বর্তমানে সাউথ কোরিয়াতে ভালো বেতনের জবের কোনো অভাব নেই। তবে আপনাকে কাজ জানতে হবে। কারণ কাজ জানা ছাড়া এই দেশে গিয়ে আপনি খুব একটা সুবিধা তো করতেই পারবেন না! উল্টো হতাশায় দিন কাটাতে হবে। তবে যারা কাজ জানেন কিংবা কাজ শিখে সাউথ কোরিয়াতে যেতে চান তাদের উদ্দেশ্যেই আজকের এই লেখাটি। যেখানে থাকছে সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসা কিভাবে পাবেন, কত খরচ পড়বে, কি কি করতে হবে সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। সুতরাং সাথেই থাকুন।
শুরুতেই চলুন জেনে নিই কেনো এই সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসা সে-সম্পর্কে। এতে করে অন্যান্য দেশ ফেলে সাউথ কোরিয়া বাছাই করাটা আপনার জন্য অনেক ইজি হবে।
মূলত সাউথ কোরিয়ার চাকরির বাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সবসময় সেইম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইন্ড্রাস্ট্রিতে তারা নিয়মিত বাংলাদেশী কর্মী হায়ার করে থাকে। তাছাড়া দেশটিতে নিরাপদ কাজের পরিবেশ, ভালো বেতন, ভালো থাকা-খাওয়া এবং হাই লাইফস্টাইল উপভোগ করার সুযোগ তো থাকছেই।
সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসার ধরণ কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। অর্থ্যাৎ এখানে আপনি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাবেন। যা নির্ভর করবে সেই কাজের ধরণের উপর। যেমন:
এই ভিসার আরেক নাম হলো নন-প্রফেশনাল এমপ্লয়মেন্ট ভিসা। যারা কাজ পারেন না বা মোটামুটি পারেন তারা এই ভিসায় সাউথ কোরিয়ায় গিয়ে মোটামুটি বেতনে ভালো কাজ করতে পারেন। নির্মাণ, কৃষি ও মৎস্য সেক্টরের বিভিন্ন জব আপনি এই ভিসার আন্ডারে পেতে পারেন।
E-7 সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসা কিংবা স্পেশাল অ্যাক্টিভিটিস ভিসা হলো তাদের জন্য যারা কাজ জানেন। ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য স্পেশাল সেক্টর যাদের টার্গেট তাদের উচিত এই E-7 সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসা পাওয়ার পেছনে সময় দেওয়া এবং নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা।
এই ভিসাকে আবার ওয়ার্কিং ভিজিট ভিসাও বলা হয়। যারা কান্ট্রি ম্যানেজার হিসাবে বিভাব কোম্পানিতে আছেন কিংবা সরকারিভাবে যাদের বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে সাউথ কোরিয়াতে যেতে হয় তাদের এই H-2 সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসা অবশ্যই থাকতে হবে।
উপরোক্ত ভিসা ছাড়া বাদবাকি সব কাজের ভিসা এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। ইন্টার্নশিপ বা বিভিন্ন সিজনাল জবের জন্য আপনাকে এই ধরণের স্পেশাল ভিসার আবেদন করতে হবে।
যারা ইতিমধ্যেই সাউথ কোরিয়ায় কাজ করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাদের এই পর্যায়ে সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসার খরচ কত পড়তে পারে সে সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে নিচের তথ্যগুলিতে ফোকাস করতে পারেন:
ভিসা আবেদনের ফি: সাধারণত ভিসার ধরন অনুযায়ী এই ফি পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে মেক্সিমাম ভিসা ফি-ই ৫,০০০–১০,০০০ টাকার মধ্যে থাকে।
ইপিএস নিবন্ধন ফি: যারা E-9 ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাদের অব্যশই ইপিএস বা এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম নিবন্ধন ফি দিতে হবে। যা প্রায় ১২,০০০–১৫,০০০ টাকার মতো হতে পারে।
মেডিকেল টেস্ট ফি: মেডিকেল টেস্ট ফি-র খরচ আসতে পারে প্রায় ২,০০০–৪,০০০ টাকার মতো।
ভাষা টেস্ট ফি: যারা E-9 ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাদের TOPIK বা টেস্ট অফ প্রফিসিয়েন্সি ইন কোরিয়ান পরীক্ষায় পাশ করা লাগবে। এই পরীক্ষার ফি হিসেবে আবার খরচ আসতে পারে প্রায় ২,৫০০ টাকা।
ফ্লাইটের খরচ: দক্ষিণ কোরিয়ার ফ্লাইটের জন্য খরচে পড়তে পারে প্রায় ৪০,০০০–৭০,০০০ টাকার মতো।
মোট আনুমানিক খরচ: সব মিলিয়ে আপনাকে প্রায় ৬০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে সাউথ কোরিয়া যেতে।
যারা সাউথ কোরিয়ার কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে চান তারা নিচের স্টেপগুলি ফলো করতে পারেন:
১. E-9 বা নন-প্রফেশনাল এমপ্লয়মেন্ট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে শুরুতে ইপিএসে রেজিষ্ট্রেশন করুন৷ পাশাপাশি TOPIK ভাষা পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে কোরিয়ান ভাষা জানাটা জরুরি।
২. এরপর আপনাকে মেডিকেল টেস্ট দিতে হবে। নিকটস্থ কোনো মেডিকেলে গিয়ে নিজের চেকআপ করিয়ে সেই টেস্ট শো করালেই হবে।
৩. এরপর আপনাকে ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। দরকারি ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট এবং TOPIK উত্তীর্ণের প্রুফ সহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
যারা দ্রুত সাউথ কোরিয়ায় কাজ পেতে চান তারা অবশ্যই আগে থেকে ডকুমেন্টস রেডি করে রাখবেন। কারণ বাংলাদেশে কোনো ডকুমেন্টসে ভুল ধরা পড়লে পরে তা ঠিক করতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি মনে রাখবেন কোরিয়ান ভাষার উপর ভালো দখল থাকলে কাজ পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়। যদি নিয়মিত Job Korea, Saramin এবং WorknPlay ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখতে পারেন আশা করি আপনার জব দ্রুত নিশ্চিত হয়ে যাবে।