টরন্টো থেকে লিখেছেনঃ কাজী হালিমা আফরীন
কানাডায় যারা আসতে চান বা যারা থাকেন তাদের সবার জন্য তিনটা বিষয় খুবই জরুরি। যেগুলো না থাকলে কানাডায় টিকে থাকা অনেকটা কষ্টকর।
এক : Communication Skills
ধরেন, আপনি অনেক Smart আপনি অনেক শিক্ষিত বা বড় ডিগ্রি আছে। তাতে কিন্তু অতটা কাজ হবে না। আপনি যদি Work Place এ উপযুক্ত ও যথাযথভাবে ইংলিশে Communication করতে ব্যর্থ হন। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরেও আপনি মোটেও সামনে এগুতে পারবেন না। প্রফেশনাল জবের ক্ষেত্রে ধরেন আপনি একটা ভালো কাজ পেলেন। Communication ভালোভাবে না করতে পারার কারণে আপনার চাকরি চলেও যেতে পারে। আবার নতুন করে একটা জব ম্যানেজ করা ততটা সহজও না। Communication Skill এমন একটা Skill যা এসব দেশে হাতিয়ারের মতো কাজ করে। কলেজ বা ইউনিভার্সসিটি থেকে বড় বড় পাশ করার পরেও কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অতটা দক্ষতা দেখাতে পারেন না এই Communication এ দুর্বল হওয়ার কারণে। সুতরাং শুধু ডিগ্রি দিয়ে কিন্তু প্রফেশনাল জবগুলোতে টিকে থাকা যায় না।
যাদের ইংলিশ communication skill ভালো তারা মোটামুটি একটা ভালো পজেশনে থাকছেন বা অন্য একটা কাজ ম্যানেজ করতে সমস্যা হচ্ছে না। তাই communication skill টা এসব দেশে গুরুত্বপূর্ণ একটা skill বলতে পারেন।
একটা উদাহরণ দিই। কিছুদিন আগে আমার ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে গল্প করলেন, তিনি কিছু staff নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। তো একজন candidate ধরেন কোনো এক দেশের অরিজিন। নাম উল্লেখ করলাম না। অবশ্য বাঙালিও না। যাই হোক তিনি বললেন, ঐ candidate মোটেও communication skill এ ভালো না। আমি কি বলি সে বোঝে না, সে কি বলে আমি বুঝি না। তো এমন staff নিয়োগ করলে তো সে parentদের সঙ্গে communicate করতে পারবে না, আরো অনেক কিছু । তাই ম্যানেজার ঐ candidateকে আর নিয়োগ করেননি।
দুই: দক্ষতা
আপনার ডিগ্রি আছে। আপনার Communication skill ও মোটামুটি ভালো কিন্তু আপনি যে প্রফেশনে ডিগ্রি নিয়েছেন সেটাতে মোটেও দক্ষ না কর্মক্ষেত্রে। এমতাবস্থায় আপনি চাকরি পেলেও তা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য skills এর সঙ্গে দক্ষতা আপনার জন্য অনস্বীকার্য। আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেন তাহলে আপনার চিন্তা নেই। অবশ্যই communication skills থাকতে হবে যৌথভাবে।
তিন: Smartness:
আপনার বাড়তি একটা skill সেটা হতে পারে সুন্দর ড্রেসআপ, মানুষের সঙ্গে কথা বলার কৌশল, পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবেলার একটা যোগ্যতা এসব।
এসব থাকার সঙ্গে আপনার যদি কানাডিয়ান ডিগ্রি থাকে আপনি প্রফেশনাল জবে ইয়ারলি মোটামুটি ভালো ইনকাম করতে পারবেন। অনুমান করে বলা যায় $50k-100k বা তার বেশি।
আর যদি এসব গুণাবলী বেশিরভাগই আপনার না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি কোনো রকম একটা জব ম্যানেজ করে চলতে পারবেন, জব চলে গেলে ম্যানেজ করা সমস্যা হতে পারে। মোটামুটি জীবনধারণ অনেকটা কষ্টের মধ্যে পড়ে যাবে।
আমরা চাই আমাদের এসব যোগ্যতা থাকুক। কানাডায় আমরা বাঙালিরা সবাই যেন ভালো করি। অন্য জাতি যেন আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে এ staff কোনো কাজের না। এটা আমাদের জন্য ভীষণ লজ্জার।
আপনাদের একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। অনেকদিন আগে একজন বাঙালি এসেছেন আমার কর্মক্ষেত্রে supply staff হিসেবে কাজ করতে। তিনি এ field এ আছেন অনেকদিন। কাজ জানেন। কিন্তু উনি তেমনভাবে কাজের দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন না। বসে ঘুরে সময় পার করার মতো হবে হয়তো। তো আরেকজন ইটালিয়ান অরিজিন staff আমাকে ডেকে বলল, ‘ Look she is not working except just sitting.”
একজন বাঙালি হয়ে আরেকজন বাঙালির বদনাম শুনতে আমার লজ্জায় ঘাড় নেচে নেমে গেল। অথচ সেই বাঙালি staff এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে আমাকে বললেন, “আমার এই field এ কাজ করতে আসাটাই ভুল হয়েছে”। আমি বললাম তাহলে কোনো বিষয়ে পড়তেন? তিনি বললেন ” management ” আমি জানতে চাইলাম এ বিষয়ে পড়ে কোথায় চাকরি হবে মনে করেন? তিনি বললেন, ব্যাংকে। আমি উনিকে বুঝিয়ে অনেক কিছু বললাম। বললাম, দেখুন আমরা কিন্তু নিজের যোগ্যতার কথা, দক্ষতার কথা চিন্তা না করে বলি আমরা আরো বড় বড় জায়গায় থাকার যোগ্য। কিন্তু বাস্তবতাটা অন্য জিনিস। যেখানে কোনো আবেগ বা অবাস্তব ভাবনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে না। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আগে ভাবতে হবে। তারপর অন্যকিছু ভাবতে হবে।
আমাদের যেন যোগ্যতার চেয়ে আশা অনেক বড় না হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন আপনার যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা থাকতে হবে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করতে হবে যে আমরা অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। অন্যের যোগ্যতার সঙ্গে নিজের যোগ্যতার তুলনা না করে নিজের যোগ্যতাকে আরো ফলপ্রদ করতে হবে।
তাহলে বিশ্বের যেকোনো দেশে আপনি হবেন সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন একজন মানুষ।