ভানুয়াতিতে ১০৭ বাংলাদেশীর দাসের জীবন

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Vanuatu

কোন বৈধ কাজ দেওয়ার পরিবর্তে ১০৭ বাংলাদেশিকে ভানুয়াতিতে দাসে পরিণত করা হয়েছে। সহিংস নির্যাতন এমনকি মৃত্যুর হুমকির মুখে তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে। সূত্র: আল-জাজিরা

মুস্তাফিজুর শাহিন দেশে ব্যবসা করতেন। বিদেশে কাজের আশায় তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তিনি কখনো কল্পনাও করেননি যে তাকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপে আটকে রাখা হবে এবং বিনা বেতনে কাজ করতে হবে। আর নানা দৈহিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। পালিয়ে আসার মতো সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার পরই কেবল এ নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় পান।

তাকে একজন কোটিপতি উদ্যোক্তার সঙ্গে সারাজীবন কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এ শিল্পপতির অনেকগুলো কাপড়ের দোকান আছে। কার্যত শেষ পর্যন্ত তাকে আধুনিক যুগের নব্য দাসের শিকারে পরিণত করা হয়। তার ওপর নানা শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং এমনকি খুন করারও হুমকি দেওয়া হয়।

শাহীন বলেন, তিনি ‘লাশের মতো বেঁচে আছেন’ বলে মনে করতে। তাকে বাংলাদেশের রাস্তা থেকে কিনে দাস হিসেবে ভানুয়াতির তীরে আনা হয়েছে। তাকে অতি সামান্য খাবার দেওয়া হতো। আর সারাক্ষণ ভয়ভীতির মধ্যে তাকে রাখা হতো। পলায়নের পর তিনি পুলিশকে বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারি না, আমার হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন ও প্রত্যাশাগুলো ধুলায় মিশে গেছে।’

২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছোট দেশ ভানুয়াতিতে আসা শতাধিক বাংলাদেশীর সব্রা জীবনেই শাহীনের অনুরূপ দুর্ভোগ নেমে এসেছে। একজন বাংলাদেশিই তাদের পাচারের মূল হোতা ছিলেন। তার নাম সেকাহ সুমন। সে নিজেকে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বাটিক চেইনের মালিক বলে দাবি করেন।

শাহীন ও তার সহকর্মীদের এ দাসের জীবন নির্যাতনের কথা ৫ বছর পর প্রথম  প্রকাশ পায়। কর্তৃপক্ষের আশংকা দেশের অসহায় কর্মহীন মানুষেরা উন্নত জীবনের আশায় ভানুয়াতির মতো নানা দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে তারা অবৈধ অভিবাসন চক্রের কবলে পড়ে দাসের জীবনের করুণ পরিণতির শিকার হন।

নির্যাতনের শিকার এই ১০৭ বাংলাদেশীর কথা কিভাবে অগোচরে রয়ে গেল এতদিন।  যদিও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে, বৈধ বিদেশি নিয়োগদাতার আড়ালে অপরাধীচক্রের নেটওয়ার্ক তৎপর রয়েছে। এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতেও এ ধরণের পাচারচক্র সক্রিয় হয়েছে।

বাংলাদেশ বৈশ্বিক অভিবাসন বড় উৎস হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। দালালরা শ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন। বিদেশে কাজের জন্য যাওয়া হাজার হাজার বাংলাদেশী প্রতিবছর পাচারকারীদের চক্রের কবলে পড়ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ