কানাডায় জব ভিসা চাই লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম। ১০ জন ইনবক্স করলো। সবাই বললো ‘ভাই ৫ লাখ দিলে ১০০% ফ্লাইট’! কাজ শেষ! যদিও ব্যাপারটা আসলে খুব সহজ নয়। তবে ভয় পাওয়ার দরকারও নেই। শুধুমাত্র জেনে নিন কানাডা জব ভিসা কী, প্রক্রিয়া কেমন, কত সময় লাগে, কী কী কাগজপত্র লাগে, খরচ কত এবং সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ!
ব্যাসিকেলি কানাডার Work Permit বা জব ভিসা হচ্ছে এমন একটি পেপার্স যার মাধ্যমে আপনি কানাডায় নির্দিষ্ট একটি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর এই Work Permit ২ ধরণের হবে। একটি হলো Employer-Specific Work Permit। যেটার সাহায্যে আপনি নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে কাজ করতে পারবেন। তবে এই ভিসার ক্ষেত্রে দরকার LMIA বা Labour Market Impact Assessment। আর অন্যটি হলো Open Work Permit। স্পাউস বা স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এই পার্মিটটা কাজে লাগে।
এবার আসি কানাডা জব ভিসা প্রসেসিং কেমন সে ব্যাপারে। আসুন স্টেপ বাই স্টেপ প্রসেস জেনে নিই:
চাকরি খোঁজা: কানাডা জব ভিসা প্রসেসিংয়ের প্রথম ধাপ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনাকে জব খুঁজতে হবে। দ্রুত জব খুঁজে পেতে আপনি চাইলে Job Bank, Indeed.ca, Workopolis, Monster.ca এর মতো জনপ্রিয় সব ওয়েবসাইট ট্রাই করতে পারেন।
LMIA অ্যাপ্লাই করা: কানাডায় জব করতে যাওয়ার আগে আপনাকে আবার LMIA অ্যাপ্লাই করতে হবে। যার মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে আপনার ভিসা রিজেকশনের কোনো চান্স আছে কিনা।
Work Permit Application: এরপর আসি Work Permit Application এর ব্যাপারে। LMIA ও জব অফার পেয়ে গেলে আপনি কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে Work Permit-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভিসা টাইপ হিসাবে দেবেন Temporary Foreign Worker Program (TFWP)। সেই সাথে ডকুমেন্ট স্ক্যান, ফি প্রদান সব কাজ ঠিকঠাকভাবে সেরে নিতে হবে।
বায়োমেট্রিকস ও ইন্টারভিউ: কানাডা জব ভিসা প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু সবসময় বায়োমেট্রিকস ও ইন্টারভিউতে পারফর্ম করতে হয় না। তবে ভিসা অফিসার যদি সন্তুষ্ট না হন, তখন ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে। আর বায়োমেট্রিকসের জন্য আপনাকে ঢাকায় VFS Global এ যেতে হবে। সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ করা লাগবে।
মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে আপনাকে IOM বা কানাডিয়ান অনুমোদিত সেন্টারে এবং স্থানীয় থানায় যেতে হবে।
ভিসা রেজাল্ট: সবশেষে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ভিসা রেজাল্টের জন্য। সব কিছু ঠিক থাকলে ১–৩ মাসে রেজাল্ট পেয়ে যাবেন। তারপর পাসপোর্টে স্টিকার লাগিয়ে সোজা কানাডা।
এবার আসি কানাডা ভিসা প্রসেসিং খরচের ব্যাপারে। এক্ষেত্রে ভিসা ফি আপনাকে প্রায় ১৪,০০০ টাকা গুনতে হবে। আর মেডিকেলের জন্য ৫,০০০–৮,০০০ টাকা এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ৫০০–১,০০০ টাকার মতো গুনতে হবে। সবশেষে কিছু টাকা সার্ভিস চার্জ (VFS) এর ক্ষেত্রে লাগতে পারে। মোটামুটি আনুমানিক খরচ দাঁড়াবে ২৫,০০০–৩৫,০০০ টাকার মতো।
কানাডা জব ভিসা প্রসেসিংয়ে যদি দরকারি ডকুমেন্টস ঠিকঠাকভাবে শো করানো যেতে না পারে তবে কিন্তু ভিসা রিজেক্ট হবে। তাই ডকুমেন্টস হিসাবে সময় থাকতে কালেক্ট করে নেবেন:
কমপক্ষে ৬ মাস ভ্যালিড পাসপোর্ট
জব অফার লেটার
পজিটিভ LMIA কপি
মেডিকেল রিপোর্ট
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
শিক্ষাগত যোগ্যতা
আপনার অভিজ্ঞতার প্রমাণ
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
সাপোর্ট করার মতো ফান্ড
কানাডা জব ভিসা প্রসেসিংয়ে বেসিক্যালি চাকরি পেতে সময় ১–৬ মাস, LMIA পেতে সময় ২–৩ মাস, ভিসা প্রসেসিংয়ে ১–৩ মাস অর্থ্যাৎ মোট সময় প্রায় ৬–৯ মাসের মতো লাগতে পারে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আরো দ্রুতও হতে পারে।
সবশেষে বলবো কানাডা জব ভিসা প্রসেসিং খুব একটা কঠিন প্রসেস নয়। তবে আপনাকে সবসময় ফ্রড এজেন্ট থেকে সাবধান থাকতে হবে। আর LMIA ছাড়া কেউ যদি ভিসা দিতে চায় তবে তার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতে হবে। তাছাড়া আপনাকে প্রোফেশনাল CV ও কভার লেটার তৈরি করতে হবে কানাডিয়ান স্টাইল অনুযায়ী। সেই সাথে IELTS জেনারেল থাকলে ভালো হয়। সো বেস্ট অফ লাক!