প্রায় ২০ কোটি বছর আগের প্যালিওজোয়িক যুগে বিদ্যমান বৃহদাকার মহাদেশ প্যানজিওস-এর নামানুসারে একটি বিশাল আকৃতির জাহাজ তৈরি করতে যাচ্ছে সৌদি আরব।
ইতালীয় নকশাকার লাজারিনি-এর মতে, যেটি হবে একটি ভাসমান শহরের মতো। প্রমোদতরী ইয়ট বলি কিংবা জাহাজ; নতুন এই প্যানজিওস নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এটি হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম একটি ‘কৃত্রিম অত্যাশ্চর্য’।
চলতি বছর সৌদি আরবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাহাজটি তৈরি হবে বিশালাকার কচ্ছপের আকৃতিতে। নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হলে এটি বৃহৎ ভাসমান শহর হিসেবে নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাহাজ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি তৈরি করতে প্রায় ৮ বছরের মতো সময় লাগবে। যেখানে খরচ হবে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো।
বিখ্যাত ইতালীয় নকশাকার পিয়েরপাওলো লাজারিনি এই প্রকল্পটির নকশা করবেন। একটি ভাসমান শহরে সত্যিকারের বসবাসের স্থান তৈরির ধারণা থেকে এই প্রকল্পটি শুরু করা হবে। একটি প্রকৃত শহরের মতোই এর ভেতরটি বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত থাকবে। স্থলের শহরগুলোর মতোই এই বিশাল ভাসমান শহরে পার্ক, শপিং মল, ক্লাব, দোকানের মতো সব সুযোগ-সুবিধা এবং স্থান থাকবে। এমনকি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, হোটেল বা ছোট জাহাজ এবং প্লেনের জন্যে বন্দর পর্যন্ত থাকবে।
কাজ শেষ হওয়ার পর, সামুদ্রিক কচ্ছপ আকারের এই ইয়টটি হবে এখন পর্যন্ত নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান সুপারস্ট্রাকচার। আশা করা হচ্ছে, ভাসমান শহরটির দৈর্ঘ্য হবে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থ হবে ৬১০ মিটার চওড়া। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইয়ট হচ্ছে ‘আজাম’। আর প্যানজিওসের আকার হবে সেই ইয়টের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বের বৃহত্তম আকৃতির এই ইয়টের মোট ৬০ হাজার মানুষ ধারণের ক্ষমতা থাকবে। আর এই সংখ্যাটি এর বিপুল সংখ্যক ক্রু এবং কর্মীদের সংখ্যা বাদ দিয়ে। হোটেলগুলো ছাড়াও, এই ইয়টে থাকবে আরও উচ্চমানের কিছু আবাসনের বিকল্প। এতে ৬৯টি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ১৯টি বিলাসবহুল ভিলাও থাকবে। নকশা অনুসারে, কিছু কিছু অ্যাপার্টমেন্টে থাকবে জাহাজের কেন্দ্রীয় বন্দর এলাকার সুন্দর দৃশ্য এবং অন্যদের ক্ষেত্রে থাকবে সমুদ্রের দৃশ্য।
বসবাসের জায়গার নীচে থাকবে ৩০ হাজারটির মতো ‘সেল’। যেগুলো এই বিশাল কাঠামোটিকে ভাসিয়ে রাখবে। বেসমেন্টটি হবে স্টিলের তৈরি। ইয়টটিকে শক্তি প্রদানের জন্য ছাদে থাকবে বিপুল সংখ্যক সোলার প্যানেল। এ ছাড়া এটি ৫ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলাফেরা করতে পারবে।
প্যানজিওস তৈরির জন্যও লাগবে একটি বিশেষ জায়গা। যার জন্য ডিজাইনাররা সৌদি আরবকেই অবস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। নকশাকাররা এর জন্য জেদ্দা থেকে ৮১ মাইল উত্তরের কিং আবদুল্লাহ বন্দরকে আদর্শ অবস্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। সেখানে সমুদ্রে তাদের প্রায় ১ বর্গকিলোমিটার এলাকা সেচ দিতে হবে। তারপর সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে চারপাশে একটি বৃত্তাকার বাঁধ তৈরি করতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট বন্দরের অধীনে কাজ করা কিংবা একটি নির্দিষ্ট ভ্রমণসূচিতে চলার মধ্যে প্যানজিওস সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি চলারও নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি থাকবে না। নির্দিষ্ট যাত্রাপথের পরিবর্তে এটি অনেকটা গন্তব্যহীনভাবেই ভেসে বেড়াবে। যাত্রাটিকেই একটি গন্তব্যে পরিণত করাই হচ্ছে প্যানজিওস-এর মূল লক্ষ্য। যা অতি ধনী ব্যক্তিদের ছুটি কাটানোর জন্য একটি আদর্শ স্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।