মেয়েদের স্তন হলো তাদের সৌন্দর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয় বরং এটা হলো নবাগত শিশুর দুধ খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত অংশ। মহান আল্লাহতায়ালা মায়ের বুকের দুধে শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ দিয়েছেন।
বয়স হলে মেয়েদের স্তন খানিকটা ঝুলে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কম বয়সে কিংবা ৪০ এর আগেই যদি স্তন ঝুলে পড়ে তবে এটা সমস্যা বা রোগের মধ্যে পড়ে।
তাই আজ আমরা এই নিবন্ধে মেয়েদের স্তন ঝুলে পড়া নিয়ে জানবো। কেন অল্প বয়সে ঝুলে পড়ে এবং এর প্রতিকার বা সমাধান কি সেটাও জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. কারও যদি বয়সের সাথে শরীরের ওজনের সামঞ্জস্য না থাকে অর্থাৎ ওজন বেড়ে গেলে স্তন ঝুলে পড়ে। কিশোরী বয়সের যারা আছে তাদের যদি মোটা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় তবে স্তন ঝুলে পড়বে।
২. অপরিণত কিংবা পরিণত বয়সে সন্তান গর্ভধারণ করলেও স্তন ঝুলে পড়তে পারে। তবে অপরিণত বয়সে ব্যাপারটা অধিক ঘটে। বিশেষ করে ১২ থেকে ১৭ বয়সী কোনো মেয়ে যখন গর্ভে সন্তান ধারণ করে তখন এমনটা বেশি ঘটতে পারে।
৩. বংশে যদি কারও স্তন ঝুলে পড়ার ইতিহাস থাকে তবে বংশধরদের মধ্যে এরকম হতে পারে। কারণ, স্তন ঝুলে পড়ার সাথে হরমোনাল ব্যাপার জড়িত থাকে।
৪. ধুমপান কিংবা বিভিন্ন নেশা নিয়মিত গ্রহণ করলে স্তন কখনোই ঠিক থাকবে না। বয়স হওয়ার আগেই স্তন ঝুলে পড়বে। কেননা, ধুমপান করলে মেয়েদের শরীরের ইলাস্টেন হরমোনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ইলাস্টেন ধীরে ধীরে ভেঙে যায়।
৫. কোনো মেয়ে যদি তার স্তনের আকার অনুযায়ী সঠিক আকারের ব্রা না পড়ে তবে এক্ষেত্রেও তার স্তন ঝুলে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. স্বাভাবিক আকারের চেয়ে কারও স্তন যদি অধিক বড় হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রেও স্তন নিচের দিকে ঝুলে পড়বে। কারণ, একজন মেয়ের পক্ষে সেই স্তনে সব সময় ব্রা পড়ে থাকা অসম্ভব। ওজন বেশি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই নিচের দিকে ঝুলে পড়বে।
৭. যারা বিভিন্ন খেলাধুলা করে, শারিরীক ব্যায়াম করে, কায়িক পরিশ্রম করে তাদের স্তন ঝুলে পড়ে। তবে সঠিক আকারের ব্রা পরিধান করে থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৮. বয়স বাড়ার কারণে স্তন ঝুলে পড়ে। তবে এটা অবশ্যই অন্তত ৩০ বছরের পর থেকে। কিন্তু ৩০ বছরের আগেই যদি কারও স্তন অনেকটা ঝুলে পড়ে তবে এটা বিশেষ কোনো সমস্যার কারনে হয়েছে। চিকিৎসা নিলে বা নিয়ম মেনে চললে এ সমস্যা রোধ করা সম্ভব।
৯. বিশ্বের বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায়, যারা সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুমে অভ্যস্ত নয় তাদের এমন সমস্যা হতে পারে। ব্রা ব্যবহার করলেও ঝুলে পড়বে।
১০. কোনো মেয়ে যদি বার বার সন্তান ধারণ করে তার ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। অর্থাৎ ৫ বছরে কেউ যদি ৩ সন্তানের মা হয়ে যান তবে তার ক্ষেত্রে স্তন ঝুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
স্তন ঝুলে যাচ্ছে এটা বোঝার উপায় খুব সহজ। আয়নায় নিজের চেহারা লক্ষ্য করুন। আপনার বুকের ব্রা খুলে ফেলুন এবং এবার ভালো করে তাকান। স্তন ঝুলে গেলে তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন।
তবে এ কাজটি করার জন্য আপনাকে ১ম বার আয়নায় দাড়ালেই হবে না। আপনাকে ৫-৭ দিন গ্যাপ রেখে কয়েকবার চেকআপ করতে হবে। তাহলে সহজেই বুঝবেন।
সঠিক মাপের ব্রা যদি হঠাৎ আপনার কাছে বেশি টাইট মনে হয় তবেও বুঝবেন যে, আপনার স্তন ঝুলে যাচ্ছে। আবার নিপল বা স্তনের বোঁটার যদি আকার পরিবর্তন হয় এবং স্থান পরিবর্তন হয় তবেও বুঝে নিবেন যে, আপনার স্তন দিনের দিন ঝুলে যাচ্ছে।
আপনার স্তনের দুই পাশের চামড়া যদি কুঁচকে যায় তবে অবশ্যই আপনার স্তন ঝুলে যাচ্ছে। স্তন ঝুলে যাওয়া বোঝার জন্য আপনাকে বেশি কাঠ-খড় পোহাতে হবে না। মনোযোগী হয়ে নিজের স্তন নিজেই কয়েকদিন লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন।
১. যাদের স্তন ঝুলে যাচ্ছে দিনের দিন তাদের জন্য খুব সহজ একটি ঘরোয়া বটিকা উপহার দিচ্ছি। শসার রস এবং ডিমের কুসুম দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করবেন। গোসলের আধা ঘন্টা আগে স্তনের চারপাশে সেটা মাখবেন। তারপর অন্তত ১৫ মিনিট কিংবা ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপর গোসল করবেন। এভাবে অন্তত ১ সপ্তাহ করবেন। আপনার স্তন ঝুলে যাওয়া বন্ধ হবে। আপনি নিজেই খুব সহজে বুঝতে পারবেন।
২. নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাবেন। বিশেষ করে দুধ, ডিম এবং ডাল দিনে অন্তত ১ বার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে যারা মোটা হওয়ার কারণে স্তন ঝুলে যাচ্ছে তাদের এ নিয়ম মানতে হবে না। হিতে বিপরীত হবে।
৩. বাড়ির পাশে যদি পুকুর বা নদী থাকে তবে নিয়মিত সাঁতার কাটুন। তাহলে আপনার স্তন ঝুলে যাওয়া থেকে রক্ষা হবে।
৪. নিয়মিত স্তনের চারপাশে ১ থেকে ২ মিনিট ম্যাসাজ করবেন। হতে পারে অলিভ অয়েল কিংবা অন্য কোন তরল দিয়ে। এ সম্পর্কিত ব্যায়ামের ভিডিও ইউটিউবে সার্চ করে দেখে আসতে পারেন।
৫. ১২ বছরের পর হতেই নিয়মিত স্তনের সাইজ অনুযায়ী ব্রা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে সন্তান হলেও স্তন ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
৬. বেশি করে সবুজ শাকসব্জি এবং ফলমুল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন ফলে ইলাস্টেন হরমোন তৈরীর উপাদান থাকে। ইলাস্টেন হরমোন যতোটা স্ট্রং থাকবে আপনার স্তন তত শক্ত থাকবে অর্থাৎ ঝুলে পড়বে না।
৭. প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করবেন। যারা কম পরিমাণে পানি পান করে তাদের কিন্তু স্তন আস্তে আস্তে ঢিলা হয়ে যায় অর্থাৎ নিচের দিকে ঝুলে পড়ে।
৮. আপনি কসমেটিক সার্জারীর মাধ্যমেও আপনার ঝুলে যাওয়া স্তন ঠিক করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে এটা অবশ্যই ব্যয়বহুল এবং দেশের সব জায়গায় এই সেবা পাওয়া যায় না।
৯. নিয়মিত বরফ ঘসলেও স্তনের আকার ঠিক হয়ে যায় এবং ঝুলে যাওয়া রোধ হয়।
১০. অবশ্যই ধুমপান এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন বন্ধ করতে হবে। নচেৎ কোন কাজেই আপনার স্তন ঝুলে যাওয়া রোধ করতে পারবেন না।
পরিশেষে বলতে চাই, মেয়েদের স্তন ঝুলে যাওয়া স্বাভাবিক যদি তা বয়সের সাথে মিল রেখে হয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বেই যদি এমন হয় তবে তা অসুখের কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে হয়েছে তা নিশ্চিত।
স্তন ঝুলে গেল মূলত কোনো সমস্যা নেই। হয়তো কারও স্বামী এটা পছন্দ করে না কিংবা মেয়েদের নিজেরও এটা পছন্দ নয়। তাছাড়া, সৌন্দর্য ব্যহত হয়।
তাই স্তন ঝুলে পড়ার লক্ষণ দেখা দিলে উপরের নিয়মগুলো মানার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, এটা আসলে কোনো রোগ নয়।