গর্ভাবস্থায় ১২টি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ও আমল

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

আলিমগণ কুরআন-হাদিসের ‘আম (সাধারণ) নির্দেশনার আলোকে হবু মায়েদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও নসিহত করেছেন। তাঁদের পরামর্শ এবং আমাদের কিছু সংযোজন মিলিয়েই আজকের এই লেখা।

.

[১] ঠিক সময়ে নামাজ আদায় করুন।বিশেষত ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায় করে নিতে চেষ্টা করবেন। নামাজ যদি ঠিকঠাক থাকে, তবে অন্য সবকিছু সহজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ দ্বারা অন্তরকে প্রশান্ত করতেন। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৯৮৫ ও ৪৯৮৬; হাদিস দুটো সহিহ]

.

[২] গর্ভকালীন বিভিন্ন অবস্থা, পেটের অভ্যন্তরে অনাগত সন্তানের নড়াচড়া ইত্যাদি বিষয়গুলো যথাসাধ্য গোপন রাখুন। কারণ বদনজরের প্রতিক্রিয়ায় আপনার কিংবা আপনার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। (বদনজর সম্পর্কে ডিটেইলস ধারণা পেতে কমেন্টে আমাদের বদনজর সিরিজের লিংকটি দেখে নিতে পারেন)

.

[৩] সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন (হাদিসে বর্ণিত) দু‘আ ও যিকরগুলো গুরুত্বের সাথে পড়ুন। বিশেষত: আয়াতুল কুরসি একবার, ৩ কুল (অর্থাৎ সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস) প্রতিটি ৩ বার করে পড়ুন এবং বদনজর ও জিনের প্রভাব থেকে বাঁচার দু‘আগুলো (কমেন্টে দেওয়া লিংকে বেশ কিছু দু‘আ পাবেন) পড়ুন।

.

[৪] বিশেষত কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন। স্বাভাবিক অবস্থাতেই গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক; গর্ভাবস্থায় আরো সতর্ক থাকা উচিত। কারণ একজন মায়ের কর্ম-কাণ্ডের প্রভাব তাঁর অনাগত সন্তানের উপর পড়ে; এ ব্যাপারে প্রাজ্ঞ আলিমগণ সতর্ক করেছেন। সুতরাং, যেসব মায়েরা গিবত, গান, মুভি, সিরিয়াল বা অন্য কোনো গুনাহে আসক্ত, তাঁরা দ্রুত নিজেদের সংশোধন করে, তাওবাহ করে নেবেন।

.

[৫] নিঃসন্দেহে একজন মা তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও কষ্টের সময়টি পার করেন তাঁর গর্ভাবস্থায়। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে।’’ [সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪] সুতরাং তিনি যদি তাঁর এই কষ্টের জন্য সঠিকভাবে সবর করেন, তবে আল্লাহর নিকট সীমাহীন মর্যাদা লাভ করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! একজন মুমিনের উপর আপতিত যে কোনো ধরনের চিন্তা, পেরেশানি, কষ্ট, ব্যথা, দুর্ভাবনা, এমনকি একটি কাঁটা বিঁধলেও এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহের কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) করে দেন”। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫৬৪১]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে হিসাব ছাড়া।’’ [সুরা যুমার, আয়াত: ১০]

.

[৬] সর্বাবস্থায় সাধ্যানুযায়ী যিকরে লেগে থাকুন। বিশেষত সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমানোর আগের যিকরগুলো যত্নের সাথে পড়ুন। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘জেনে রাখো, আল্লাহর যিকরেই (স্মরণেই) হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়।’’ [সুরা রাদ, আয়াত: ২৮]

.

[৭] আপনাকে আল্লাহ্ মা হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং তাঁর প্রশংসা করুন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘অতএব, তোমরা (মানুষ ও জিন) উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?’’ [সুরা আর-রহমান, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ্ আরও বলেন, ‘‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা অস্বীকার করো (অকৃতজ্ঞতা দেখাও) তাহলে (জেনে রাখো!) আমার শাস্তি বড়ই কঠিন।’’ [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ০৭]

.

[৮] নেক সন্তান লাভের জন্য বেশি বেশি কুরআনি দু‘আ করুন। আমরা মাত্র দুটো দু‘আ উল্লেখ করছি। পরবর্তী পোস্টে সন্তান লাভের আমলগুলো বিস্তারিত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

.

رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً‌ۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ

.

অর্থ: হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮]

.

رَبِّ لَا تَذَرْنِيْ فَرْدًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْوٰرِثِيْنَ‌

.

অর্থ: (হে আমার) রব! আমাকে একাকী (নিঃসন্তান) রাখবেন না। আপনি তো উত্তম ওয়ারিস। [সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত:৮৯]

.

[৯] কুরআন তিলাওয়াত করা: এটি গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ আমল। আপনার তিলাওয়াতের আওয়াজে সন্তান দারুণভাবে প্রভাবিত হবে, ইনশাআল্লাহ। তাই, একদম মনে মনে না পড়ে সামান্য আওয়াজে পড়বেন। পড়তে কষ্ট হলে কাউকে তিলাওয়াত করতে বলবেন অথবা রেকর্ডেড তিলাওয়াত ছেড়ে রাখবেন। তবে, নিজে পড়াই উচিত।

.

[১০] সমাজে গর্ভবতী নারীদের ব্যাপারে বিভিন্ন কুসংস্কার, বিদ‘আত ও শির্ক প্রচলিত আছে। সতর্কতার সাথে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকুন।

.

[১১] নরমাল ডেলিভারির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা রাখবেন এবং দু‘আ করবেন বেশি বেশি। এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকবেন। তবে, নরমাল ডেলিভারিকে বাধ্যতামূলক মনে করবেন না। কখনও কখনও বাস্তবেই সিজার দরকার হয়। অনেকে এ বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেন; সিজারে যেতেই চান না, যতই সমস্যা হোক। এর ফলে মায়েরা অনেকে পরবর্তী সময়ে বছরের পর বছর তীব্র ব্যথাসহ বিভিন্ন জটিলতা ফেইস করেন।

.

[১২] আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমল বেশি বেশি করবেন। সেগুলো হলো: ইস্তিগফার ও দরুদ পাঠ করা এবং সাধ্যানুযায়ী দান-সাদাকাহ করা। এই তিনটি আমলের প্রভাব বিস্ময়কর এবং প্রমাণিত। এগুলোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের দরকার নেই। সাধ্যানুযায়ী বেশি বেশি আমল করবেন।

তথ্য সংগ্রহ নুসুস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ