লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রতিবছর ছুটে যান মক্কা এবং মদিনায়। ধর্মীয় আবেগ, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহ নিজস্ব আত্মশুদ্ধির জন্য যাওয়া এই ভ্রমণ কখনো কখনো পরিণত হয় অসুস্থতা, বিশৃঙ্খলা, হারিয়ে যাওয়া বা মৃত্যুর মতো খারাপ পরিস্থিতিতে।
হ্যাঁ, ঠিকই জেনেছেন। সম্প্রতি ২০২৫ সালের পবিত্র হজ্বকে সুন্দর এবং নিরাপদ করতে সৌদি সরকার চালু করেছে একাধিক প্রযুক্তি নির্ভর সেবা এবং উন্নত ও মানসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা আপনার ২০২৫ সালের হজ্বযাত্রার সুরক্ষা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে হানড্রেটে হানড্রেট।
চলুন তাহলে জেনে নিই এবার কোন নতুন চমক থাকছে হজ্বে এবং সৌদি আরবের ২০২৫ সালের হজ্ব এবং এর সুরক্ষা নিয়ে নেওয়া উদ্যোগগুলো কি কি:
১. স্মার্ট আইডি কার্ড: আপনি হয়তো হারিয়ে যেতে পারেন হজ্বে গিয়ে। প্রত্যেক হজ্বযাত্রীর জন্য এবার থাকছে আলাদা আলাদা স্মার্ট আইডি কার্ড। যেখানে থাকবে আপনার নাম, হিস্ট্রি, ভিসা, ছবি, মেডিক্যাল রিপোর্টস সহ আনুষাঙ্গিক সব কিছু।
২. হজ্ব নুসুক অ্যাপ: পুরোনো যুগের মতো কাগজে কলমে হজ্বের ডিটেইলস রাখার দিন এখন শেষ! এখন স্মার্টফোনেই সৌদি আরবের তৈরিকৃত নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে আপনি পেয়ে যাবেন হজ্ব সম্পর্কিত সকল তথ্য এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। তাছাড়াও, এই নুসুক আ্যপ ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন কোন রাস্তা বর্তমানে ফাঁকা, কোথায় ভিড় কম, কোথায় ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প চলছে ইত্যাদি।
৩. AI ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: হুম, ভুল জানেননি। AI শুধু চ্যাটবটেই সীমাবদ্ধ নয়। ডিজিটাল ট্রাকিং, ফিঙ্গার চেকিং, ফেস রিকগনেশন সহ বিভিন্নভাবে সৌদি সরকার একে ব্যবহার করে মক্কায় নজরদারি চালাচ্ছে। এর মানে দাড়ায়, যেকোনো বিপদেই মিলবে ইন্সট্যান্ট সুরক্ষা।
৪. চিকিৎসা ড্রোন এবং রোবট সহকারী: হজ্ব যাত্রায় আপনাকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা এবং কমফোর্ট দিতে এবার প্রস্তুত থাকবে সৌদী সরকারের চিকিৎসা ড্রোন এবং সহকারী রোবটসমূহ। এই রোবট গাইড আপনাকে সব ধরনের দিকনির্দেশনা, পরিষ্কারের কাজ ইত্যাদি করবে। মসজিদে হারামকে পরিষ্কারেও দেখা মিলতে পারে রোবটের। তাছাড়া, ড্রোন নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করবে।
মোটকথা এ যেন ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এক সুন্দর ও সময়োপযোগী ব্যবহার।
প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবছর পবিত্র হজ্বে অংশগ্রহণ করে। এমন বিশাল ভিড় এবং সমাবেশে অসুস্থতা, হারিয়ে যাওয়, শারিরীক বিপর্যয় সহ নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক মিনা ঘটনা কেউ কিন্তু ভোলেনি। কিন্তু সৌদী সরকারের ফোকাস পয়েন্ট হলো আগে নিরাপত্তা, তারপর ইবাদত। এসব সময়োপযোগী পদক্ষেপ শুধু নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবে না। বরং হজ্ব যাত্রাকে করবে সুরক্ষিত, আরাম এবং স্বস্তিদায়ক।
প্রতিবছর প্রায় লাখখানেক মানুষ পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরীতে গিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যারা প্রথমবারের মতো বিদেশে গিয়ে থাকেন তারা বিভ্রান্ত হন, ভাষাগত দূর্বলতা থাকে। অথবা দিকনির্দেশনার অভাবে পড়েন।
আর ঠিক এই জায়গায় উল্লিখিত প্রযুক্তিসমূহ হতে পারে নতুনদের জন্য লাইফ সেভিয়ার। আর হ্যাঁ! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরামর্শ দিয়ে রাখি…যারা এখনো পর্যন্ত বাটন ফোনে অভ্যস্ত, তারা জলদি নিজের স্মার্টফোন কিনে আপগ্রেড করুন।
মনে রাখবেন, হজ্ব শুধু এখন ত্যাগের নয়! প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার মাধ্যমও।
এখানে হজ্বের মূল চেতনার কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো হজ্ব আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং হেদায়েত প্রাপ্তির মাধ্যম৷ তাছাড়া ধৈর্যেরও এক মহাযাত্রা এই হজ্ব।
তবে এই যাত্রাকে আরও সহজ এবং সুন্দর করতে এখন সাথী হিসেবে ব্যবহৃত হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। আর তাই, হজ করতে যদি চান তাহলে শুধু ইহরামের কাপড় নয়, সঙ্গে রাখুন আপডেটেড অ্যাপ, চার্জার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এসব প্রযুক্তির ব্যাপারে নিজে জানার পাশাপাশি অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন। আর এই হজ্বের মহাযাত্রাকে সকলের সাথে মিলে করে তুলুন শান্তিময়। যাকে উসিলা ধরে আপনিও পাবেন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, ইনশাআল্লাহ!