ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৯৯০ সালে কুয়েত পাড়ি জমিয়েছিলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের তমিজ উদ্দিন। সুদীর্ঘ ৩৪ বছরের প্রবাস জীবন শেষে সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। তবে তার এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সময়, অর্থাৎ ২৫ বছর কেটেছে কুয়েতের কারাগারে, এক অপ্রত্যাশিত জটিলতার কারণে। সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নিজ ভিটায় ফিরে নতুন করে জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখেছিলেন তমিজ উদ্দিন। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি দেখতে পান, তার স্ত্রী-সন্তানরা তাকে ফেলে চলে গেছেন এবং পৈত্রিক ভিটেমাটি, জমি-জমা সবকিছুই তার আপন ছোট ভাই দখল করে নিয়েছেন।
তমিজ উদ্দিনের অভিযোগ, তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আপন ছোট ভাই আলাউদ্দিন তার পৈত্রিক সব সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করে নিয়েছেন। আর স্ত্রী-সন্তানরা তাকে ফেলে অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন। এখন জীবনের শেষ বেলায় এসে সব হারিয়ে মাথা গোঁজার জন্য সামান্য একটি ঠাঁই খুঁজছেন তিনি। তিনি জানেন না তার সম্পত্তি আদৌ ফিরে পাবেন কি না। এই পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সরেজমিনে কথা হয় তমিজ উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, ‘এক ভারতীয় নাগরিক হত্যার ঘটনায় কুয়েত পুলিশ আমাকে জেলে নিয়ে যায়। কিন্তু আমি খুনের সাথে জড়িত ছিলাম না। পরে তারা আমাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। আমি ভেঙে পড়িনি, আবার আপিল করেছি। পরে তারা আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এর বিরুদ্ধে আমি খালাসের কয়েক দফা আবেদন করি, অবশেষে আমাকে ২৫ বছর সাজা ভোগ করার পর কুয়েত সরকার মুক্তি দেয়।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম দেশে ফিরে অন্তত একটা ছায়া পাবো। স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করবো। কিন্তু এসে দেখি, নিজের ভিটেতেই আমি অনাহূত। স্ত্রী সন্তান আমার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার খবর শুনে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায়। আর এখানে আমার আপন ভাই আমার সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছে।’ তিনি দেশের সরকারের কাছে এর প্রতিকার দাবি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।
তমিজ উদ্দিনের আরেক ভাই জহির উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ হলেও আলাউদ্দিন কোনো প্রকার মীমাংসায় রাজি হননি। উল্টা, প্রবাসফেরত তমিজ উদ্দিনকে হুমকি-ধামকিও দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইতোপূর্বে তমিজ উদ্দিনকে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন জহির। পরে আদালত উক্ত মামলা থেকে তাকে খালাস করে দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বাহাদুর এই ঘটনাকে কেবল একটি পরিবারের গল্প নয়, বরং এমন হাজারো প্রবাসীর সাধারণ চিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন হাজারো প্রবাসী আছেন, যারা বছরের পর বছর কষ্ট করে দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠালেও দেশে ফিরে নিজেদের ভিটেমাটাই খুঁজে পান না।’
তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ান। নইলে একের পর এক তমিজ উদ্দিনরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ তিনি তমিজ উদ্দিনের সম্পত্তি উদ্ধার করে তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে তমিজ উদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিনের কাছে জানতে একাধিকবার কল দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স. ম. আজহারুল ইসলাম জানান, ‘এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরো জানান, তমিজ উদ্দিন যাতে তার পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত পান, তার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।