মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থা ভয়াবহ

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

মালয়েশিয়ায় কাজ না থাকায় বাংলাদেশি অনেক শ্রমিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তাদের দুর্দশা লাঘবে ব্যবস্থা নেবে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। রোববার গোম্বাকের দেওয়ান রায়ায় গ্রাম্য কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিলের (এমপিকেকে) তৃতীয় সিরিজ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিব কুমার।

চলমান নতুন কলিং ভিসায় বাংলাদেশ থেকে বহু কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন।

এর মধ্যে অনেকেই এখনো কোনো কাজ পায়নি। মাসের পর মাস কর্মহীন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে এসব বাংলাদেশি। আয় না থাকায় ধারদেনা করে চলছে হচ্ছে। এমন অভিযোগ সত্ত্বেও কর্মহীন বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ।

 

সম্প্রতি অভিবাসী অধিকার কর্মী ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি হল, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে (ওএইচসিএইচআর) একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

এরপরই বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রী শিবকুমার বলেন, আমরা আমাদের দেশে জোরপূর্বক শ্রমের ঘটনা এড়াতে চাই এবং এই দেশে বাংলাদেশসহ কোনো বিদেশি কর্মী যাতে ঋণের বন্ধনে আটকা না পড়ে বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার মন্ত্রণালয় সিরিয়াস। কারণ আমি আইনের বাইরে যা কিছু ঘটছে তা এড়াতে চাই।

মানবাধিকার হাইকমিশনকে দেওয়া ওই চিঠিতে সংকীর্ণ বাসস্থান, দুর্বল স্যানিটেশন, সীমিত খাবার এবং ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত নিয়োগ ব্যয়ের কারণে কিভাবে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তার বিশদ বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের পাশাপাশি খারাপ পরিবেশ, পাচার, অভিবাসী, দারিদ্র্য এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা পিয়া ওবেরয়ের কাছেও তিনি এসব নথিপত্র পাঠিয়েছেন।

তাতে অ্যান্ডি হল বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকারের মতে দেশটিতে উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়েও আড়াই লাখ বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। কেস স্টাডি এবং মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে, আমি ইউএনএইচআরসিকে অবিলম্বে মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি সমাধানে বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়েছি।

নথিপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি কিভাবে ঘটতে পারে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব মালয়েশিয়ান সরকারের। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ আবেদনগুলো যদি সঠিক হয়, তাহলে দেশটিতে অতিরিক্ত শ্রমিক থাকার কথা নয়। সেক্ষেত্রে এমন মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো না। শ্রমিকদের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তাদের সম্পূর্ণ মজুরি পাওয়া উচিত এবং শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত।

নথিভুক্ত একটি অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যান্ডি হল জানান, অভিযোগ করা হয়েছে ৪০০ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের থাকার ও খাবারের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান না থাকায় তারা নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

একটি ঘরে প্রায় ১৪ জন আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে ভিডিও পাওয়া গেছে। যেখানে তাদের প্রত্যেককে খাবার কেনার জন্য ২০০ রিঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে; যা দিয়ে মাত্র কয়েকদিন চলবে। আবার কোনো কোনো শ্রমিকের কাছে পাসপোর্ট অথবা কাজের ভিসা না থাকায় তারা কাজ করতে পারছে না। তারা অভিবাসন পুলিশের আতঙ্কে দিন পার করছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ