল মমিন  বলেন, প্রতিবেশির জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থী হই। গ্রাম আদালত সাক্ষিপ্রমাণ শেষে জমিজমার ষিয়টির সন্মানজনক নিস্পত্তি করে দিয়েছেন। থানা-পুলিশ করতে হয়নি।

খট্রামাধবপাড়া গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থী ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, আমার কাছে প্রতিবেশির ২৯ হাজার টাকা দেনা-পাওনা নিয়ে সমস্যা ছিল। আমি গ্রাম আদালতের শরনাপন্ন হই। গেলো বুধবার (২৬ অক্টোবর) গ্রাম আদালতের বিচারকদ্বয় ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আমার পাওনা টাকার উদ্ধারের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এ রকম অনেক ছোট খাটো বিষয়টি আর থানায় মামলা করতে হচ্ছে না। গ্রাম আদালতই সুষ্ঠ সমাধান করে দিচ্ছেন। এরফলে গ্রাম আদালতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।

আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের প্রধান ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, গ্রাম আদালত মুলতঃ একটি মীমাংসামূলক তথা সালিশি আদালত। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করাই গ্রাম আদালতের উদ্যেশ্য। তার আদালতে প্রতিমাসে পারিবারিক, জমিজমা, টাকা পয়সার লেনদেন সংক্রান্ত ২০ থেকে ২৫ মামলা দায়ের হয়। নিস্পত্তিও হয় গড়ে ১০ থেকে ১২ মামলার।

খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাওছার রহমান বলেন, গ্রাম আদালতে ৭৫.০০০ টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিস্পত্তি করার সুযোগ আছে। ২৬ অক্টোবর ২৯.০০০ টাকা দেনা পাওনা সংক্রান্ত মামলার নিস্পত্তি করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

বোয়ালদাড় ইউনিয়নের গ্রাম আদালত প্রধান ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. সদরুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আদালতে থানায় মামলা দায়ের করার মতই আবেদন করতে হয়। বাদী-বিবাদী, সাক্ষির নাম ঠিকানা, ঘটনার বিবরণ, সময়, তারিখ সবকিছুই উল্লেখ করতে হয়। এই আদালতে ৫ জন বিচারক থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানই গ্রাম আদালতের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সায়েম মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালতে ৭৫.০০০ টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিস্পত্তি করার সুযোগ রয়েছে। গ্রাম আদালতের বিচার কার্যক্রম চালু থাকায় ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে থানায় মামলা দায়ের কমে গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ